ঢাকা ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের তফসিল অক্টোবরে সংসদের ২৫ আসনের সীমানায় পরিবর্তন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০১:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মে ২০১৮
  • ২৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ৩০০ আসনের ২৫টির সীমানায় পরিবর্তন করেছে ইসি। এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনের কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। গত এপ্রিল থেকে শুরু করে জুনের মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা শেষ করতে চায় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার কমিশন সভায় সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।

পরে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে কত তারিখে হবে এবং কবে ভোটগ্রহণ হবে, সেটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি জানান, ৩০০ আসনের সীমানা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৭৫টিতে দশম সংসদের সীমানা বহাল থাকছে। বাকি ২৫ আসনের পরিবর্তিত সীমানায় ভোট হবে।

ব্রিফিংয়ে কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর সংসদ নির্বাচনের একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর মধ্যে একটি অনুষঙ্গ ছিল সংসদীয় আসনের আসন বিন্যাস। আসন বিন্যাসের আগে ২১, ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল সব কমিশনের উপস্থিত থেকে দাবি-আপত্তি নিয়ে শুনানি শেষে বিন্যাস আসনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

যে ২৫টি আসনে পরিবর্তন এসেছে : নীলফামারীতে দুটি আসন পরিবর্তন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ জলঢাকা উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-৩ আর সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ নীলফামারী-৪ আসন। রংপুরে দুটি আসনে পরিবর্তন এসেছে। রংপুর-১ (গংগাচরা) আসনে যুক্ত হয়েছে সিটির ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড। রংপুর সদর এবং সিটির ১ থেকে ৮ ওয়ার্ড বাদ দিয়ে রংপুর-৩ আসন করা হয়েছে। তবে ইসির চূড়ান্ত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না হলেও রংপুর-৪ আসনেও পরিবর্তন এসেছে। পীরগাছা ও কাউনিয়া এটি করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামে পরিবর্তন হয়েছে দুটির। কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি শুধু উলিপুর উপজেলা নিয়ে করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম-৪ করা হয়েছে রৌমারী, রাজিবপুর এবং চিলমারী নিয়ে। সিরাজগঞ্জ-১ ও ২ আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি গঠন করা হয়েছে কাজীপুর এবং সিরাজগঞ্জ সদরের মেছড়া, রতনকান্দি, বাগবাটি, ছোনগাছা এবং বহুলী ইউপি নিয়ে। আর সিরাজগঞ্জ-২ আসনটি গঠন করা হয়েছে কামারখন্দ উপজেলা এবং সদরের পাঁচটি ইউপি বাদে।

খুলনার দুটির মধ্যে খুলনা-৩ আসনটি সিটির ১ থেকে ১৫টি ওয়ার্ড এবং দিঘলিয়ার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউপি নিয়ে করা হয়েছে। খুলনা-৪ রুপসা এবং তেরখাদা নিয়ে করা হয়েছে। জামালপুরের দুটি আসনে পরিবর্তন করা হয়েছে। জামালপুর-৪ আসন করা হয়েছে শুধু সরিষাবাড়ি নিয়ে। আর জামালাপুর-৫ করা হয়েছে শুধু সদর নিয়ে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ করা হয়েছে সিটির ১ থেকে ১০টি ওয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ সদরের আলীরটেক এবং গোগনগর ব্যতীত বাকি ইউপি নিয়ে। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ সদরের আলীরটেক, গোগনগর ইউপি, বন্দর উপজেলা এবং সিটির ১১ থেকে ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে করা হয়েছে। সিলেটে দুটি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসনটি করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ আসন করা হয়েছে।
শুধু কুলাউড়া নিয়ে মৌলভীবাজার-২ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার-৪ আসনটি শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। নবীনগর নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন গঠন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনটি বাঞ্ছারামপুর নিয়ে করা হয়েছে।

কুমিল্লা-৬ আসনটি করা হয়েছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, কুমিল্লা সিটি এবং কুমিল্লা সেনানিবাস নিয়ে। কুমিল্লা-১০ আসনটির সঙ্গে লালমাই যুক্ত করা হয়েছে। কুমিল্লা-৯ আসনটি লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রাখা হলেও পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে। সুবর্ণচর এবং নোয়াখালী সদর নিয়ে নোয়াখালী-৪ করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ এবং করিবহাট নিয়ে করা হয়েছে নোয়াখালী-৫।

ইসির তথ্যমতে, ২০০১ সালেও ১৯৯৫-এর সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে পরিবর্তন করা হয়। ১/১১-পরবর্তী ড. শামসুল হুদার কমিশন সারা দেশের পার্বত্য তিন জেলা বাদে ২৯৭ আসনেই পরিবর্তন করে। এর মধ্যে ১৩৩টিতে পরিবর্তন আনা হয় বড় পরিসরে। এতে ঢাকায় আসন বেড়ে হয় ১৮টি। আর কয়েকটি জেলায় কমে যায় আসন সংখ্যা। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল ও ফরিদপুরে একটি করে আসন কমে। আবার ২০০৮ সালের সীমানা বহাল রেখে ২০১৩ সালে সামান্য পরিবর্তন এনে দশম সংসদ নির্বাচন দেয় ইসি।

এদিকে আসন বিন্যাসের তথ্য বিভ্রান্তির বিষয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালে যে সীমানা বিন্যাস করা হয়েছিল সেখান থেকে ৪০টিতে পরিবর্তন এনে অবশিষ্ট আসন অক্ষত রাখলেও আমরা ৩০০ আসনের গেজেট প্রকাশ করেছিলাম। যাতে সংক্ষুব্ধ কিংবা সংক্ষুব্ধ নন এমন ব্যক্তিরা আসনের পরিবর্তন চেয়ে দাবি-আপত্তি, মতামত ও সুপারিশ জানাতে পারেন। সেই আলোকে দাবি-আপত্তি দেওয়া ব্যক্তিদের কিছু আপত্তি গ্রহণ করেছি, কিছু বাদ দিয়েছি।’

২৫টি আসন পরিবর্তনে কোন মানদ- বিবেচনায় নিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতিটি আসনের ওপর ভিত্তি করে, প্রতিটি আসনকে প্রশাসনিক ইউনিট ধরে এবং তাদের (আপত্তি) ওই আসনের ওপরে যে যুক্তি ও যৌক্তিকতা ছিল সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এই আসন বিন্যাস করা হয়েছে। ফলে আপনি যদি সামগ্রিকভাবে জিজ্ঞাসা করেন বিন্যাস কেন করা হয়েছে তাহলে জবাব দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট আসন ওই আসনে কি সমস্যা রয়েছে, সেগুলোকে বিবেচনা করেছে কমিশন।

আওয়ামী লীগের চাপে আসন পরিবর্তন কমিয়ে আনা হয়েছে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘আমরা শুনানি নিয়েছি আর আওয়ামী লীগের চাপে যদি বলেন, ওনারা আমাদের সংলাপ এবং শুনানিতে যেটা বলেছেন, ২০১৩ সালে বিন্যাস হওয়া আসন বহাল রাখার জন্য। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি, আসন বিন্যাস হয়েছে ২০১৩ সালের আলোকে নয়, ২০০৮ সালের আগে যে খন্ডিত উপজেলা ছিল; সেগুলো অখন্ড রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলাম। আমরা একটা আসনে পরিবর্তন আনার সঙ্গে সঙ্গে আরো ৫-৭টি আসনে পরিবর্তন হয়ে যায়। একটা আসনে অর্থাৎ কেরানীগঞ্জ আসনে শুনানি নিয়েছি; পক্ষে-বিপক্ষে কিছু মতামত পেয়েছি। কিন্তু বাকি ৫ আসনের জনপ্রতিনিধিরা এই পরিবর্তনকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনি।’ তিনি বলেন, ‘সীমানা বিন্যাসটা জনগণের জন্য, জনপ্রতিনিধিদের জন্য এবং সংসদীয় এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জন্য।

তাই ওনাদের বক্তব্যকে বিবেচনা করা ছাড়া কোনো অবস্থায় সীমানা বিন্যাস করা আদৌ যৌক্তিক হবে না এবং যৌক্তিক নয়। আমরা শুনানিতে যেই বক্তব্য ওনাদের নিয়েছি, সেই বক্তব্যগুলোকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সীমানা বিন্যাসের শুনানিতে সাংবাদিকদের অংশ নিতে দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, শুনানিতে যারা আবেদন করেছিল তাদেরও বসার জায়গা দিতে পারেনি। তাই সাংবাদিকদের অ্যালাও করা হয়নি।

আর সাংবাদিকদের ঢুকতে দিলে জায়গা দেওয়া যেত না। অনেক মন্ত্রী, সাবেক আমলা, সচিব এলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি; শুধু আবেদনকারীর বাইরে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রধান উপকরণ ব্যালট পেপার। এজন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজের প্রয়োজন হয়, তা ভোটের কয়েক মাস আগে সংগ্রাহ না করলে সংকটও দেখা দিতে পারে। তাই জুনের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করবে ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মধ্যে। এ নির্বাচনের জন্য প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে; যা জুনের মধ্যে সংগ্রহ করতে চায় ইসি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনের তফসিল অক্টোবরে সংসদের ২৫ আসনের সীমানায় পরিবর্তন

আপডেট টাইম : ০৪:০১:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ৩০০ আসনের ২৫টির সীমানায় পরিবর্তন করেছে ইসি। এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনের কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। গত এপ্রিল থেকে শুরু করে জুনের মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা শেষ করতে চায় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার কমিশন সভায় সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।

পরে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে কত তারিখে হবে এবং কবে ভোটগ্রহণ হবে, সেটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি জানান, ৩০০ আসনের সীমানা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৭৫টিতে দশম সংসদের সীমানা বহাল থাকছে। বাকি ২৫ আসনের পরিবর্তিত সীমানায় ভোট হবে।

ব্রিফিংয়ে কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর সংসদ নির্বাচনের একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর মধ্যে একটি অনুষঙ্গ ছিল সংসদীয় আসনের আসন বিন্যাস। আসন বিন্যাসের আগে ২১, ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল সব কমিশনের উপস্থিত থেকে দাবি-আপত্তি নিয়ে শুনানি শেষে বিন্যাস আসনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

যে ২৫টি আসনে পরিবর্তন এসেছে : নীলফামারীতে দুটি আসন পরিবর্তন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ জলঢাকা উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-৩ আর সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ নীলফামারী-৪ আসন। রংপুরে দুটি আসনে পরিবর্তন এসেছে। রংপুর-১ (গংগাচরা) আসনে যুক্ত হয়েছে সিটির ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড। রংপুর সদর এবং সিটির ১ থেকে ৮ ওয়ার্ড বাদ দিয়ে রংপুর-৩ আসন করা হয়েছে। তবে ইসির চূড়ান্ত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না হলেও রংপুর-৪ আসনেও পরিবর্তন এসেছে। পীরগাছা ও কাউনিয়া এটি করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামে পরিবর্তন হয়েছে দুটির। কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি শুধু উলিপুর উপজেলা নিয়ে করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম-৪ করা হয়েছে রৌমারী, রাজিবপুর এবং চিলমারী নিয়ে। সিরাজগঞ্জ-১ ও ২ আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি গঠন করা হয়েছে কাজীপুর এবং সিরাজগঞ্জ সদরের মেছড়া, রতনকান্দি, বাগবাটি, ছোনগাছা এবং বহুলী ইউপি নিয়ে। আর সিরাজগঞ্জ-২ আসনটি গঠন করা হয়েছে কামারখন্দ উপজেলা এবং সদরের পাঁচটি ইউপি বাদে।

খুলনার দুটির মধ্যে খুলনা-৩ আসনটি সিটির ১ থেকে ১৫টি ওয়ার্ড এবং দিঘলিয়ার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউপি নিয়ে করা হয়েছে। খুলনা-৪ রুপসা এবং তেরখাদা নিয়ে করা হয়েছে। জামালপুরের দুটি আসনে পরিবর্তন করা হয়েছে। জামালপুর-৪ আসন করা হয়েছে শুধু সরিষাবাড়ি নিয়ে। আর জামালাপুর-৫ করা হয়েছে শুধু সদর নিয়ে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ করা হয়েছে সিটির ১ থেকে ১০টি ওয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ সদরের আলীরটেক এবং গোগনগর ব্যতীত বাকি ইউপি নিয়ে। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ সদরের আলীরটেক, গোগনগর ইউপি, বন্দর উপজেলা এবং সিটির ১১ থেকে ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে করা হয়েছে। সিলেটে দুটি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসনটি করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ আসন করা হয়েছে।
শুধু কুলাউড়া নিয়ে মৌলভীবাজার-২ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার-৪ আসনটি শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। নবীনগর নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন গঠন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনটি বাঞ্ছারামপুর নিয়ে করা হয়েছে।

কুমিল্লা-৬ আসনটি করা হয়েছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, কুমিল্লা সিটি এবং কুমিল্লা সেনানিবাস নিয়ে। কুমিল্লা-১০ আসনটির সঙ্গে লালমাই যুক্ত করা হয়েছে। কুমিল্লা-৯ আসনটি লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রাখা হলেও পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে। সুবর্ণচর এবং নোয়াখালী সদর নিয়ে নোয়াখালী-৪ করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ এবং করিবহাট নিয়ে করা হয়েছে নোয়াখালী-৫।

ইসির তথ্যমতে, ২০০১ সালেও ১৯৯৫-এর সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে পরিবর্তন করা হয়। ১/১১-পরবর্তী ড. শামসুল হুদার কমিশন সারা দেশের পার্বত্য তিন জেলা বাদে ২৯৭ আসনেই পরিবর্তন করে। এর মধ্যে ১৩৩টিতে পরিবর্তন আনা হয় বড় পরিসরে। এতে ঢাকায় আসন বেড়ে হয় ১৮টি। আর কয়েকটি জেলায় কমে যায় আসন সংখ্যা। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল ও ফরিদপুরে একটি করে আসন কমে। আবার ২০০৮ সালের সীমানা বহাল রেখে ২০১৩ সালে সামান্য পরিবর্তন এনে দশম সংসদ নির্বাচন দেয় ইসি।

এদিকে আসন বিন্যাসের তথ্য বিভ্রান্তির বিষয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালে যে সীমানা বিন্যাস করা হয়েছিল সেখান থেকে ৪০টিতে পরিবর্তন এনে অবশিষ্ট আসন অক্ষত রাখলেও আমরা ৩০০ আসনের গেজেট প্রকাশ করেছিলাম। যাতে সংক্ষুব্ধ কিংবা সংক্ষুব্ধ নন এমন ব্যক্তিরা আসনের পরিবর্তন চেয়ে দাবি-আপত্তি, মতামত ও সুপারিশ জানাতে পারেন। সেই আলোকে দাবি-আপত্তি দেওয়া ব্যক্তিদের কিছু আপত্তি গ্রহণ করেছি, কিছু বাদ দিয়েছি।’

২৫টি আসন পরিবর্তনে কোন মানদ- বিবেচনায় নিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতিটি আসনের ওপর ভিত্তি করে, প্রতিটি আসনকে প্রশাসনিক ইউনিট ধরে এবং তাদের (আপত্তি) ওই আসনের ওপরে যে যুক্তি ও যৌক্তিকতা ছিল সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এই আসন বিন্যাস করা হয়েছে। ফলে আপনি যদি সামগ্রিকভাবে জিজ্ঞাসা করেন বিন্যাস কেন করা হয়েছে তাহলে জবাব দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট আসন ওই আসনে কি সমস্যা রয়েছে, সেগুলোকে বিবেচনা করেছে কমিশন।

আওয়ামী লীগের চাপে আসন পরিবর্তন কমিয়ে আনা হয়েছে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘আমরা শুনানি নিয়েছি আর আওয়ামী লীগের চাপে যদি বলেন, ওনারা আমাদের সংলাপ এবং শুনানিতে যেটা বলেছেন, ২০১৩ সালে বিন্যাস হওয়া আসন বহাল রাখার জন্য। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি, আসন বিন্যাস হয়েছে ২০১৩ সালের আলোকে নয়, ২০০৮ সালের আগে যে খন্ডিত উপজেলা ছিল; সেগুলো অখন্ড রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলাম। আমরা একটা আসনে পরিবর্তন আনার সঙ্গে সঙ্গে আরো ৫-৭টি আসনে পরিবর্তন হয়ে যায়। একটা আসনে অর্থাৎ কেরানীগঞ্জ আসনে শুনানি নিয়েছি; পক্ষে-বিপক্ষে কিছু মতামত পেয়েছি। কিন্তু বাকি ৫ আসনের জনপ্রতিনিধিরা এই পরিবর্তনকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনি।’ তিনি বলেন, ‘সীমানা বিন্যাসটা জনগণের জন্য, জনপ্রতিনিধিদের জন্য এবং সংসদীয় এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জন্য।

তাই ওনাদের বক্তব্যকে বিবেচনা করা ছাড়া কোনো অবস্থায় সীমানা বিন্যাস করা আদৌ যৌক্তিক হবে না এবং যৌক্তিক নয়। আমরা শুনানিতে যেই বক্তব্য ওনাদের নিয়েছি, সেই বক্তব্যগুলোকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সীমানা বিন্যাসের শুনানিতে সাংবাদিকদের অংশ নিতে দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, শুনানিতে যারা আবেদন করেছিল তাদেরও বসার জায়গা দিতে পারেনি। তাই সাংবাদিকদের অ্যালাও করা হয়নি।

আর সাংবাদিকদের ঢুকতে দিলে জায়গা দেওয়া যেত না। অনেক মন্ত্রী, সাবেক আমলা, সচিব এলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি; শুধু আবেদনকারীর বাইরে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রধান উপকরণ ব্যালট পেপার। এজন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজের প্রয়োজন হয়, তা ভোটের কয়েক মাস আগে সংগ্রাহ না করলে সংকটও দেখা দিতে পারে। তাই জুনের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করবে ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মধ্যে। এ নির্বাচনের জন্য প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে; যা জুনের মধ্যে সংগ্রহ করতে চায় ইসি।