ঢাকা ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভিনব প্রতারণা, পাশে থাকছে না বিকাশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩৭৬ বার

“একটি প্রতারিত হবার গল্প বলি, গতকাল বেতন পেয়ে আল্লাদে আটখান হয়ে একটি বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে মোটামুটি বড় অংকের একটি টাকা বোনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠালাম ঈদ উতসবে একটু ঘি ঢালতে। টাকা পৌঁছালো। বাসায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যে বেলায় বোন ফোন দিয়ে বললো তার মোবাইলে একজন ফোন করে বলেছে আপনার অ্যাকউন্টের সব টাকা গায়েব হয়ে গেছে। প্লিজ চেক করেন। সে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে দেখে টাকা আসলেই নেই! (তখনো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ধারী ওই কলার লাইনে)। তারপর সে বললো আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে আরো ৫১০০ টাকা ঢুকান, তাইলে পুরো টাকা একসাথে ফেরত পাবেন! সে ওই ট্র্যাপে পা দিলো এবং যথারীতি সেটাও গায়েব।

আজ সকালে গেলাম মহাখালিতে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে। তারা বললো কিছুই করার নাই।”

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত এ স্ট্যাটাসটি গত জুলাইয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ইন্টারনেট দুনিয়ায়। তবে মোবাইলে টাকা লেনদেনে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা ‘বিকাশ’ এ টাকা চুরির ঘটনা এটাই একমাত্র নয়, বরং অসংখ্যের মধ্যে একটি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘প্রয়োজনে পাশে’ স্লোগান প্রচার করে বিকাশ গ্রাহক আকৃষ্ট করলেও টাকা চুরির পর প্রতিকার চাইতে গেলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্লিপ্ত আচরণ করছে।

ব্র্যাক ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের মানি ইন মোশনের যৌথ উদ্যোগ বিকাশের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। মোবাইলে লেনদেন সেবা প্রদানকারীর প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান গ্রাহক প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। দেশজুড়ে টাকা লেনদেনে বিপ্লব ঘটিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেটি ও কাস্টমার সার্ভিস সুত্র জানা গেছে, গত জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ২৭টি অভিযোগ এসেছে, যার ৮০ শতাংশই বিকাশের বিরুদ্ধে। বিকাশের সক্ষমতার তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এসব অঘটনের সংখ্যাও বাড়ছে।

সুত্র আরও জানিয়েছে, বিকাশে বর্তমানে দৈনিক ৩০ লাখের বেশিবার অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এর সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিকাশের আদলে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইলেও অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। যার কারণে মার্কেট একচেটিয়া দখলে রেখেছে বিকাশ।

স্ট্যাটাস দাতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, তার বোনের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেহাত হলেও কোন টাকা ট্রান্সফারের কোন এসএমএস বা নোটিফিকেশন আসেনি। সাধারণত টাকা জমা বা ট্রান্সফার করলে এ ধরনের বার্তা বিকাশ থেকেই পাঠানো হয়। সে হিসাবে এ টাকা গায়েবের দায় বিকাশের।

তিনি বলেন, তাদের সিস্টেমের ত্রুটির কারণে টাকা চুরি হয়েছে। সে দায় অবশ্যই তাদের। আমার টাকা নিরাপদ রাখতে না পারলে তারা টাকা জমা নেবে কেন? প্রতারণা ঠেকাতে বা বাঁচতে বিকাশের কোনো প্রচারণা আমার চোখে পড়েনি।

তিনি আরও জানান, টাকা ট্রান্সফারের বিষয়ে বিকাশ থেকে দুটি মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়। অভিযোগ জানানোর পরেও অ্যাকাউন্ট দুটি এখনও চালু রেখেছে বিকাশ এবং কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ব্যাপারে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা বিকাশের পক্ষ থেকে লিখিত উত্তরে তোতা পাখির মুখস্থ কথার মতো জানানো হয়, বিকাশ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি নেই। আমরা ভিসা কোম্পানির মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্লাটফর্ম ব্যবহার করছি। যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। গ্রাহকের প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি ও সমাধান প্রদান করি। একজন গ্রাহক বিকাশ সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের নিকট অভিযোগ করলে তা সমাধানে আমাদের ঢাকা সহ সারাদেশে ৮ টি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে। এই কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, ময়মনসিংহ এবং রংপুরে অবস্থিত। এর বাইরেও সারাদেশে আমাদের ৫৩ টি ‘বিকাশ প্লাস’ সেন্টার রয়েছে যেখানে কোন গ্রাহক তার সমস্যা বা অভিযোগ জানাতে পারেন। এছাড়া একজন গ্রাহক বা এজেন্ট আমাদের হেল্পলাইন ‘১৬২৪৭’ কল করেও তার সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে। নিজের একাউন্ট থেকে লেনদেন করা, পিন নম্বর কারও সাথে শেয়ার না করা, যেকোন লেনদেনে পুর্বে একাউন্ট ব্যাল্যান্স চেক করা এই সমস্ত নির্দেশনা মেনে চললে তারা নিজেদের প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ডিজিটাল উপায়ে মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ঢাকাটাইমসকে, আমরা যেমন আপডেট হচ্ছি, চোরেরাও নিজেদের প্রতিনিয়ত আপডেট করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি ও সিস্টেমের উন্নয়ন ঘটাতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অভিনব প্রতারণা, পাশে থাকছে না বিকাশ

আপডেট টাইম : ১১:৩০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

“একটি প্রতারিত হবার গল্প বলি, গতকাল বেতন পেয়ে আল্লাদে আটখান হয়ে একটি বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে মোটামুটি বড় অংকের একটি টাকা বোনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠালাম ঈদ উতসবে একটু ঘি ঢালতে। টাকা পৌঁছালো। বাসায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যে বেলায় বোন ফোন দিয়ে বললো তার মোবাইলে একজন ফোন করে বলেছে আপনার অ্যাকউন্টের সব টাকা গায়েব হয়ে গেছে। প্লিজ চেক করেন। সে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে দেখে টাকা আসলেই নেই! (তখনো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ধারী ওই কলার লাইনে)। তারপর সে বললো আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে আরো ৫১০০ টাকা ঢুকান, তাইলে পুরো টাকা একসাথে ফেরত পাবেন! সে ওই ট্র্যাপে পা দিলো এবং যথারীতি সেটাও গায়েব।

আজ সকালে গেলাম মহাখালিতে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে। তারা বললো কিছুই করার নাই।”

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত এ স্ট্যাটাসটি গত জুলাইয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ইন্টারনেট দুনিয়ায়। তবে মোবাইলে টাকা লেনদেনে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা ‘বিকাশ’ এ টাকা চুরির ঘটনা এটাই একমাত্র নয়, বরং অসংখ্যের মধ্যে একটি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘প্রয়োজনে পাশে’ স্লোগান প্রচার করে বিকাশ গ্রাহক আকৃষ্ট করলেও টাকা চুরির পর প্রতিকার চাইতে গেলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্লিপ্ত আচরণ করছে।

ব্র্যাক ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের মানি ইন মোশনের যৌথ উদ্যোগ বিকাশের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। মোবাইলে লেনদেন সেবা প্রদানকারীর প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান গ্রাহক প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। দেশজুড়ে টাকা লেনদেনে বিপ্লব ঘটিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেটি ও কাস্টমার সার্ভিস সুত্র জানা গেছে, গত জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ২৭টি অভিযোগ এসেছে, যার ৮০ শতাংশই বিকাশের বিরুদ্ধে। বিকাশের সক্ষমতার তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এসব অঘটনের সংখ্যাও বাড়ছে।

সুত্র আরও জানিয়েছে, বিকাশে বর্তমানে দৈনিক ৩০ লাখের বেশিবার অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এর সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিকাশের আদলে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইলেও অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। যার কারণে মার্কেট একচেটিয়া দখলে রেখেছে বিকাশ।

স্ট্যাটাস দাতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, তার বোনের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেহাত হলেও কোন টাকা ট্রান্সফারের কোন এসএমএস বা নোটিফিকেশন আসেনি। সাধারণত টাকা জমা বা ট্রান্সফার করলে এ ধরনের বার্তা বিকাশ থেকেই পাঠানো হয়। সে হিসাবে এ টাকা গায়েবের দায় বিকাশের।

তিনি বলেন, তাদের সিস্টেমের ত্রুটির কারণে টাকা চুরি হয়েছে। সে দায় অবশ্যই তাদের। আমার টাকা নিরাপদ রাখতে না পারলে তারা টাকা জমা নেবে কেন? প্রতারণা ঠেকাতে বা বাঁচতে বিকাশের কোনো প্রচারণা আমার চোখে পড়েনি।

তিনি আরও জানান, টাকা ট্রান্সফারের বিষয়ে বিকাশ থেকে দুটি মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়। অভিযোগ জানানোর পরেও অ্যাকাউন্ট দুটি এখনও চালু রেখেছে বিকাশ এবং কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ব্যাপারে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা বিকাশের পক্ষ থেকে লিখিত উত্তরে তোতা পাখির মুখস্থ কথার মতো জানানো হয়, বিকাশ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি নেই। আমরা ভিসা কোম্পানির মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্লাটফর্ম ব্যবহার করছি। যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। গ্রাহকের প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি ও সমাধান প্রদান করি। একজন গ্রাহক বিকাশ সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের নিকট অভিযোগ করলে তা সমাধানে আমাদের ঢাকা সহ সারাদেশে ৮ টি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে। এই কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, ময়মনসিংহ এবং রংপুরে অবস্থিত। এর বাইরেও সারাদেশে আমাদের ৫৩ টি ‘বিকাশ প্লাস’ সেন্টার রয়েছে যেখানে কোন গ্রাহক তার সমস্যা বা অভিযোগ জানাতে পারেন। এছাড়া একজন গ্রাহক বা এজেন্ট আমাদের হেল্পলাইন ‘১৬২৪৭’ কল করেও তার সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে। নিজের একাউন্ট থেকে লেনদেন করা, পিন নম্বর কারও সাথে শেয়ার না করা, যেকোন লেনদেনে পুর্বে একাউন্ট ব্যাল্যান্স চেক করা এই সমস্ত নির্দেশনা মেনে চললে তারা নিজেদের প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ডিজিটাল উপায়ে মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ঢাকাটাইমসকে, আমরা যেমন আপডেট হচ্ছি, চোরেরাও নিজেদের প্রতিনিয়ত আপডেট করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি ও সিস্টেমের উন্নয়ন ঘটাতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে।