হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুষ্টিয়ায় বেগুন আবাদে কীটনাশক ছেড়ে চাষিরা পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। এ পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যবান্ধন বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনের পাশাপাশি চাষাবাদের খরচ অনেক কম হয় বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার বটতৈল ভাদালিয়াপাড়া এলাকার কৃষক হাসেম আলী। প্রায় এক বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন উন্নতজাতের বেগুন। তিনি আগে বেগুনের খেতের ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য প্রতিদিন সকাল-বিকাল কীটনাশক স্প্রে করলেও এখন কীটনাশক ছেড়ে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতিতে বেগুন আবাদ করছেন। এ পদ্ধতিতে বেগুনের খেতকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। বেগুন গাছের মরা ডগা ও পাতা তুলে তা খেতের বাইরে ফেলে দিতে হয়। পাশাপাশি পাখির আক্রমণ ঠেকাতে নেট ও পোকা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফরমোন ফাঁদ।
কৃষক হাসেম আলী জানান, আগে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে প্রতি সপ্তাহে বেগুনক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে হতো। এতে বেগুন বিক্রির টাকার একটি অংশ ব্যয় হয়ে যেত। তবে কীটনাশক ছিটানোর পরও পোকার আক্রমণ থেকে পুরোপুরি নিস্তার মিলত না। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বেগুনক্ষেতে পোকা মারার ফাঁদ সেক্স ফরমোন পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি বেগুনক্ষেত সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখেন। এতে তার বেগুনক্ষেতে পোকার আক্রমণ এখন আর নেই বলেই চলে। এতে একদিকে যেমন তিনি খেতে উৎপাদিত সুস্থ-সবল বেগুন ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন, তেমনি কীটনাশক কেনার খরচ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে হাসেম আলীর দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে বেগুন চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে বেগুন চাষে খরচ আগের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা কম লাগছে বলে জানান কৃষক। ওই এলাকার কৃষক জাফর বলেন, খেতে সেক্স ফরমোন পদ্ধতির ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কমে এসেছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ আরও জনপ্রিয় করে তুলতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষককে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে উৎসাহিত করছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাশাপাশি কয়েক বছরের মধ্যে পুরো জেলায় নতুন এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, উপজেলায় এ বছর ৩৬০ হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ হয়েছে। বেশিরভাগ বেগুনক্ষেতে সেক্স ফরমোন পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। তিনি বলেন, সবজি খেতে পোকা দমন যেসব কীটনাশক ব্যবহার হয়, তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে তারা কৃষককে কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান্ধন সবজি চাষে কাজ করছেন। এ ব্যাপারে কৃষকের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।