হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পলিমাটি এবং নদীর বুকে অপরিকল্পিত ভাবে নদী শাসনের কারণে খরস্রোতা অভ্যন্তরীণ ২৪টি নদী ভরাট হয়ে নদী যৌবন হারিয়েছে। নদী ভরাট হওয়ায় বিপন্ন করেছে হাওরের মানুষকে।
জেলার বিভিন্ন হাওর ও নদীরপাড়ের বাসিন্দারা বলেছেন, হাওরের অভ্যন্তরীণ খাল এবং এক সময়ের খরস্রোতা নদীর উপর এখন সবজী ও ধানের চাষ করছেন কৃষকরা। ভারী বৃষ্টি কিংবা উজানের ঢল সামাল দিতে পারছে না এসব নদী। নদীর পানি হাওর ডুবাচ্ছে, জনপদের ক্ষতি করছে, মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
হাওরবাসী বলছেন, কেবল সুরমা, কুশিয়ারা এবং মেঘনা খনন করলেই সমস্যা মিটবে না, হাওরের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট নদী এবং খালও খনন করতে হবে।
তাহিরপুরের রক্তি, বৌলাই, যাদুকাটা, পাটলাই, কেন্দুয়া, আতলা ও পাইকরতলা, জামালগঞ্জের আপর বৌলাই, পিয়াইন ও কানাইখালী, ধর্মপাশার ঘুমাই, মনাই, গাছি, সুমেশ্বরী ও কংস, শাল্লার দাড়াইন, ধনু এবং কুশিয়ারা নদীর আজমিরিগঞ্জের পরের অংশ, বিশ্বম্ভরপুরের যাদুকাটা, রূপসা ও ঘটঘটিয়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নাইন্দা ও মরা সুরমা, জগন্নাথপুরের কামারখালী ও নলজুর, দিরাই উপজেলার কালনী ও চামতি, ছাতকের বটের খাল ও ঘানুউরা নদী খনন জরুরি।
বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওর পাড়ের কৃষক রতীশ বর্মণ বললেন, দায়সারা কাজ হলে চলবে না, রক্তি নদী খনন হচ্ছে, কিন্তু পুরোটা হচ্ছে না, এভাবে খনন করে লাভ হবে না।
জামালগঞ্জের পাগনার হাওরপাড়ের ছয়হারার কৃষক কাজল তালুকদার, রাজেন্দ্র তালুকদার ও সুশেন তালুকদার জানালেন, কামারখালী নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় ট্রলার চলেছে, সারা বছর ধানের ব্যাপারীদের ট্রলার এসেছে এই নদী দিয়ে, এখন নদী পারাপার হওয়া যায় পায়ে হেঁটে। কানাইখালী নদী এখন ‘কান্নারকালী’ বলে মন্তব্য করলেন ছয়হারা গ্রামের কৃষক রণদা প্রসাদ তালুকদার।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপাড়ের আস্তমা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, মরা সুরমা ও নাইন্দা নদী খনন হলে দেখার হাওরসহ দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সকল হাওর রক্ষায় কাজে লাগবে।
জামালগঞ্জ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন জানালেন, নদীর উপর বাঁধ দিয়ে মাছ ধরাসহ অপরিকল্পিতভাবে নদী শাসন করেও কোন কোন খরস্রোতা নদীর নাব্যতা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। লক্ষীপুরে নদীর বুকে বাঁধ দেওয়ায় কানাইখালীর ক্ষতি করা হয়েছে।
ধর্মপাশার পাইকুরহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান বললেন, ঘুমাইনদী ২০ কিলোমিটার লম্বা, খনন হচ্ছে ৯ কিলোমিটার, আরও অন্তত ৪ কিলোমিটার খনন না করলে এই খনন কোন কাজে আসবে না। জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, নলজুর ও কামারখালী খনন না হলে আফর বাঁধে একসময় হাওর রক্ষা করা যাবে না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি বললেন, নদী খনন হলে স্থানে স্থানে আফর বাঁধের প্রয়োজন ছিল না, বছর বছর শক্ত মাটি খনন করে, নরম মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়, এই মাটি পানি এলেই পলি হয়ে নদী ভরাট করে। এছাড়া দীর্ঘদিন নদী খনন না হওয়ায় উজানের এবং পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পলিতে সকল অভ্যন্তরীণ নদী ভরাট হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে যে সব নদী দিয়ে বড় বড় ট্রলার চলতো, এই সব নদীর ওপর এখন গরু চড়ানো হয়, ধান ও সবজী চাষ হয়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, হাওরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাল এবং তৎসংলগ্ন নদী খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।