হাওরাঞ্চলে দৃঢ়রূপ অবস্থানে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি

জাকির হোসাইনঃ কিশোরগঞ্জ জেলার মোট আয়তনের প্রায় ৪০ ভাগ এলাকা কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) অধীনে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ শহরে বসবাসকারী নাগরিকদের ৪০-৫০ ভাগই হাওরবাসীই। ‘হাওরের রাজনীতি কেবল এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, কিশোরগঞ্জ শহরেও বিস্তৃত বেশী।

জেলা সদরের খরমপট্রির এলাকার বাসিন্দা মিঠামইনের ছেলে মনোয়ার হোসাইন রুনি কিছু তথ্য আমাকে বলেন, ‘হাওরের ৫০ ভাগ মানুষ বসবাসের নানা সুবিধা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে কিশোরগঞ্জ বা ঢাকায় থাকেন। হাওরের ভোটের চিত্র ও রাজনীতি উভয় স্থানের বিরাজমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে জানতে হবে।’

সম্ভবত এ কারণেই দুই বারের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তার রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন কিশোরগঞ্জ শহরে খরমপট্রি এলাকায়। তার আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির জেষ্ঠ্য পুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও হাওরাঞ্চলে যাওয়ার এবং ফেরার পথে একদিন করে কিশোরগঞ্জে অবস্থান করেন।

বলা বাহুল্য, কিশোরগঞ্জের রাজনীতি বহুলাংশে হাওর-নির্ভর। জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বও বর্তমানে হাওরের মানুষের হাতে। ফলে হাওরের ভোটের তাপ শুধু জলমগ্ন গ্রামেই নয়; শহরেও পড়েছে আরো বেশি। হাওরের গ্রাম আর শহরের সদর মিলেই চলছে ভোটের আলাপ এবং নেতা-কর্মীদের জনসংযোগ কার্যক্রম।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি বেশিভাগ এলাকাতে সময় কাটান। এলাকায় বেশি থাকায় ও ঘন ঘন আসার কারণে বিভিন্ন অফিসের লোকজন বিনা ছুটিতে আগের মতো কাজে ফাঁকি দিতে পারেন না। তার উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি-অনিয়ম হওয়ার সুযোগ কমেছে।’হাওর
বস্তুত, হাওরাঞ্চলের ভোটের হাওয়া স্পষ্টভাবে বইছে তরুণ তৌফিককে ঘিরে। উন্নয়ন ও জনসংযোগের মাধ্যমে হাওরে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তৌফিকএমপি। ‘অবহেলিত হাওরের রাজনীতিকে তিনি উন্নয়নমুখী করেছেন।’ স্থানীয় কৃষকদের কথাতেও তা জানা গেল।

কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে হাওরাঞ্চলের ভোটের রাজনীতিতে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বেশ স্পষ্ট। এখানে বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচন করার জন্য অধিক প্রার্থীর দৌরাত্ম্য নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীতা নিয়েও কোন্দল বা গ্রুপিং-এর আঁচ পাওয়া যায় না। সরাসরি লড়াই হবে মুখোমুখি দুই প্রার্থীর মধ্যে।

‘হাওরাঞ্চলে একটি বিষয় সন্তর্পণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ভোটের আগে আগে’ একটি বিশেষ ধরনের বিষয়ে আভাস দিলেন সাবেক সরকারী এক কমকর্তা। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি বেশির ভাগ সময় গ্রামেই থাকেন, যদিও কিশোরগঞ্জ শহরে নিজস্ব বাসায় তার পরিবার-পরিজন থাকেন। তার মতে, ‘হাওরের জনসংখ্যা সাধারণভাবে দুইটি ভাগে বিভক্ত। এই বিভাজন সাংস্কৃতিকভাবে দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। একদিকে রয়েছে আবাদী বা বহিরাগত মানুষ আর অন্যদিকে জংলি বা স্থানীয় মানুষ। ভোটের সময় প্রার্থীর ঐতিহ্যগত সূত্র ও পরিচিতি কোন দিকে থাকে, তার ওপর ভোটারদের সমর্থন বা বিরোধিতার একটি প্রভাব কাজ করে।’

‘বিষয়টি একদা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখন মোটেও নয়’, একজন কলেজ ছাত্র ইস্যুটি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘৪০/৫০ বছর আগে এই আদিম ও বর্বর মানসিকতা তীব্রভাবে ছিল। তখন শিক্ষা, দীক্ষা ও সচেতনতা মানুষের মধ্যে কম ছিল। মানুষকে তখন আঞ্চলিকতা বা জাত-পাতের ভিত্তিতে স্বার্থান্বেষী মহল উত্তেজিত করে ভোটের রাজনীতি করত।’

হাওর বার্তার পক্ষ থেকে জানতে চাইলাম, ‘এই ইস্যুটি ভোটের সময় কার্যকর হবে কি না?’ এবং প্রশ্নটি করেছিলাম, হাওরের বাইরে লোক হয়েও হাওরের নানা বিষয়ে কাজ করেন এমন একজন সাংস্কৃতিক-উন্নয়ন সংগঠকের কাছে। ‘না, এটা কোনও সমস্যাই নয়। এখন সব বাসিন্দাই বৃহত্তর হাওর সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে হাওরাঞ্চলের সকল মানুষের অভিন্ন পরিচিতি হলো ‘ভ্যাইট্টা’। অবহেলিত ভাটী অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হাওর পরিচিতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা এখন কার্যকর হবে না। এমন আত্মঘাতী চিন্তা সুবিধাবাদী ও প্রাচীনপন্থিরা করলেও শিক্ষিত-তরুণ-যুবকরা করে না।’ বললেন হাওরের জীব-প্রাণি বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতা নিয়ে কার্মরত অ্যাক্টিভিস্ট ও গবেষক সারাফ নাওয়ার। মূলত চট্টগ্রামের বাসিন্দা হলেও সারাফ নাওয়ারের কর্মক্ষেত্র বৃহত্তর হাওরের সুনামগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পর্যন্ত। ‘প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অপার সৌন্দর্য ও সম্ভাবনার জনপদের দুর্ভাগ্য ও অবহেলা মোচন করে উন্নয়ন-অগ্রগতির নবযুগের সূচনা করতে মানুষ একজন ‘শক্তিশালী ভ্যাইট্টা নেতা’কেই চাইবেন আগামী নির্বাচনে।’ বললেন তিনি, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বার বার বিপদাক্রান্ত হয়ে হাওরবাসী বিভেদ নয়, ঐক্য-অগ্রসরতা-সমৃদ্ধিকেই গুরুত্ব দেবেন বলে আমার ধারণা।’

উন্নয়ন যে হাওরের সর্বত্র একটি বহুল প্রত্যাশিত বিষয় এবং সামনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে, সেটা প্রায়-সবাই স্বীকার করেন। ‘নির্বাচনের লড়াইটা হবে উন্নয়ন ও রাজনীতির’, উল্লেখ করে ইটনা সমিতির একজন সদস্য মন্তব্য করেন, ‘তৌফিক উন্নয়ন-অগ্রগতির দিক থেকে নানা কাজের মাধ্যমে এগিয়ে আছেন।

রাজনীতিতে তৌফিককে পেছনে ফেলে দেওয়া মোটেও সম্ভব হবে বলে মনে করেন না অভিজ্ঞজনেরা। হাওরাঞ্চলের অধিবাসী একজন বয়োজ্যেষ্ঠ-প্রবীণ আইনজীবী হাওর বার্তাকে বলেন, ‘একাধিক বার যে আসন থেকে পিতা নির্বাচিত হয়েছেন, তৌফিক নিজেও সেখানে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। পিতার ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা এবং নিজের তারুণ্যময় গতিশীলতার মিশেলে তিনি এলাকার রাজনীতিক কার্যক্রম যোগ্যতার সঙ্গেই চালাচ্ছেন এবং নবীনে-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল কমিটি ও নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটিয়ে তিনি হাওরাঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম কাণ্ডারিতে পরিণত হয়েছেন। মানুষের কাছে তিনি পিতার যোগ্য উত্তরাধিকার রূপে সমাদৃত।’

একজন প্রকৌশলী হলেও রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক শুধু নিজের এলাকাতেই নন, জেলার রাজনীতিতে প্রবলভাবে আবির্ভূত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসাবে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ ও সমর্থন লাভ করেছিলেন। একদার সাংবাদিক ও কিশোরগঞ্জের অধুনালুপ্ত একটি দৈনিকের অন্যতম সম্পাদক প্রকৌশলী তৌফিক কিশোরগঞ্জে আধুনিক স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের অন্যতম রূপকার ও উদ্যোক্তা। স্বচ্ছ ইমেজ, ভালো ব্যবহার, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শৈল্পিক মননের জন্য হাওরের জনগণের মধ্যে উন্নয়নমুখী এই ‘শক্তিশালী ভ্যাইট্টা নেতা’র আবেদন দিনে দিনে বাড়ছে। ‘মানুষের কাছে তার ক্রমবর্ধমান দৃঢ় অবস্থান টলানো খুব সহজ হবে না’, বলে মন্তব্য করে হাওরাঞ্চলের সকল মানুষ, ‘পরিকল্পিত কাজের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক ধরে রাখতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে তিনি পিতার মতোই বিকল্পহীন নেতায় পরিণত হবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর