হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্মাণ সামগ্রীর হঠাৎ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বন্ধ হয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের প্রায় ২০০ কোটির টাকার উন্নয়নমূলক কাজ। ফলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবামূলক গ্রামীণ অবকাঠামো যথা সময়ে নির্মিত হওয়া নিয়ে স্থানীয় লোকজন শঙ্কায় পড়েছে। আর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্টদের দাবি, অবিলম্বে নির্মাণ সামগ্রীর বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে দেশের নির্মাণ সামগ্রী বিশেষ করে রড-সিমেন্টের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এতে ভৈরবের উন্নয়নমূলক বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সেবাপ্রত্যাশী স্থানীয় জনগণ পড়েছে নাজুক পরিস্থিতিতে। এলাকার রাস্তাঘাটের নির্মাণকাজ আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে ওই সব উন্নয়নকাজ শেষ না হলে এলাকাবাসী আরো বেশি দুর্ভোগের শিকার হবে বলে আশঙ্কা তাদের। উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের চৌমুরি বাজার থেকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রতিদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান রউফ মিয়া। তিনি জানান, রাস্তার দুইপাশ কেটে রেখে ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ রেখেছে। এতে এই রাস্তায় প্রতিদিন তাঁদের চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা তৈরি হয়েছে। দুর্ঘটনায় পড়ে যাত্রীরা আহতসহ অটোরিকশার ক্ষতি হচ্ছে। তাঁরা এই অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চেয়েছেন।
একই অভিযোগ ও বক্তব্য এই পথে চলাচলকারী চালক, সোহাগ মিয়া, নাছির উদ্দিন, যাত্রী আবুল কালাম, রেহেনা সুলতানা ও মুর্শেদ আনোয়ারের।
এদিকে স্থানীয় ঠিকাদার মো. ইকবাল হোসেন, তারেক আহমেদ ভূঁইয়া, ও আর জুয়েল এবং শাহরিয়ার আলম জানান, তাঁরা কাজ নেওয়ার সময় রড-সিমেন্টসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ সামগ্রীর যে মূল্য ছিল, বর্তমানে সেগুলোর মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রড-সিমেন্টের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে গেলে মুনাফা তো অনেক দূরাশা, প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে তাঁদের। এ অবস্থায় তাঁরা বাধ্য হয়েছেন কাজ বন্ধ করে দিতে।
এ পরিস্থিতিতে সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ বা কাজের চুক্তিমূল্য বৃদ্ধি না করে, তবে তাঁরা তাঁদের কাজ করতে পারবেন না। অন্যদিকে হঠাৎ করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এখানকার শত শত নির্মাণ শ্রমিক। তাঁরা কাজ ও রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন আর্থিক অনটনে।
নির্মাণ শ্রমিক সর্দার ফজলু মিয়া জানান, তিনি প্রায় ২৫ জন শ্রমিক নিয়ে চুক্তিতে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। বর্তমানে হঠাৎ করে ঠিকাদারি কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি পড়েছেন বিপাকে। তিনিও দ্রুত এই পরিস্থিতির অবসান চান।
ভৈরবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পৌরসভা, ফ্যাসিলিটিজ বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভাগের প্রায় ২০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। সেই কাজগুলোর বেশির ভাগই বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু কাজ চলছে অনেক ধীর গতিতে।
ভৈরবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) অধীনেই আছে ৯০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। এলজিআরডির ভৈরব উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু ইউসুফ জানান, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁর অধিদপ্তরের কাজগুলো স্থবির হয়ে আছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন ঠিকাদারদের তাগাদা দিয়ে কাজগুলো তুলে নিতে।
ঠিকাদারদের মূল্য পুনর্বিন্যাসের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে আবু ইউসুফ জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এমন কোনো বিধান নেই।
সূত্রঃ এন টিভি