হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেখার হাওর জেলার চারটি উপজেলার খাদ্য ভান্ডার। এ হাওরের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ হচ্ছে উথারিয়া। এ বাঁধের বিভিন্ন অংশে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ক’দিন আগে। ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে কাজ করানো হচ্ছে এ হাওরে। এর একটি অংশ হচ্ছে দিগদাইড় বড়বাইল্যা। আসামপুর সংলগ্ন এ বাঁধের কাজ কে করাচ্ছেন, কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে করানো হচ্ছে তা জানেন না বাঁধের পাশের গ্রামের কৃষকেরাও।
অথচ এ হাওরেই তাদের সকল জমি। তারা জানেন না এখানে কতো টাকার কাজ করানো হচ্ছে বা কাজের পরিমাণই বা কতটুকু। এমনকি এক বাঁধের পার্শবর্তী পিআইসিও জানেন না কে এই বাঁধের তদারকি করছেন। কারা এই বাঁধের পিআইসি তা কেউই জানেন না। এছাড়াও বাঁধের একেবারে নিকট এলাকা থেকে বাঁধে মাটি তুলা হচ্ছে। যা বৃষ্টি এলেই ভেঙ্গে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বাঁধ থেকে ন্যূনতম পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে মাটি আনার কথা থাকলেও তা না করে অনিয়ম করে মেশিন দিয়ে দুই থেকে চার ফুট দূর থেকেই তোলা হচ্ছে। এ জন্য বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমরা কেউই জানি না এই বাঁধের কাজ কে করাচ্ছেন। বাঁধের একেবারে কাছে থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। বৃষ্টি এলেই এই মাটি আবার ধসে জায়গায় চলে যাবে। হাওরে বাঁধ টিকবে না। পানি ঢুকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হচ্ছেন বাঁধ থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল মুলুক ও সাধারণ সম্পাদক একই গ্রামের আলী হোসেন। তারাই এ প্রকল্প পরিচালনা করছেন।
বাঁধের পাশে রোপনকৃত জমি কেটে মাটি আনায় বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন শফিক মিয়া, হাসমত আলী ও মাসুক মিয়া নামের তিন কৃষক। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কৃষক শফিক মিয়া। এদের মাঝে প্রথম দু’জনের জমি ইতোমধ্যে কেটে মাটি আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাঁধের এমন অনিয়ম দেখে বৃহস্পতিবার প্রতিবাধ করেন সাদিকুর রহমান মাসুম নামের এক তরুণ সমাজকর্মী। তিনি জানান, ‘আমরা জানি বাঁধের পাশ থেকে মাটি না আনার জন্য বিধান আছে। কিন্তু এ বাঁধে তা মানা হচ্ছে না। বাঁধের খুব কাছে থেকে মাটি আনা হচ্ছে। আমরা আজ বাঁধের পাশ থেকে মাটি না আনতে নিষেধ করেছি। বলেছি দূর থেকে মাটি আনতে। এ সময় আমার সাথে আসামপুর গ্রামের নূরুল আমীন, শফিক মিয়া, মাসুক মিয়া, হাসমত আলী, আরমুছ আলী ও মোবারক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।’
বাঁধের কাজে পিআইসি সভাপতি ও সেক্রেটারি সুলতানপুরের জানার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আমীন আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘বাঁধের পাশে আসামপুর আর আস্তমায় কোনো মানুষ নাই? চার মাইল দূর থেকে মানুষ এনে পিআইসি দিতে হয় কেনো?’
সাজিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা জানি না বাঁধে কে কাজ করাচ্ছেন। আমরা দেখেছি বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি আনা হচ্ছে। এ বাঁধ বেশি দিন টিকবে না। আমরা প্রতিবাদ করেছি। মাসুক মিয়া বলেন, ‘বাঁধে অনিয়ম হচ্ছে। আমরা কাজের তদারকি করবার জন্য ইউএনও ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে আসার জন্য অনুরোধ করবো।’
শাহ আলম নামের আরেকজন বলেন, ‘বাঁধের পাশ থেকে মাটি আনতে আমরা বাধা দিয়েছি। মাটি দূর থেকে আনতে হবে। কাজের গতি আরো বাড়াতে হবে। বিলবোর্ড বসাতে হবে। এলাকার জনগণকে বাঁধের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলে বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম থাকবে না। আমরা কৃষক, আমরাই আমাদের বাঁধের কাজ পাহারা দেবো।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি বাঁধের দূর থেকে মাটি আনতে। কিন্তু জমির মালিকেরা তা দেননি। তারা বলেন বাহির থেকে মাটি আনতে। তাই বাধ্য হয়েই বাঁধের কাছ থেকে মাটি আনতে হয়েছে।