ঢাকা ০৭:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস ৫ আগস্টের পর ভুয়া মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হবে, জানালেন নতুন আইজিপি আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির জুয়ার অ্যাপের প্রচারে নাম লেখালেন বুবলীও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’- তোফায়েল আহমেদ আমরা যা করতে চাই, জনগণকে সাথে নিয়ে করতে চাই : তারেক রহমান বহু নেতার শাসন আমরা দেখেছি, পরিবর্তন দেখিনি : ফয়জুল করীম গ্যাসের জন্য আ.লীগ আমলে ২০ কোটি টাকা ঘুস দিয়েছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

কাঁচা পাট রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির মুখে কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮
  • ৩১৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় তিন মাস হতে চললেও কাঁচা পাট রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছে, এতে পাট উৎপাদকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। পাটের দাম কমে যাবে। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জাঁতাকলে পড়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে তা আর কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত ১৮ জানুয়ারি এক আদেশে তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আদেশে বলা হয়, নতুন আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলা তোষা রিজেকশন (বিটিআর), আনকাট ও বাংলা হোয়াইট রিজেকশন (বিডাব্লিউআর)—এই তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ থাকবে; তবে অন্য সব ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই। এর আগেও কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

গত ৫ এপ্রিল দৌলতপুরের বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন-বিজেএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

জানা যায়, পাটকাঠি থেকে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর রোদে শুকিয়ে সরাসরি যে পাট পাওয়া যায় তাকে বলা হয় আনকাট। তাতে ভালো-মন্দ সব অংশই থাকে। তোষা জাতের পাটের খারাপ অংশটুকুকে বলে বিটিআর। সাদা জাতের পাটের খারাপ অংশকে বলে বিডাব্লিউআর।

পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর এক মাসের জন্য সব ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। এক মাস পর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এবারে পাট রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

একাধিক রপ্তানিকারক জানান, ২০০ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া এই কাঁচা পাট ব্যবসাটি যখন স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল, তখন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনো রকম কথাবার্তা না বলে ১৯৮৪ সালে, ২০১০ সালে, ২০১৫ সালে কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালে পাটজাত পণ্য দিয়ে মোড়কজাত করা বাধ্যতামূলক আইন করা হয়। তখন দেশের

পাটকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক মাস কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। তখন আরো বলা হয়, পাট উৎপাদন কম হয়েছে। পাটকল মালিকরা কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করার দাবি করছিল। প্রসঙ্গত, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তা ব্যবহার নিশ্চিত করার আইন রয়েছে। দেশে বছরে প্রায় ১০ কোটি মোড়কের চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটের পাশাপাশি পাট সুতা, বস্তা, চট ও পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। কাঁচা পাট বেশির ভাগটাই যায় ভারত ও পাকিস্তানে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো প্রধানত পণ্য মোড়কীকরণে উপযুক্ত চট বা বস্তা তৈরি করে থাকে। বেসরকারি মিলগুলো প্রধানত স্পিনিং মিল, যাতে সুতা তৈরি করে। এ কারণে বেসরকারি মিলগুলো ভালো মানের পাট সংগ্রহ করে। এই পাটেও কাটিং হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বা বিজেএমসি পরিচালিত মিলগুলোতেও কাটিং হয়। দেশে এবং বিদেশে কোথাও এই কাটিংয়ের চাহিদা নেই। নিষেধাজ্ঞার কারণে যে পাটে কাটিং বেশি হওয়ার সম্ভাবনা, সেই পাটের চাহিদা কমে যাবে; স্বাভাবিকভাবে দামও কমে যাবে। যাতে গোটা পাট বাজারের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন-বিজেএ সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী হাওর বার্তাকে বলেন, ‘সরকার রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে আচমকা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্ষতির দিকটি তুলে ধরে আমরা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু প্রায় তিন মাসেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় আমরা ক্ষুব্ধ, ব্যথিত।’

প্রসঙ্গত, দেশে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ বেল (এক বেলের ওজন ১৮২ কেজি) পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে কমবেশি ১০ লাখ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। পাটের দাম না পাওয়া যাওয়ায় একসময় কৃষকরা পাট উৎপাদন প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল, তখন মাত্র ৩০ থেক ৪০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন

কাঁচা পাট রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির মুখে কৃষক

আপডেট টাইম : ০৩:০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় তিন মাস হতে চললেও কাঁচা পাট রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছে, এতে পাট উৎপাদকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। পাটের দাম কমে যাবে। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জাঁতাকলে পড়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে তা আর কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত ১৮ জানুয়ারি এক আদেশে তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আদেশে বলা হয়, নতুন আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলা তোষা রিজেকশন (বিটিআর), আনকাট ও বাংলা হোয়াইট রিজেকশন (বিডাব্লিউআর)—এই তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ থাকবে; তবে অন্য সব ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই। এর আগেও কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

গত ৫ এপ্রিল দৌলতপুরের বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন-বিজেএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

জানা যায়, পাটকাঠি থেকে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর রোদে শুকিয়ে সরাসরি যে পাট পাওয়া যায় তাকে বলা হয় আনকাট। তাতে ভালো-মন্দ সব অংশই থাকে। তোষা জাতের পাটের খারাপ অংশটুকুকে বলে বিটিআর। সাদা জাতের পাটের খারাপ অংশকে বলে বিডাব্লিউআর।

পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর এক মাসের জন্য সব ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। এক মাস পর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এবারে পাট রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

একাধিক রপ্তানিকারক জানান, ২০০ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া এই কাঁচা পাট ব্যবসাটি যখন স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল, তখন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনো রকম কথাবার্তা না বলে ১৯৮৪ সালে, ২০১০ সালে, ২০১৫ সালে কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালে পাটজাত পণ্য দিয়ে মোড়কজাত করা বাধ্যতামূলক আইন করা হয়। তখন দেশের

পাটকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক মাস কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। তখন আরো বলা হয়, পাট উৎপাদন কম হয়েছে। পাটকল মালিকরা কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করার দাবি করছিল। প্রসঙ্গত, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তা ব্যবহার নিশ্চিত করার আইন রয়েছে। দেশে বছরে প্রায় ১০ কোটি মোড়কের চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটের পাশাপাশি পাট সুতা, বস্তা, চট ও পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। কাঁচা পাট বেশির ভাগটাই যায় ভারত ও পাকিস্তানে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো প্রধানত পণ্য মোড়কীকরণে উপযুক্ত চট বা বস্তা তৈরি করে থাকে। বেসরকারি মিলগুলো প্রধানত স্পিনিং মিল, যাতে সুতা তৈরি করে। এ কারণে বেসরকারি মিলগুলো ভালো মানের পাট সংগ্রহ করে। এই পাটেও কাটিং হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বা বিজেএমসি পরিচালিত মিলগুলোতেও কাটিং হয়। দেশে এবং বিদেশে কোথাও এই কাটিংয়ের চাহিদা নেই। নিষেধাজ্ঞার কারণে যে পাটে কাটিং বেশি হওয়ার সম্ভাবনা, সেই পাটের চাহিদা কমে যাবে; স্বাভাবিকভাবে দামও কমে যাবে। যাতে গোটা পাট বাজারের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন-বিজেএ সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী হাওর বার্তাকে বলেন, ‘সরকার রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে আচমকা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্ষতির দিকটি তুলে ধরে আমরা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু প্রায় তিন মাসেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় আমরা ক্ষুব্ধ, ব্যথিত।’

প্রসঙ্গত, দেশে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ বেল (এক বেলের ওজন ১৮২ কেজি) পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে কমবেশি ১০ লাখ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। পাটের দাম না পাওয়া যাওয়ায় একসময় কৃষকরা পাট উৎপাদন প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল, তখন মাত্র ৩০ থেক ৪০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতো।