হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝিনাইদহে হরি ধানের পর এবার তুমুল আলোচনায় এসেছে সুবোল লতা ধান। সুবোল লতা আসলে কোনো স্বীকৃতি প্রাপ্ত ধানের নাম নয়।
ঝিনাইদহের নিরক্ষর কৃষক হরিপদ কাপালী যেমন ইরিধান থেকে হরি ধানের উদ্ভাবক, তেমন কাজল লতা ধান থেকে সুবোল লতা ধানের উদ্ভাবক হলেন সুবোল বিশ্বাস। তাই কৃষি বিভাগ ও এলাকার কৃষকরা ধানের নাম রেখেছেন সুবোল লতা।
সুবোল বিশ্বাসের বাড়িও হরিপদ কাপালীর আসাননগর গ্রামে। সত্তর বছরের বৃদ্ধ সুবোল বিশ্বাসের বাবা মৃত কিরণ বিশ্বাস। হরিপদ ও সুবোল সম্পর্কে ভাইরা ভাই। একই উঠোন তাদের। ভাইরা ভাই হরিপদ কাপালীর দেখাদেখি সেও এই নতুন জাত আবিষ্কারে প্রলুব্ধ হয়।
উদ্ভাবক সুবোল বিশ্বাসের ভাষ্যমতে, ধানের জাত নির্বাচনের সেই কাহিনি হরিপদ কাপালীর মতোই। ২০০৬ সালে কাজল লতা ধানক্ষেতের মধ্য থেকে ব্যতিক্রম কিছু ধানগাছ নিয়ে বীজ তৈরির কাজ করেন জাত কৃষক সুবোল বিশ্বাস। দুই বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ সাল থেকে নিজ জমিতে আবাদ শুরু করেন তিনি। দৃশ্যমান আবাদের প্রথম বছর এলাকার কৃষকদের নজর কাড়ে।
এরপর কয়েক বছরের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সুবোল লতা ধান। উদ্ভাবনের ১১ বছর পার হলেও কৃষকদের কাছে সুবোল লতা ধানের কদর কমেনি। বরং দিনকে দিন কোনো না কোনো জেলায় এ ধানের আবাদ বাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মনিরুজ্জামানের মতে, ২৮ ধানের মতোই সুবোল লতা ধানের পারফরমেন্স। আবাদে সার ও ওষুধ কম লাগে। ঝিনাইদহ ছাড়াও দেশের বগুড়া, দিনাজপুর, ফরিদপুর ও মাগুরা জেলায় সুবোল লতা ধানের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজারের মিলগুলোতে সুবোল লতা ধান থেকে উৎপাদিত চালের প্যাকেটে সুবোল লতা কথাটি শোভা পাচ্ছে।
সুবোল বিশ্বাসের মতে, ইরি আবাদ মৌসুমে এ ধানের ফলন বেশি হয়। সবোর্চ্চ ২৮ মণ করে ফলে ৩৩ শতকের বিঘায়। আর আমনে ফলন কম হয়।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী উদ্যোন কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ২০১২-১৩ আবাদ মৌসুমে জেলায় সুবোল লতা ধান ১৬ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিলো। ২০১৪ সালে আবাদ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১৬ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে সুবোল লতা ধানের চাষ হয়।
হরিপদ কাপালীর মতো সুবোল বিশ্বাসেরও কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। তার অভিব্যক্তি, তিনি চান তার উদ্ভাবিত ধান স্বীকৃতি পাক। পত্রিকা ও টেলিভিশনে তাকে নিয়ে খবর প্রচারিত হোক। এটাই চান বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া সাধুহাটী ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের সুবোল বিশ্বাস।