ঢাকা ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

নারী শ্রমিকরা রোদে পুড়ে সস্তা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করছেন মাঠে-ঘাটে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৬:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ ২০১৮
  • ৪৩৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘এখন সময় নারীর: উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্মজীবন ধারা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যখন নারীর ক্ষমতায়ন-অধিকার বিষয়ে সভা-সেমিনার-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তখন রংপুরের চরাঞ্চলের নারীরা রোদে পুড়ে সস্তা মজুরিতে মাঠে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, এগিয়ে যাবেই দেশ-স্বপ্নের মতো সুন্দর আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উন্নয়নের এই স্লোগানের সঙ্গে নারীরাও সম্পৃক্ত। তাদের ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব। অথচ ইদানিং বিশেষ করে রংপুরে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। মজুরি প্রদানে বৈষম্য থাকলেও মূলত ঋণের কিস্তি পরিশোধে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তারা সন্তান-সংসারের মায়া ত্যাগ করে মাঠে-ঘাটে শ্রম বিক্রি করছেন।

তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধসহ রংপুরের চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের বাস। এক সময়ের অবস্থাসম্পন্ন এসব পরিবার নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন তিস্তা কূলবর্তী এলাকাগুলোতে। শ্রম বিক্রিই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন।

বছরের বিভিন্ন সময় এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় পরিবার প্রধানরা কাজের সন্ধানে ছুটে যান ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তারপরও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। এ কারণে এক রকম বাধ্য হয়েই নারীরা লাজ-লজ্জা ভুলে শ্রম বিক্রি করছেন মাঠে-ঘাটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তার চরাঞ্চলসহ সর্বত্র এখন চলছে আলু, তামাক, সরিষাসহ রবি ফসল উত্তোলনের মহোৎসব। এসব কাজে নিয়োজিত রয়েছেন নারী শ্রমিকরা। রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলী চরে একসঙ্গে আলু তোলার কাজ করছিলেন প্রায় ৫০ জন নারী শ্রমিক।

এ সময় নিলুফা বেগম, জরিনা বেগম, জশো মাই, আলেমা বেওয়া জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজের বিনিময়ে তারা মজুরি পান মাত্র ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সমপরিমাণ  কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

শংকরদহ চরের জুলেখা, ছুরতন নেছা ও সবজান বেগম জানান, সংসার জীবনে এই প্রথম তারা বাড়ি বাহিরে মাঠে আলু উত্তোলনে শ্রম বিক্রি করছেন। কারণ জানতে চাইলে আঁচলে মুখ লুকিয়ে তারা বলেন, ‘প্রতি সপ্তায় কিস্তির টাকা দেওয়া নাগে। কাম না করলেতো হামার মরণ।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলে এমন কোনো অভাবি পরিবার নেই যারা বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছে ক্ষুদ্র ঋণ নেয়নি। কেউ কেউ একাধিক সংস্থার কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছেন অভাবের কারণে। প্রতি সপ্তাহে ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি জমা দিতে হয় তাদের।

জয়রামওঝা চরের বিউটি বেগম জানান, মেয়ের বিয়ে দিতে ছয় মাস আগে ব্র্যাকের কাছে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওমার কামাইয়ে (স্বামীর আয়ে) কোনোমতে খাওয়া চলে। আর নিজের কামাইয়ে ঋণের কিস্তি দেই।’ জোবেদা খাতুন বলেন, ‘মানুষটাতো (স্বামী) বিদেশোত (ভিন্ন জেলায়) কাম করে। মোকে কাম করি ঋণের কিস্তি দেওয়া নাগে।’ মঙ্গার সময় বাঁচার তাগিদে বেসরকারি সংস্থার কাছে ১৫ হাজার টাকা তিনি ঋণ নিয়েছিলেন।

এলাকার ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানান, বর্তমানে এলাকায় একজন শ্রমিকের মজুরী চলছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর নারী শ্রমিক হলে তার মজুরি দেওয়া হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, চরাঞ্চলের পরিবারগুলো বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ঋণের জালে আটকা পড়েছে। সারা বছরই তাদের সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। মজুরিতে বৈষম্যের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘ঋণের কারণে দিন দিন নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। আর মহাজনরা সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নির্বাচনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানালেন মির্জা ফখরুল

নারী শ্রমিকরা রোদে পুড়ে সস্তা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করছেন মাঠে-ঘাটে

আপডেট টাইম : ১০:৩৬:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘এখন সময় নারীর: উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্মজীবন ধারা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যখন নারীর ক্ষমতায়ন-অধিকার বিষয়ে সভা-সেমিনার-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তখন রংপুরের চরাঞ্চলের নারীরা রোদে পুড়ে সস্তা মজুরিতে মাঠে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, এগিয়ে যাবেই দেশ-স্বপ্নের মতো সুন্দর আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উন্নয়নের এই স্লোগানের সঙ্গে নারীরাও সম্পৃক্ত। তাদের ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব। অথচ ইদানিং বিশেষ করে রংপুরে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। মজুরি প্রদানে বৈষম্য থাকলেও মূলত ঋণের কিস্তি পরিশোধে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তারা সন্তান-সংসারের মায়া ত্যাগ করে মাঠে-ঘাটে শ্রম বিক্রি করছেন।

তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধসহ রংপুরের চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের বাস। এক সময়ের অবস্থাসম্পন্ন এসব পরিবার নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন তিস্তা কূলবর্তী এলাকাগুলোতে। শ্রম বিক্রিই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন।

বছরের বিভিন্ন সময় এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় পরিবার প্রধানরা কাজের সন্ধানে ছুটে যান ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তারপরও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। এ কারণে এক রকম বাধ্য হয়েই নারীরা লাজ-লজ্জা ভুলে শ্রম বিক্রি করছেন মাঠে-ঘাটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তার চরাঞ্চলসহ সর্বত্র এখন চলছে আলু, তামাক, সরিষাসহ রবি ফসল উত্তোলনের মহোৎসব। এসব কাজে নিয়োজিত রয়েছেন নারী শ্রমিকরা। রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলী চরে একসঙ্গে আলু তোলার কাজ করছিলেন প্রায় ৫০ জন নারী শ্রমিক।

এ সময় নিলুফা বেগম, জরিনা বেগম, জশো মাই, আলেমা বেওয়া জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজের বিনিময়ে তারা মজুরি পান মাত্র ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সমপরিমাণ  কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

শংকরদহ চরের জুলেখা, ছুরতন নেছা ও সবজান বেগম জানান, সংসার জীবনে এই প্রথম তারা বাড়ি বাহিরে মাঠে আলু উত্তোলনে শ্রম বিক্রি করছেন। কারণ জানতে চাইলে আঁচলে মুখ লুকিয়ে তারা বলেন, ‘প্রতি সপ্তায় কিস্তির টাকা দেওয়া নাগে। কাম না করলেতো হামার মরণ।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলে এমন কোনো অভাবি পরিবার নেই যারা বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছে ক্ষুদ্র ঋণ নেয়নি। কেউ কেউ একাধিক সংস্থার কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছেন অভাবের কারণে। প্রতি সপ্তাহে ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি জমা দিতে হয় তাদের।

জয়রামওঝা চরের বিউটি বেগম জানান, মেয়ের বিয়ে দিতে ছয় মাস আগে ব্র্যাকের কাছে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওমার কামাইয়ে (স্বামীর আয়ে) কোনোমতে খাওয়া চলে। আর নিজের কামাইয়ে ঋণের কিস্তি দেই।’ জোবেদা খাতুন বলেন, ‘মানুষটাতো (স্বামী) বিদেশোত (ভিন্ন জেলায়) কাম করে। মোকে কাম করি ঋণের কিস্তি দেওয়া নাগে।’ মঙ্গার সময় বাঁচার তাগিদে বেসরকারি সংস্থার কাছে ১৫ হাজার টাকা তিনি ঋণ নিয়েছিলেন।

এলাকার ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানান, বর্তমানে এলাকায় একজন শ্রমিকের মজুরী চলছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর নারী শ্রমিক হলে তার মজুরি দেওয়া হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, চরাঞ্চলের পরিবারগুলো বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ঋণের জালে আটকা পড়েছে। সারা বছরই তাদের সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। মজুরিতে বৈষম্যের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘ঋণের কারণে দিন দিন নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। আর মহাজনরা সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন।