হাওর বার্তা ডেস্কঃ কদর নেছার বয়স শত পেরিয়ে গেছে আরও ১৭ বছর আগে। আর করফুল নেছার বয়স ৯১ এর কোটা পেরিয়েছে। এদের মধ্য কদর নেছা স্বামীকে হারিয়েছে স্বাধীনতার দুই বছর পরে। আর দুই মাস আগে ১২৯ বছর বয়সে মারা গেছেন করফুল নেছার স্বামী মনু মিয়া।
চার বছর আগে চোখেরও দৃষ্টি হারিয়েছেন করফুল নেছা। এখন পুরোপুরি পরনির্ভরশীল এ বৃদ্ধা কারও সাহায্য ছাড়া ঘর থেকেও বের হতে পারেন না।
বলছিলাম পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের দুই অসহায় বৃদ্ধার কথা। বয়সের ভারে দুজনেই ন্যুয়ে পড়লেও তাদের কপালে এখনও জোটেনি সরকারি সহায়তা বয়স্ক ভাতার কার্ড। তাদেরকে দেখার পর বা তাদের সঙ্গে কথা বলার পর ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে কদর নেছা-করফুল নেছা কি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন?
বয়স্ক ভাতার কার্ড কেন পাননি জানতে চাইলে আমতলী ইউনিয়েনের নতুনপাড়ার বাসিন্দা ১১৭ বছর বয়সী কদরের নেছা সাংবাদিককে বলেন ‘কইলেও মেম্বররা কেউ কিছু আমারে দেয় না, কতো কইছি কেউ আমার কতা হোনে না। শুধু বয়স্ক ভাতার একটি কার্ডই নয় আজ পর্যন্ত সরকারি সাহায্যের কিছুই পৌঁছায়নি তার ঘরে। জানালেন, স্বাধীনতার দুই বছর পর স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়েছেন। ঠাঁই হয়েছে একমাত্র ছেলের ঘরে। সেই ছেলেও বছর কয়েক আগে মারা গেলে ছেলের ঘরের একমাত্র নাতির অভাবের সংসারেই ঠিকানা হয় কদর নেছার।
হাঁটুর ওপর ভর করে হাঁটাচলা করতে হয় তাকে। বেশ ক’বছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নাতির অভাবের সংসারে অনেকটা অনাহারে দিন কাটে এই বৃদ্ধার। অন্তত দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য একটি কার্ড চান তিনি।
আমতলী ইউনিয়েনের আবু তাহের সর্দার পাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধা করফুল নেছার জীবনে বয়সের সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্ধত্ব। গত চার বছর ধরে অন্ধ করফুল নেছার চিকিৎসাও করাতে পারেননি ছেলে আলী হোসেন।
দুই ছেলের জননী করফুল নেছার বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জমির আলী মিস্ত্রি তেমন একটা খোঁজখবর রাখেন না বৃদ্ধা মায়ের। ফলে দৃষ্টিহীন বৃদ্ধা মায়ের ঠিকানা হয়েছে ছোট ছেলে মোঃ আলী হোসেনের অভাবের সংসারে। তবে বড় ছেলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ নেই এ মায়ের।
বয়সের সঙ্গে নানা অসুখ-বিসুখ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। কিন্তু ন্যূনতম চিকিৎসাটুকুও করানো যাচ্ছে না অর্থাভাবে এমনটাই জানিয়েছেন তার ছেলে মোঃ আলী হোসেন।
তার বৃদ্ধা মা আর কতো বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাবেন এমন প্রশ্ন ছেলে আলী হোসেনের। তিনি বলেন, মেম্বার-চেয়ারম্যান সবসময়ই বলে কার্ড করে দেবে, তবে সেটা কবে তা জানি না। শুধু বয়স্ক ভাতা নয়, কোনো সরকারি সহায়তাই পৌঁছে না এ পরিবারে। এমন অভিযোগও জানালেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় মেম্বার সঞ্জীব শর্মা বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ পাইনি। তবে বরাদ্দ পেলে তাদেরকে কার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান এ তৃণমূল জনপ্রতিনিধি।
তবে আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গনি বলেন, এমন ঘটনা আমার অজানা। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার অধিকার রাখে। সামনের বরাদ্দেই তাদেরকে কার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, এত বছর বয়সে বয়স্ক ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য সব সেফটি নেটের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
সূত্রঃ জাগোনিউজ