ঢাকা ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন ‘তামাশা’ মিয়ানমারের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮
  • ৩২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশান কার্ড (এনভিসি) দিয়ে অবাধে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিরোধী সে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা, তার বদলে এনভিসির নামে তাদের অভিবাসী করার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। এর আগে মিয়ানমার বলছিল, স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তেরও জোরাল বিরোধিতা করছে দেশটির বিরোধী দলগুলো।

প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের মুক্ত চলাচলের অধিকার নিয়ে বুধবার রেডিও ফ্রি এশিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গাদের এনভিসি নিয়ে মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

মিয়ানমার বলছে, স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের এনভিসি কার্ড দিয়ে প্রথমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে। এনভিসি কার্ডধারীরা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে এবং নাগরিকত্বের আবেদনও করতে পারবে।

দেশটির সরকারের এ পরিকল্পনার বিরোধিতায় একাট্টা বড় ছোট সব রাজনৈতিক দল। তারা বলছে, এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্তভাবে চলাচল দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তাছাড়া সংবিধান তাদের সে সুযোগ দেয়নি।

গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াট আঁয় কোনও মন্ত্রী বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে গেছেন। দেশে ফিরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের ব্যর্থ হয়েছে বলে মিথ্যাচার করেন।

মিয়ানমারের মন্ত্রী সে দেশের সাংবাদিকদের জানান, ‘স্বেচ্ছায় ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে। তাদের দেওয়া হবে এনভিসি কার্ড। এটি থাকলে দেশের যে কোনও স্থানে যাতায়াত করতে পারবে রোহিঙ্গারা। এমনকি এ কার্ডধারীরা আবেদন করলে পাঁচ মাসের মধ্যে নাগরিকত্বও পেতে পারে।’

এ ঘোষণার পরই এ পরিকল্পনার বিরোধিতায় নামে দেশটির সব বিরোধীদল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে তারা অভিন্ন দাবি তুলেছে। একই সঙ্গে তারা একাট্টা হয়ে বিরোধিতা করছে সরকারের এ পরিকল্পনার।

মিয়ানমারের প্রধান বিরোধিদল ইউএসডিপির মুখপাত্র নানদা হ্লা মিয়ান্ট মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে দলের কার্যালয়ে বলেন, ‘এনভিসি কার্ডধারীরা মুক্তভাবে চলাচল করলে দেশের জন্য বিপজ্জনক হবে’।

কট্টরপন্থী দলটির মুখপাত্র বলন, সরকার তাদের (রোহিঙ্গা) মুক্ত চলাচলের সুযোগ দিলে অন্য বিরোধিদলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করা হবে। এমনকি এনভিসি ইস্যুতে পার্লামেন্টেও একটি প্রস্তাব তোলা হবে।

ন্যাশনাল ইউনিয়ন পার্টির (এনইউপি) ভাইস চেয়ারম্যান হান সুয়ে ২০০৮ সালের সংবিধানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘শুধু পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকারী যারা কেবল তাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে। সংবিধান এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দেয়নি।’

দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু কির দল এনএলডিকে অভিযুক্ত ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এনডিএফ) পার্টির চেয়ারম্যান খিন মং সুয়ে বলেন, ‘তারা (এনএলডি) এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের সুযোগ দিতে পারে না। এটি দিলে রোহিঙ্গারা নাগরিকের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু তারা তো মিয়ানমারের নাগরিক নয়। এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দিতে হলে আগে দেশের অভিবাসন আইন সংস্কার করতে হবে।’

শতকের পর শতক ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার। গত চার দশক ধরে নিজেদের রাজ্যেও তাদের চলাচলের অধিকার ছিল সীমিত। এমনকি দেশটির শিক্ষা, চাকরি ও স্বাস্থ্য সেবায়ও তাদের প্রবেশাধিকার নেই।

১৯৮২ সালে হওয়া মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকার। তখন থেকে নিজভূমে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হাতে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হতে থাকে রোহিঙ্গারা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার কথিত অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে।

তবে জাতিসংঘ বলেছে, কথিত ওই হামলার আগে থেকেই সেখানে রোহিঙ্গাবিদ্বেষী প্রচারণা চলছে। বিশ্ব সংস্থাটি রোহিঙ্গা নিধনের বর্বর ঘটনাকে পাঠ্যপুস্তকের জন্য ‘জাতিগত নির্মূলের’ একটি উদাহরণ বলেও অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনেও ‘রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণা’কে সেখানকার সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের স্রোত শুরু হওয়ার পর বিষয়টি বাংলাদেশ তোলে জাতিসংঘে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও প্রথমে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা স্বীকার না করলেও পরে ‘কিছু হত্যার’ বিষয়টি স্বীকার করেন দেশটির সেনাপ্রধান।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রথমে সমঝোতা স্মারক এবং পরে ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট নামে চুক্তিও হয়েছে। প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ হিসেবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারকে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকাও দেয়া হয়। যদিও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাইয়ের নামে সেখান থেকে মাত্র তিনশ মতো রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক বলে দাবি করে।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে না নিয়ে নানা তালবাহানা করছে- একথা জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের জন্য মানসম্পন্ন আশ্রয় প্রকল্প নির্মাণে সরকারকে বিপুল অংকের টাকাও ব্যয় করতে হচ্ছে।

মিয়ানমারের নিউ ন্যাশনাল ডেমোক্র্যটিক পার্টির চেয়ারম্যান থিয়েন নাউন্ট বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গা) এখনও নাগরিক নয়। বে-নাগরিকদের মুক্ত চলাচলের নাগরিক অধিকার সরকার দিতে পারে না। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপদজনক।’

রাখাইনের আরাকান নেশনস পার্টির সেক্রেটারি তুন অং খিয়াও বলেন, ‘রাখাইনে বসবাস করা রোহিঙ্গারা বার্মিজ অথবা রাখাইন ভাষা বলতে পারে। কর্তৃপক্ষ যদি তাদের এনভিসি কার্ড দিয়ে মুক্ত চলাচলের অধিকার দেয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যারা রাখাইনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের যদি এনভিসি কার্ড দিয়ে মুক্ত চলাচলের অধিকার দেওয়া হয় তাহলে তা হবে খুবই বিপজ্জনক। এটা নিয়ে ভালো করে চিন্তা করতে হবে সরকারকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন ‘তামাশা’ মিয়ানমারের

আপডেট টাইম : ১২:৩৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশান কার্ড (এনভিসি) দিয়ে অবাধে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিরোধী সে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা, তার বদলে এনভিসির নামে তাদের অভিবাসী করার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। এর আগে মিয়ানমার বলছিল, স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তেরও জোরাল বিরোধিতা করছে দেশটির বিরোধী দলগুলো।

প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের মুক্ত চলাচলের অধিকার নিয়ে বুধবার রেডিও ফ্রি এশিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গাদের এনভিসি নিয়ে মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

মিয়ানমার বলছে, স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের এনভিসি কার্ড দিয়ে প্রথমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে। এনভিসি কার্ডধারীরা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে এবং নাগরিকত্বের আবেদনও করতে পারবে।

দেশটির সরকারের এ পরিকল্পনার বিরোধিতায় একাট্টা বড় ছোট সব রাজনৈতিক দল। তারা বলছে, এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্তভাবে চলাচল দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তাছাড়া সংবিধান তাদের সে সুযোগ দেয়নি।

গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াট আঁয় কোনও মন্ত্রী বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে গেছেন। দেশে ফিরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের ব্যর্থ হয়েছে বলে মিথ্যাচার করেন।

মিয়ানমারের মন্ত্রী সে দেশের সাংবাদিকদের জানান, ‘স্বেচ্ছায় ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে। তাদের দেওয়া হবে এনভিসি কার্ড। এটি থাকলে দেশের যে কোনও স্থানে যাতায়াত করতে পারবে রোহিঙ্গারা। এমনকি এ কার্ডধারীরা আবেদন করলে পাঁচ মাসের মধ্যে নাগরিকত্বও পেতে পারে।’

এ ঘোষণার পরই এ পরিকল্পনার বিরোধিতায় নামে দেশটির সব বিরোধীদল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে তারা অভিন্ন দাবি তুলেছে। একই সঙ্গে তারা একাট্টা হয়ে বিরোধিতা করছে সরকারের এ পরিকল্পনার।

মিয়ানমারের প্রধান বিরোধিদল ইউএসডিপির মুখপাত্র নানদা হ্লা মিয়ান্ট মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে দলের কার্যালয়ে বলেন, ‘এনভিসি কার্ডধারীরা মুক্তভাবে চলাচল করলে দেশের জন্য বিপজ্জনক হবে’।

কট্টরপন্থী দলটির মুখপাত্র বলন, সরকার তাদের (রোহিঙ্গা) মুক্ত চলাচলের সুযোগ দিলে অন্য বিরোধিদলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করা হবে। এমনকি এনভিসি ইস্যুতে পার্লামেন্টেও একটি প্রস্তাব তোলা হবে।

ন্যাশনাল ইউনিয়ন পার্টির (এনইউপি) ভাইস চেয়ারম্যান হান সুয়ে ২০০৮ সালের সংবিধানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘শুধু পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকারী যারা কেবল তাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে। সংবিধান এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দেয়নি।’

দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু কির দল এনএলডিকে অভিযুক্ত ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এনডিএফ) পার্টির চেয়ারম্যান খিন মং সুয়ে বলেন, ‘তারা (এনএলডি) এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের সুযোগ দিতে পারে না। এটি দিলে রোহিঙ্গারা নাগরিকের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু তারা তো মিয়ানমারের নাগরিক নয়। এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দিতে হলে আগে দেশের অভিবাসন আইন সংস্কার করতে হবে।’

শতকের পর শতক ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার। গত চার দশক ধরে নিজেদের রাজ্যেও তাদের চলাচলের অধিকার ছিল সীমিত। এমনকি দেশটির শিক্ষা, চাকরি ও স্বাস্থ্য সেবায়ও তাদের প্রবেশাধিকার নেই।

১৯৮২ সালে হওয়া মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকার। তখন থেকে নিজভূমে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হাতে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হতে থাকে রোহিঙ্গারা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার কথিত অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে।

তবে জাতিসংঘ বলেছে, কথিত ওই হামলার আগে থেকেই সেখানে রোহিঙ্গাবিদ্বেষী প্রচারণা চলছে। বিশ্ব সংস্থাটি রোহিঙ্গা নিধনের বর্বর ঘটনাকে পাঠ্যপুস্তকের জন্য ‘জাতিগত নির্মূলের’ একটি উদাহরণ বলেও অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনেও ‘রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণা’কে সেখানকার সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের স্রোত শুরু হওয়ার পর বিষয়টি বাংলাদেশ তোলে জাতিসংঘে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও প্রথমে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা স্বীকার না করলেও পরে ‘কিছু হত্যার’ বিষয়টি স্বীকার করেন দেশটির সেনাপ্রধান।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রথমে সমঝোতা স্মারক এবং পরে ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট নামে চুক্তিও হয়েছে। প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ হিসেবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারকে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকাও দেয়া হয়। যদিও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাইয়ের নামে সেখান থেকে মাত্র তিনশ মতো রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক বলে দাবি করে।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে না নিয়ে নানা তালবাহানা করছে- একথা জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের জন্য মানসম্পন্ন আশ্রয় প্রকল্প নির্মাণে সরকারকে বিপুল অংকের টাকাও ব্যয় করতে হচ্ছে।

মিয়ানমারের নিউ ন্যাশনাল ডেমোক্র্যটিক পার্টির চেয়ারম্যান থিয়েন নাউন্ট বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গা) এখনও নাগরিক নয়। বে-নাগরিকদের মুক্ত চলাচলের নাগরিক অধিকার সরকার দিতে পারে না। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপদজনক।’

রাখাইনের আরাকান নেশনস পার্টির সেক্রেটারি তুন অং খিয়াও বলেন, ‘রাখাইনে বসবাস করা রোহিঙ্গারা বার্মিজ অথবা রাখাইন ভাষা বলতে পারে। কর্তৃপক্ষ যদি তাদের এনভিসি কার্ড দিয়ে মুক্ত চলাচলের অধিকার দেয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যারা রাখাইনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের যদি এনভিসি কার্ড দিয়ে মুক্ত চলাচলের অধিকার দেওয়া হয় তাহলে তা হবে খুবই বিপজ্জনক। এটা নিয়ে ভালো করে চিন্তা করতে হবে সরকারকে।