হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারের নানা পদক্ষেপ, জনসচেতনতা, আইন প্রয়োগের কথা বলা হলেও দেশের তামাকশিল্পে শিশুশ্রম বাস্তবে বন্ধ হচ্ছে না। আর এসব শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে তাদের শ্রমের মাধ্যমেই বিড়িসহ অন্যান্য তামাকশিল্পের মালিকরা মুনাফা বাড়িয়ে নিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিহেভিয়ারাল অ্যান্ড হেলথ কেয়ার রিসার্চের এক গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই গবেষণাপত্রে বাংলাদেশে বিড়ি কারখানায় শিশু শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিক কর্মপরিবেশ নিয়ে বিশদ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে নিয়োগ দেওয়া অবৈধ। তবু এটি পর্যাপ্ত মাত্রায় কার্যকর হচ্ছে না।
ওই জার্নালে গত ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বিড়িশিল্পে অমানবিক শিশুশ্রম বন্ধ করতে কার্যকর উপায় বের করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিড়ি কারখানাগুলোতে শিশুশ্রম ও শোষণের ব্যাপারে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও লালমনিরহাটসহ যেসব জেলায় প্রচুর পরিমাণে তামাক জন্মায়, সেখানকার দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের শিশুদের সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে বিড়িশিল্প। প্রতিটি বিড়ি কারখানার শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ শ্রমিকই শিশু। লালমনিরহাট জেলায় দেখা গেছে, ২১ হাজার বিড়ি শ্রমিকের মধ্যে ১৫ হাজারই শিশু, যাদের বয়স চার থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বিড়ি ও জর্দাশিল্পে একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের দৈনিক গড় মজুরি যথাক্রমে ৩৫-৪৮ টাকা হলেও এক হাজার বিড়ির খোসা প্রস্তুত করার জন্য একজন শিশু শ্রমিকের পারিশ্রমিক কোনোভাবেই সাত থেকে আট টাকার বেশি হয় না। কারখানার চাহিদা পূরণ করার জন্য একজন শিশু শ্রমিককে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা কাজ করতে হয়। এসব বিড়ি কারখানায় কাজ করা শিশু শ্রমিকদের প্রায়ই ক্রনিক ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, তলপেটের প্রদাহ, ডায়রিয়া ও পেশির ব্যথায় ভুগতে দেখা যায়। বিড়ি কারখানায় কাজ করা নারীরা প্রায়ই সঙ্গে করে শিশুসন্তানদের কারখানায় নিয়ে যান।
প্রবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ অনুসারে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে মোট ৩৮টি কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে, যেগুলো শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যহানিকর। এসব কর্মক্ষেত্রে শিশুদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তালিকায় বিড়ি ও তামাকশিল্পের অবস্থান চতুর্থ।
বিড়ি কারখানাগুলোর বাইরে ‘শিশুশ্রম নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুললেও ভেতরে ঠিকই শিশু শ্রমিকরা কাজ করে বলে ওই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।