হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী তিন দিন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এমনটি জানিয়ে এখানকার নদী তীরবর্তী জমির পাকা ধান দ্রুত কেটে নিরাপদ স্থানে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)। বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে গাণিতিক মডেলের আবহাওয়া পূর্বাভাস সূত্রের বরাত দিয়ে নেত্রকোনা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানান, রোববার থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ও তৎসংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার অনেক স্থানে তিন দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে সুরমা-কুশিয়ারা ধনু সোমেশ্বরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করে হাওরের বোরো ফসলে আঘাত হানতে পারে।
ওই নির্বাহী প্রকৌশলী তার ফেসবুক পেইজে লেখেন, নেত্রকোণা জেলার সকল স্তরের সম্মানিত কর্মকর্তাগণ, সুধি সমাজ, সাংবাদিক ভাইয়েরা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সকল কৃষক ভাইয়েরা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ২৯/০৪/২০১৮ খ্রী. হতে নেত্রকোণা জেলায় ২১০ মি মি হতে ২৫০ মি মি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই হাওরের সকল পাকা ধান কেটে নিরাপদ স্থানে আনার জন্য সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করা হলো। কৃষক ভাইয়েরা আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদেরকে বার্তাটি পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।’
যোগাযোগ করা হলে প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছর আগাম বন্যার পানিতে নেত্রকোণার হাওরের প্রায় সমস্ত ফসল তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছিল। তাই এবার এখানকার ফসল রক্ষা জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ১৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৯০ কিলোমিটার বাঁধ।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কৃষক তপন বাঙ্গালী বলেন, এবার অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল এলেও এখানে গত বছরের মতো শতভাগ ফসলের ক্ষতি হবে না। কারণ, ইতোমেধ্যে হাওরের প্রায় ৬০ ভাগ ফসল কাটা হয়ে গেছে। তার নিজের ৫ একর জমির মধ্যে ৩ একর জমির ফসল কেটে ফেলেছেন।
এখানকার ধান কাটা আরো তরান্বিত হতো যদি শ্রমিক সংকট দেখা না দিত এবং সরকারিভাবে যদি ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হতো।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল জানান, জেলার একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল খালিয়াজুরী উপজেলার পুরোটিই হাওরাঞ্চল। এখানে এবার বোরো আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে। তাছাড়া, মদন, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলার হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত অংশে বোরো রোপণ হয়েছে ২১ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে। ওই সমস্ত জমির ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০ হাজার মেট্রিক টন।
এ বছর হাওরে ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে শতকরা ৯০ ভাগ জমিতে। কম সময়ে উৎপাদন হওয়া এ ফসল ইতোমধ্যে এখানে শতকরা ৮৫ ভাগ কাটা হয়ে গেছে। শিলা বৃষ্টি কিংবা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে আর ৩/৪ দিনের মধ্যেই হাওরের সমস্ত ধান কাটা হয়ে যাবে।
এখানে অল্প বৃষ্টি আর সামান্য কিছু শ্রমিক সংকট থাকলেও ফসলের বুকে তেমন কোন বিরূপ প্রভাব ফেলেনি। মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরীর হাওরপাড়ের কৃষকদের মাঝে ভর্তুতিকে দেয়া ধান কাটা-মাড়াইয়ের শতাধিক আধুনিক যন্ত্র এখানে দ্রুত গতিতে চালানো হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাবার শঙ্কায় দ্রুত হাওরের বোরো ধান কেটে ফেলতে জেলা প্রশাসন থেকেও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলার প্রত্যেক উপজেলার ইউএনও এবং জনপ্রতিনিধিদেরকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে অবিলম্বে ধান কাটার জন্য কৃষকদের সচেতন করতে।