হাওর বার্তা ডেস্কঃ দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছে। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে বোরো ধান রক্ষা, ইঁদুরের উপদ্রব কমানো ও উপকারী পোকার বংশবৃদ্ধির জন্য এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা তাদের ক্ষেতে বিক্ষিপ্তভাবে গাছের ডাল পুতে রাখেন। যার উপর বন্ধু পাখিরা বসে ক্ষতিকর পোকাগুলোকে সহজেই ধরে খেয়ে ফেলতে পারে। এতে করে কীটনাশক প্রয়োগে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয় না। যার কারণে কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ পদ্ধতি।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে উচ্চফলনশীল ৪২০ হেক্টর, হাইব্রিড ৩ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৬০ হেক্টর। স্থানীয় কৃষকদের মতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ইরির আবাদ এখানে অনেক বেশি হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আলম, আলম, খায়রুল আলম মুন্সি, বিশ্বজিৎ দে, কার্তিক চন্দ্র মজুমদার, মমিন ভুঁইয়া, মো. নাছির, নাছির খান জানান- একর প্রতি ক্ষেতে ১০ থেকে ১৫টি গাছের ডাল পুতে দিতে হয়। এ প্রযুক্তি প্রয়োগে পাখি বসার সুবিদা হয়। এতে করে পাখিরা ক্ষতিকর পোকা-মাকড় বিশেষ করে মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকা খেয়ে ফেলে। রাতের বেলা পেঁচা বসে ইঁদুর খায়। উপকারী পোকার বংশবৃদ্ধি ঘটে।যার কারণে ধান ক্ষেতে বালাইনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। জমিতে কীটনাশক ব্যবহার কম হয়। উৎপাদন খরচ কম হয়। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে বিষমুক্ত ফসল তুলতে পারেন।
বুধবার কুতুবা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর ব্লকের আবাদকৃত বোরো ধানের ক্ষেতে কৃষি অফিসার ওমর ফারুক ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতে ওই ব্লকের কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে পার্চিং উৎসব পালন করেন। এ সময় ২৬ জন কৃষক স্ব প্রণোদিত হয়ে তাদের ক্ষেতে ডাল পুঁতে দেয়। কৃষক অহিদ সর্দ্দার, আব্দুল খালেক, সাত্তার শরীফ জানান, ক্ষেতে ডাল পুঁতে দিলে ওই ডালে বিভিন্ন রকমের পাখিরা বসে।তখন পাখিরা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। যার কারণে ক্ষেতে ডিগকাটা (মাজরা), বডা (পাতা মোড়ানো) দমন হয়। বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তারা বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপজেলার কয়েকটি ব্লকঘুরে দেখা যায় এ পদ্ধতির প্রয়োগ।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ওমর ফারুক জানান, পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব সুন্দর একটি পদ্ধতি। তাই এ উপজেলার ২৮টি ব্লকে পার্চিং উৎসব করে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাতে করে কৃষকরা বিষমুক্ত ফসল ঘরে তুলতে পারেন।