হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘পত্রিকা পড়ে দেখলাম, লেখা আছে রাষ্ট্রপতি সস্ত্রীক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করিয়াছেন। এ নিউজতো আমার স্ত্রীও দেখে ফেলেছে। আসলে আমার স্ত্রী তো আমার সাথে যায় নাই। তাঁর প্রশ্ন হলো, আমার স্ত্রী আবার কে?’
গতকাল বুধবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এভাবেই বলছিলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে গত ২ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায় যান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ছিলেন না। অথচ পরদিন একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তিনি সস্ত্রীক ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সুতরাং, সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা তো অনেক কিছুতে গোলমাল লাগাইতে পারেন। তবে এ ধরনের পারপাসলেস অনর্থক গোলমাল লাগায়া অন্যের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক না।’
কুয়েটের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতিও তিনি। রীতি অনুযায়ী লিখিত বক্তব্যও পড়া শুরু করেন। কিন্তু কিছু সময় পরেই তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ কথা শুরু করেন। তাঁর হাস্যরস তুমুল করতালি দিয়ে উপভোগ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে অনুষ্ঠানটিতে।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি গল্পের মতো করে কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘জাজিরা একটা রিসোর্টে ছিলাম (পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করার পর)। শরীয়তপুরের ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেব ছোট একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছেন। ভাবলাম, সন্ধ্যায় কোনো কাজ নেই। আইচ্ছা, আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা গান-বাজনা শুনলে খারাপ কী, ভালোই তো হবে। শুনলাম।
পরের দিন পত্রিকা এখানে পাই নাই। বাসায় গিয়া পত্রিকা পড়ে দেখলাম। লেখা আছে, রাষ্ট্রপতি সস্ত্রীক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করিয়াছেন। এ নিউজতো আমার স্ত্রীও দেখে ফেলছে। আসলে আমার স্ত্রী তো আমার সঙ্গে যায় নাই। তাঁর প্রশ্ন হলো, সে সস্ত্রীক, আমার স্ত্রী আবার কে? সাংবাদিক ভাইয়েরা তো আজকেও আছেন। দয়া করে লেখাটেহার মধ্যে একটু হুশবিশ কইরা, মানুষের সংসারের মধ্যে গোলমাল লাগায়া দেয়া তো ঠিক না।
আর বিশেষ করে এই বয়সে! একটা বয়স তো আছে, যে বয়সে গোলমাল লাগাইলে একটা, না একটা সুরাহা করা যায়। কিন্তু এই বয়সে তা করারও কোনো উপায় নাই। ফলে আজ কী হয়েছে জানেন? আজকে আমি আর খুলনায় একা আসতে পারি নাই। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীও আসছে। তবে কপাল ভালো উনি এই কনভোকেশনে আসে নাই, উনি ভিসি সাহেবের বাসায় আছেন। ভিসি সাহেবের বাসায়ও উনি শান্তিতে আছেন বইলা মনে করি না। কারণ এই সভার মধ্যে, সঙ্গে আবার তাঁর ছেলের বউরারে নিয়ে আসছেন। এবং এই মঞ্চের মধ্যে এক ছেলের বউ আছে, পাডাইয়া দিছে। এখানে আমি কী করি! এমন একটা পাহারার ব্যবস্থা করছে, এটা চিন্তা করা যায় না। সুতরাং সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা তো অনেক কিছুতে গোলমাল লাগাইতে পারেন। তবে এ ধরনের পারপাসলেস অনর্থক গোলমাল লাগায়া অন্যের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক না।’