ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১৮
  • ৩৫১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নড়াইলে আমনে ফলন ও দাম আশানুরুপ পেয়ে বোরো আবাদে ঝুকছে কৃষকেরা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতো মধ্যে সবুজ ধান গাছ দুলছে বিস্তৃর্ণ ফসলি জমিতে। বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক-কৃষানীরা। তাই কৃষকের চোখে মুখে এখন আনন্দের হাসি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী এই দুই মাস জুড়ে বোরো ধানের চারা জমিতে রোপন করতে হয়। এপ্রিল-মে মাসে জমি থেকে পাকা ধান কৃষকেরা ঘরে তোলে। চলতি মৌসুমে নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় ৪০হাজার ৯শ ৫৭ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৪৬ হাজার ১শ ৮৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর থেকে এবছর ৫ হাজার ২শ ২৮ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর জমিতে ধানের ফলন বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগও।

বোরো আবাদে কৃষাণ কৃষাণীর ব্যস্ততার ছবি এখন নড়াইলের মাঠে মাঠে। ভাল ফলন পেতে সার ছিটানো, সেচদেওয়াসহ ক্ষেতের নানা পরিচর্যায় সকাল সন্ধা খেটে চলেছে কৃষক কৃষানীরা। নিরুপায় কৃষক পূর্বপুরুষের পেশাকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। কৃষি উপকরনের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে চাষাবাদ দুরুহ হয়ে পড়লেও অনেক আশায় বোরো চাষকে ঘিরে নিরন্তর চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। তাদের একটিই চাওয়া ঘাম ঝরানো ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের শুভদৃষ্টি পড়বে ।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নড়াইলের তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার কাড়ার বিল, নলদিরচর বিল, মরিচপাশার বিল, চাচই বিল, আকদিয়ার বিল, রুইয়ের বিল, কৈয়ের বিল, ভাটিয়ার বিল, খলিয়ার বিল, হবশাৎরার বিল,  মুলিয়ার বিল, আইড়োর বিল, বিল ইছামতির বিল, নুন জলার বিল, নলাবিল, মাইজ পাড়ার বিলসহ জেলার বিভিন্ন বিলে বোরোর আবাদ বেশি হয়েছে।

নড়াইল সদর উপজেলার পাজারখালী গ্রামের কৃষক সেলিম জানান, তিনি ১৬ বছর যাবৎ বোরো আবাদ করেন। এক সময় তিনি খাল থেকে মেশিনের সাহায্যে পানি তুলে বোরো আবাদ করতেন। গত ৭-৮ বছর যাবৎ খাল থেকে পানি পাওয়া যায়না। তাই নিজ জমিতে একটি স্যালো ম্যাশিন স্থাপন করে বোরো আবাদ করেন। তিনি জানান, বাজারে এক লিটার জ্বালানী তেলের দাম ৬৮-৭০ টাকা। তার মত অনেক কৃষকের দাবী সরকার দ্রুত জ্বালানী তেলের দাম হ্রাস করুক।

মুলিয়া গ্রামের কৃষক মনি শেখ জানান, আমি এবছরে ২ একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছিল। দামও ভাল পেয়ে ছিলাম। তাই এবছর জমিতে বোরো আবাদ বৃদ্ধি করেছি। তিনি এবছর  মোট ৩ একর ৪৫ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। বাম্পার ফলন ও নায্য মূল্যের আশা করছেন প্রান্তিক এই কৃষক।

লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর এলাকার কৃষক আকিদুল জানান, তার মত কয়েক হাজার কৃষক বিদ্যুত চালিত পাম্প দিয়ে পানি তুলে বোরো চাষ করে। বিদ্যুত চলে গেলে তারা জমিতে পানি দিতে পারেনা। গত ১৫ দিন যাবত সময়মত বিদ্যুত সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ করেন কৃষকেরা।

নড়াইল পল্লি বিদ্যুৎ কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দিলিপ কুমার গাইন বলেন, কৃষকদের মাঝে যথাযথ ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বোরো আবাদের কথা চিন্তা করে তিনি চেষ্টা করবেন বোরো মৌশুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করার। রাত ১১টার পর থেকে কৃষকদের পাম্প চালানোর পরামর্শ দেন তিনি।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় জানান, সময়মত বীজ, সার ও কীটনাশক পাওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর নড়াইলে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। বর্তমানে বোরো ক্ষেতে সবুজ ধান গাছ দুলছে। আগামি ২ মাস বোরো আবাদের কথা ভেবে কৃষকদের মাঝে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করব। আশা করছি এ বছর বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পাবে জেলার কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষকদের বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নড়াইলে আমনে ফলন ও দাম আশানুরুপ পেয়ে বোরো আবাদে ঝুকছে কৃষকেরা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতো মধ্যে সবুজ ধান গাছ দুলছে বিস্তৃর্ণ ফসলি জমিতে। বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক-কৃষানীরা। তাই কৃষকের চোখে মুখে এখন আনন্দের হাসি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী এই দুই মাস জুড়ে বোরো ধানের চারা জমিতে রোপন করতে হয়। এপ্রিল-মে মাসে জমি থেকে পাকা ধান কৃষকেরা ঘরে তোলে। চলতি মৌসুমে নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় ৪০হাজার ৯শ ৫৭ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৪৬ হাজার ১শ ৮৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর থেকে এবছর ৫ হাজার ২শ ২৮ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর জমিতে ধানের ফলন বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগও।

বোরো আবাদে কৃষাণ কৃষাণীর ব্যস্ততার ছবি এখন নড়াইলের মাঠে মাঠে। ভাল ফলন পেতে সার ছিটানো, সেচদেওয়াসহ ক্ষেতের নানা পরিচর্যায় সকাল সন্ধা খেটে চলেছে কৃষক কৃষানীরা। নিরুপায় কৃষক পূর্বপুরুষের পেশাকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। কৃষি উপকরনের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে চাষাবাদ দুরুহ হয়ে পড়লেও অনেক আশায় বোরো চাষকে ঘিরে নিরন্তর চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। তাদের একটিই চাওয়া ঘাম ঝরানো ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের শুভদৃষ্টি পড়বে ।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নড়াইলের তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার কাড়ার বিল, নলদিরচর বিল, মরিচপাশার বিল, চাচই বিল, আকদিয়ার বিল, রুইয়ের বিল, কৈয়ের বিল, ভাটিয়ার বিল, খলিয়ার বিল, হবশাৎরার বিল,  মুলিয়ার বিল, আইড়োর বিল, বিল ইছামতির বিল, নুন জলার বিল, নলাবিল, মাইজ পাড়ার বিলসহ জেলার বিভিন্ন বিলে বোরোর আবাদ বেশি হয়েছে।

নড়াইল সদর উপজেলার পাজারখালী গ্রামের কৃষক সেলিম জানান, তিনি ১৬ বছর যাবৎ বোরো আবাদ করেন। এক সময় তিনি খাল থেকে মেশিনের সাহায্যে পানি তুলে বোরো আবাদ করতেন। গত ৭-৮ বছর যাবৎ খাল থেকে পানি পাওয়া যায়না। তাই নিজ জমিতে একটি স্যালো ম্যাশিন স্থাপন করে বোরো আবাদ করেন। তিনি জানান, বাজারে এক লিটার জ্বালানী তেলের দাম ৬৮-৭০ টাকা। তার মত অনেক কৃষকের দাবী সরকার দ্রুত জ্বালানী তেলের দাম হ্রাস করুক।

মুলিয়া গ্রামের কৃষক মনি শেখ জানান, আমি এবছরে ২ একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছিল। দামও ভাল পেয়ে ছিলাম। তাই এবছর জমিতে বোরো আবাদ বৃদ্ধি করেছি। তিনি এবছর  মোট ৩ একর ৪৫ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। বাম্পার ফলন ও নায্য মূল্যের আশা করছেন প্রান্তিক এই কৃষক।

লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর এলাকার কৃষক আকিদুল জানান, তার মত কয়েক হাজার কৃষক বিদ্যুত চালিত পাম্প দিয়ে পানি তুলে বোরো চাষ করে। বিদ্যুত চলে গেলে তারা জমিতে পানি দিতে পারেনা। গত ১৫ দিন যাবত সময়মত বিদ্যুত সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ করেন কৃষকেরা।

নড়াইল পল্লি বিদ্যুৎ কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দিলিপ কুমার গাইন বলেন, কৃষকদের মাঝে যথাযথ ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বোরো আবাদের কথা চিন্তা করে তিনি চেষ্টা করবেন বোরো মৌশুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করার। রাত ১১টার পর থেকে কৃষকদের পাম্প চালানোর পরামর্শ দেন তিনি।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় জানান, সময়মত বীজ, সার ও কীটনাশক পাওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর নড়াইলে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। বর্তমানে বোরো ক্ষেতে সবুজ ধান গাছ দুলছে। আগামি ২ মাস বোরো আবাদের কথা ভেবে কৃষকদের মাঝে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করব। আশা করছি এ বছর বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পাবে জেলার কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষকদের বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।