ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হালতিবিলে খালে বাঁধ এক হাজার হেক্টর জমিতে এখনো বোরো চারা লাগাতে পারেননি কৃষকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৩৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বোরো ধান রোপণের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতিবিলে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে এখনো বোরো চারা লাগাতে পারেননি কৃষকরা। কারণ, বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি দখল করে বাঁধ দেওয়ায় বিলটির জমি তলিয়ে আছে। পানি নামলেই সেখানে বোরো চারা লাগানো যাবে। চাষে এই অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছে হালতিবিলের আটটি গ্রামের শত শত কৃষক।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, দুই বছর আগে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দুই মৌসুমে খাল সংস্কার করে বিলের জলাবদ্ধতা দূর করে। এরপর বোরো চাষ করেন কৃষকরা; কিন্তু চলতি মৌসুমে  জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়া ২০ কিলোমিটার খাল উদ্ধার করে সংস্কার না করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

গত বন্যায় ৯৩০ হেক্টর জমির আমন ধান ডুবে ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয় হালতিবিলের কৃষকদের। বোরো মৌসুমের শুরুতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বীজতলা নষ্ট এবং জলাবদ্ধতার কারণে চারা লাগাতে না পারায় আবারও বিপাকে পড়তে যাচ্ছে এই এলাকার কৃষকরা।

চিন্তিত কৃষক ও এলাকাবাসী জানায়, ১৯৮১ সালে নলডাঙ্গার হালতিবিলের ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের ইয়ারপুর থেকে মোহনপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি খাল খনন করা হয়েছিল। এই খাল দিয়েই হালতিবিলের পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছিল; কিন্তু পরে সংস্কারের অভাবে ও খালটি প্রভাবশালীরা দখল করে নিলে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গত চারটি মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বোরো ধান লাগাতে হোঁচট খেতে হচ্ছে কৃষকদের।

সূত্র মতে, প্রতিবছর এই সময় জলাবদ্ধতা নিরসন করা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না ধান চাষিদের। হালতিবিলের খোলাবাড়িয়া গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি অবৈধভাবে ভরাট করে দখল এবং পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে মাছ শিকার করায় জলাবদ্ধতার স্থায়িত্ব বেড়ে গেছে। এতে উপজেলার বাঁশিলা, সোনাপাতিল, তেঘরিয়া, মাধনগর, হালতি, পাটুলসহ আটটি গ্রামের শত শত কৃষক প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন কি না সংশয় আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কৃষি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে প্রতিকার চেয়েও না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

হালতিবিলের তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর, সিদ্দিকুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম বলেন, ‘খালটি অবৈধ দখল করে কোথাও কোথাও ভরাট করায় হালতিবিলের নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ফলে আমরা সময়মতো ধান রোপণ করতে পারি না। আর বোরো ধান বিলম্বে রোপণ করলে ফলন বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে।’

তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক ফরমাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মসলেম উদ্দিন জানান, দুই বছর আগে কৃষকদের ও গত বছর প্রশাসনের উদ্যোগে খালটি সংস্কার করে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদ করা হয়েছিল; কিন্তু এবার খালটি দখল করে বাঁধ দিয়ে ও ভরাট করে মাছ শিকার করায় পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। ফলে এবার তাঁরা বোরো ধান লাগাতে পারবেন কি না নিশ্চিত হতে পারছেন না।

হালতিবিলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য কৃষিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন কৃষক মোজ্জামেল হক ও গফুর মণ্ডল।

নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর হালতিবিলের কৃষকদের দেরিতে বোরো ধান লাগাতে হয়। এ কারণে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারে না কৃষকরা। আমরা এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য স্থানীয় পাউবোকে একাধিকবার বলেছি। তারা কোনো প্রকল্প না নেওয়ায় সমস্যাটা প্রকট হয়েছে।’

নলডাঙ্গার ইউএনও মোহাম্মাদ রেজা হাসান জানান, হালতিবিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাউবোকে খালটি সংস্কার করতে বলা হয়েছে; কিন্তু তারা করতে পারেনি।

তবে নাটোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, হালতিবিলের খাল সংস্কার, নদী খননসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৪৪৭ কোটি টাকার ‘হালতিবিল সমন্বিত পানি ব্যবস্থা ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের কৃষকদের ওই সংকট থাকবে না।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হালতিবিলে খালে বাঁধ এক হাজার হেক্টর জমিতে এখনো বোরো চারা লাগাতে পারেননি কৃষকরা

আপডেট টাইম : ১০:২১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বোরো ধান রোপণের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতিবিলে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে এখনো বোরো চারা লাগাতে পারেননি কৃষকরা। কারণ, বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি দখল করে বাঁধ দেওয়ায় বিলটির জমি তলিয়ে আছে। পানি নামলেই সেখানে বোরো চারা লাগানো যাবে। চাষে এই অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছে হালতিবিলের আটটি গ্রামের শত শত কৃষক।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, দুই বছর আগে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দুই মৌসুমে খাল সংস্কার করে বিলের জলাবদ্ধতা দূর করে। এরপর বোরো চাষ করেন কৃষকরা; কিন্তু চলতি মৌসুমে  জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়া ২০ কিলোমিটার খাল উদ্ধার করে সংস্কার না করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

গত বন্যায় ৯৩০ হেক্টর জমির আমন ধান ডুবে ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয় হালতিবিলের কৃষকদের। বোরো মৌসুমের শুরুতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বীজতলা নষ্ট এবং জলাবদ্ধতার কারণে চারা লাগাতে না পারায় আবারও বিপাকে পড়তে যাচ্ছে এই এলাকার কৃষকরা।

চিন্তিত কৃষক ও এলাকাবাসী জানায়, ১৯৮১ সালে নলডাঙ্গার হালতিবিলের ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের ইয়ারপুর থেকে মোহনপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি খাল খনন করা হয়েছিল। এই খাল দিয়েই হালতিবিলের পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছিল; কিন্তু পরে সংস্কারের অভাবে ও খালটি প্রভাবশালীরা দখল করে নিলে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গত চারটি মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বোরো ধান লাগাতে হোঁচট খেতে হচ্ছে কৃষকদের।

সূত্র মতে, প্রতিবছর এই সময় জলাবদ্ধতা নিরসন করা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না ধান চাষিদের। হালতিবিলের খোলাবাড়িয়া গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি অবৈধভাবে ভরাট করে দখল এবং পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে মাছ শিকার করায় জলাবদ্ধতার স্থায়িত্ব বেড়ে গেছে। এতে উপজেলার বাঁশিলা, সোনাপাতিল, তেঘরিয়া, মাধনগর, হালতি, পাটুলসহ আটটি গ্রামের শত শত কৃষক প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন কি না সংশয় আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কৃষি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে প্রতিকার চেয়েও না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

হালতিবিলের তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর, সিদ্দিকুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম বলেন, ‘খালটি অবৈধ দখল করে কোথাও কোথাও ভরাট করায় হালতিবিলের নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ফলে আমরা সময়মতো ধান রোপণ করতে পারি না। আর বোরো ধান বিলম্বে রোপণ করলে ফলন বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে।’

তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক ফরমাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মসলেম উদ্দিন জানান, দুই বছর আগে কৃষকদের ও গত বছর প্রশাসনের উদ্যোগে খালটি সংস্কার করে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদ করা হয়েছিল; কিন্তু এবার খালটি দখল করে বাঁধ দিয়ে ও ভরাট করে মাছ শিকার করায় পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। ফলে এবার তাঁরা বোরো ধান লাগাতে পারবেন কি না নিশ্চিত হতে পারছেন না।

হালতিবিলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য কৃষিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন কৃষক মোজ্জামেল হক ও গফুর মণ্ডল।

নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর হালতিবিলের কৃষকদের দেরিতে বোরো ধান লাগাতে হয়। এ কারণে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারে না কৃষকরা। আমরা এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য স্থানীয় পাউবোকে একাধিকবার বলেছি। তারা কোনো প্রকল্প না নেওয়ায় সমস্যাটা প্রকট হয়েছে।’

নলডাঙ্গার ইউএনও মোহাম্মাদ রেজা হাসান জানান, হালতিবিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাউবোকে খালটি সংস্কার করতে বলা হয়েছে; কিন্তু তারা করতে পারেনি।

তবে নাটোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, হালতিবিলের খাল সংস্কার, নদী খননসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৪৪৭ কোটি টাকার ‘হালতিবিল সমন্বিত পানি ব্যবস্থা ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের কৃষকদের ওই সংকট থাকবে না।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ