গ্রামের এক সাধারণ কৃষকের আবিষ্কার ‘দুদুলতা’ ধান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের এক সাধারণ কৃষকের আবিষ্কার ‘দুদুলতা’ ধান। উচ্চফলনশীল এ বোরো ধানটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকরা বলছেন, এ ধান রোগবালাই সহিষ্ণুও। ফলে হাইব্রিড জাতের ধানের তুলনায় এতে ভরসা পাচ্ছেন তারা। এবার দুদুলতার বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে কালুহাটি গ্রামের এমদাদুল হক দুদু মিয়া সুবললতা ধানের ক্ষেতের মধ্যে আলাদা ধরনের ধানের তিনটি গোছা আবিষ্কার করেন। ধান পাকার পর সেগুলো আলাদা করে দুই বছর পর্যন্ত বীজ তৈরি করেন তিনি। এরপর শুরু করেন আবাদ। দুদু মিয়ার অভিজ্ঞতা বলে, এ ধানের ফলন ভালো, অন্যান্য জাতের তুলনায় রোগবালাই কম হয়। উচ্চতায় খাটো হওয়ায় ধান পাকার পর বা ঝড়-বাতাসে হেলে পড়ে না।

দুদু মিয়া জানান, গত মৌসুমে (২০১৭ সাল) তিন বিঘা (এক বিঘা=৪৬ শতাংশ) জমিতে আবাদ করে ১০০ মণ ধান পেয়েছেন তিনি। এ বছরও ধানের অবস্থা বেশ ভালো।

তিনি বলেন, এ ধানের প্রতিটি শীষে ৩৫০-৪০০টি পর্যন্ত পুষ্ট ধান হয়, যা অন্য জাতের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। গোছায় চিটা হয় না বললেই চলে। চাল দেখতে অনেকটা বেগুনের বিচির মতো। ভাতের স্বাদও ভালো। বাজারে বেশ দামও পাওয়া যাচ্ছে।

গত বছরের সাফল্যের পর এ বছর ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য দুদু মিয়া বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছেন। জাতের নাম দিয়েছেন ‘দুদুলতা’। এ মৌসুমে ধানটির বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষীরা।

কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের কৃষক মাসুদ হোসেন, সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত সবুজ চাষী ইদ্রিস আলী, শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের সাহেব আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এবার দুদুলতা ধান আবাদ করেছেন। পাশের ক্ষেতে অন্য জাতের ধানের তুলনায় এ ধান বাড়ন্ত দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, নতুন ধানের জাতের উদ্ভাবক কৃষক দুদু মিয়াকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ক্ষেত দেখে মনে হচ্ছে এবারো ফলন গতবারের মতো আশানুরূপ হবে। এ জাতের ধান নিকট ভবিষ্যতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।

এ ব্যাপারে এমদাদুল হক দুদু মিয়া বলেন, এ ধান ঝিনাইদহের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমি এবার এক হাজার কেজি বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। সরেজমিন কৃষকদের ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখেছি। আশা করছি তারাও আমার মতো ফলন পাবেন। অনেক কৃষক এরই মধ্যে অগ্রিম বীজের চাহিদা জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর