হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতিসংঘে নিযুক্ত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর শুরু হচ্ছে আজ। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগামীকাল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন। এরপর সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা মিয়ানমার সফরে যাবেন। সেখানে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটি রাখাইন রাজ্যে যাবেন বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সদস্য দেশের সংখ্যা ১৫। এই পরিষদের সব সদস্য দেশের এভাবে একসঙ্গে কোনো সংকট পরিদর্শনের ঘটনা বিরল। ফলে এ সফর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।
অন্যদিকে আগামী ৫ ও ৬ মে ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের আগে ৪ মে সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কক্সবাজারে নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হবে। বস্তুত ৫৭ জাতির ওআইসি গ্র“পের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হল রোহিঙ্গা সংকট। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফরকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অস্ট্রেলীয় সরকারের ভূমিকা কী হতে পারে- তা জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সরকারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখা এবং বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং কিছুদিন আগে শূন্যরেখার ওপারে মিয়ানমার ভূখণ্ড থেকে একটি পরিবারকে রাখাইনে নিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু হয়েছে বলে সে দেশের সরকার প্রচার শুরু করলেও সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায় যাতে রাখাইনে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশই সৃষ্টি করা হয়নি। এতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী নয়। মূলত বাধ্য করা না হলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নেবে না, এ এক প্রকার নিশ্চিত। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও হস্তক্ষেপ জরুরি।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটেছে, তা গণহত্যার শামিল। রোহিঙ্গাদের ঘরের ভেতর আটকে রেখে আগুন দেয়া হয়েছে। খুব কাছ থেকে গ্রেনেড হামলা ও গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া অমানবিকভাবে মারধর, ছুরিকাঘাত ও ধর্ষণসহ অন্যান্য নিপীড়ন করা হয়েছে, যা রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে তুলনীয়।
আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের কুশীলবদের বিচারের সম্মুখীন করা উচিত। অবশ্য মিয়ানমার গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত রোম চুক্তিতে সই না করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) সাধারণভাবে অপরাধীদের বিচার করা যাবে না। তবে নিরাপত্তা পরিষদ চাইলে আইসিসিতে তাদের বিচার করা সম্ভব।
কাজেই এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর সমাধানের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে বড় কথা, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কঠিন। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী প্রতিনিধিদের সফর ফলপ্রসূ হোক, এটাই প্রত্যাশা।