ঢাকা ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৪:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ মে ২০১৮
  • ৪৯৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী শুক্রবার থেকে পরবর্তী চারদিন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, যার ফলে হাওরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যার পাশাপাশি সম্ভাব্য পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারি হিসেব বলছে, গত রোববার ও সোমবারের কালবৈশাখীর সময় শুধু বজ্রপাতে সারা দেশে মারা গেছে ২৯ জন, আর এ নিয়ে গত দুই মাসে এ বছরে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। শুধু মানুষের মৃত্যুই নয় আবহাওয়া অফিস বলছে, কালবৈশাখীতে ঝড়ে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর আগামী এক সপ্তাহজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত থেকে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা। এমন পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সরকারি ছুটির দিনেও জরুরি বৈঠকে বসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা।

বৈঠকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৪, ৫, ৬, ৭ মে ভারি বর্ষণ হতে পারে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং আমাদের হাওরাঞ্চলে। এ থেকে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে ভারি বর্ষণের কারণে হয়তোবা সেখানে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।’

বৈঠকে জানানো হয়, পাহাড় ধসের আশঙ্কায় এরই মধ্যে কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ দিনে আরো ২৫ হাজার পরিবার সরিয়ে নেওয়া হবে। আর হাওরাঞ্চলে এরইমধ্যে ৮৮ ভাগ ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক। সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে সহায়তার পর্যাপ্ত অর্থ, চাল, শুকনা খাবার, বস্ত্র ও টিনসহ নির্মাণ সামগ্রী মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামালসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি জানান, বজ্রপাত মোকাবিলায় সারা দেশে ৩১ লাখ ৬৪ হাজার তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোবাইল টাওয়ারে আর্থিং ব্যবস্থা যুক্ত করে বজ্র নিরোধক দণ্ড হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মন্ত্রী বলেন, ২৯ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত হচ্ছে। গত ২৯ ও ৩০ এপ্রিল দুদিনে ২৯ জন লোক বজ্রপাতে মারা গেছেন। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে মোট ৭০ জন লোক বজ্রপাতে মারা গেছেন। গত বছর মারা গেছেন প্রায় ৩০০ জন। বজ্রপাতে মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথা তুলে ধরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন,  গত বছর পাহাড় ধসে পার্বত্য এলাকায় ১৬৬ জন লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর পাহাড় ধস মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এপ্রিল মাসের ২২-২৬ তারিখে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পার্বত্য ৩ জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার—এই পাঁচ জেলার ৩৫টি উপজেলায় শোভাযাত্রা, কর্মশালা ও জেলা-উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঢালে বসবাসকারীদের দ্রুত সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত দুদিনে শুধু রাঙামাটিতেই ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই এখনই জেলা প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, কুতুপালংয়ের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শিবির থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা অধিবাসীকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরা ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছিল।

মায়া বলেন, সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য পাঁচ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, ‘গতবছর ১০ লাখ তালবীজ রোপণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ ৬৪ হাজার তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে। আমরা হাওর এলাকার লোকদের বজ্রপাত ও বন্যা থেকে রক্ষা করতে প্রচুর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছি। মোবাইল টাওয়ারগুলোতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা সংযুক্ত করে বজ্র নিরোধক দণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না সে চেষ্টা করা হচ্ছে। বজ্রপাত মোকাবিলায় দালান কোঠায় বজ্র নিরোধক দণ্ড লাগানো বাধ্যতামূলক করতে গণপুর্ত মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।’

এ ছাড়া বজ্রপাত শনাক্ত করার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের আটটি জেলায় শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন করেছে। আরো যন্ত্রপাতি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্রঃ এন টিভি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা

আপডেট টাইম : ১০:৩৪:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী শুক্রবার থেকে পরবর্তী চারদিন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, যার ফলে হাওরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যার পাশাপাশি সম্ভাব্য পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারি হিসেব বলছে, গত রোববার ও সোমবারের কালবৈশাখীর সময় শুধু বজ্রপাতে সারা দেশে মারা গেছে ২৯ জন, আর এ নিয়ে গত দুই মাসে এ বছরে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। শুধু মানুষের মৃত্যুই নয় আবহাওয়া অফিস বলছে, কালবৈশাখীতে ঝড়ে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর আগামী এক সপ্তাহজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত থেকে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা। এমন পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সরকারি ছুটির দিনেও জরুরি বৈঠকে বসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা।

বৈঠকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৪, ৫, ৬, ৭ মে ভারি বর্ষণ হতে পারে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং আমাদের হাওরাঞ্চলে। এ থেকে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে ভারি বর্ষণের কারণে হয়তোবা সেখানে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।’

বৈঠকে জানানো হয়, পাহাড় ধসের আশঙ্কায় এরই মধ্যে কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ দিনে আরো ২৫ হাজার পরিবার সরিয়ে নেওয়া হবে। আর হাওরাঞ্চলে এরইমধ্যে ৮৮ ভাগ ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক। সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে সহায়তার পর্যাপ্ত অর্থ, চাল, শুকনা খাবার, বস্ত্র ও টিনসহ নির্মাণ সামগ্রী মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামালসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি জানান, বজ্রপাত মোকাবিলায় সারা দেশে ৩১ লাখ ৬৪ হাজার তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোবাইল টাওয়ারে আর্থিং ব্যবস্থা যুক্ত করে বজ্র নিরোধক দণ্ড হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মন্ত্রী বলেন, ২৯ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত হচ্ছে। গত ২৯ ও ৩০ এপ্রিল দুদিনে ২৯ জন লোক বজ্রপাতে মারা গেছেন। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে মোট ৭০ জন লোক বজ্রপাতে মারা গেছেন। গত বছর মারা গেছেন প্রায় ৩০০ জন। বজ্রপাতে মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথা তুলে ধরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন,  গত বছর পাহাড় ধসে পার্বত্য এলাকায় ১৬৬ জন লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর পাহাড় ধস মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এপ্রিল মাসের ২২-২৬ তারিখে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পার্বত্য ৩ জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার—এই পাঁচ জেলার ৩৫টি উপজেলায় শোভাযাত্রা, কর্মশালা ও জেলা-উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঢালে বসবাসকারীদের দ্রুত সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত দুদিনে শুধু রাঙামাটিতেই ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই এখনই জেলা প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, কুতুপালংয়ের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শিবির থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা অধিবাসীকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরা ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছিল।

মায়া বলেন, সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য পাঁচ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, ‘গতবছর ১০ লাখ তালবীজ রোপণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ ৬৪ হাজার তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে। আমরা হাওর এলাকার লোকদের বজ্রপাত ও বন্যা থেকে রক্ষা করতে প্রচুর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছি। মোবাইল টাওয়ারগুলোতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা সংযুক্ত করে বজ্র নিরোধক দণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না সে চেষ্টা করা হচ্ছে। বজ্রপাত মোকাবিলায় দালান কোঠায় বজ্র নিরোধক দণ্ড লাগানো বাধ্যতামূলক করতে গণপুর্ত মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।’

এ ছাড়া বজ্রপাত শনাক্ত করার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের আটটি জেলায় শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন করেছে। আরো যন্ত্রপাতি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্রঃ এন টিভি