ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছে চাষিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৪৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রকলি চাষ করে সুদিন ফিরিয়েছেন যশোরের মণিরামপুরের অনেক কৃষক। এক সময়ে অচেনা থাকা এই সবজিটি এখন এখানের সাধারণ মানুষের কাছে খুবই চেনা।

ফুলকপির মতো দেখতে গাঢ় সবুজ রংয়ের শীতকালীন এই ফসলটি মনিরামপুরের আনাচে-কানাচেও দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয়,  ব্রকলি পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি । এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।  এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। পুষ্টবিদদের মতে, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখে ব্রকলি বেশ কার্যকরী সবজি। এসব তথ্য বিশ্বাস করেন মনিরামপুরের চাষিরাও। তাদেরকে এসব নিয়ে পরামর্শ দিতেও দেখা যায়।

মণিরামপুরে এখন ব্যাপক চাষ হচ্ছে ব্রকলির। বাণিজ্যিকভাবে ব্রকলি চাষ করে সফল হচ্ছেন মণিরামপুরের চাষিরা। এতে নতুন করে অনেকেই ফসলটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে এখানে ব্রকলি চাষের পরিধি বেড়েই চলেছে।

সরেজমিন উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের পলাশী গ্রামে গেলে দেখা যায়  ব্রকলির অনেক খেত। জানা যায়, বছর তিনেক আগে ওই গ্রামের সৌখিন চাষি প্রদীপ বিশ্বাস সর্ব প্রথম চাষ শুরু করেন ব্রকলি’র। প্রথম বছরেই সফল হন। এরপর থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে তার ব্রকলি চাষের পরিধি। এবারও প্রায় আড়াই হাজার ব্রকলির চারা রোপণ করেছেন তিনি। এবার ভাল ফলন হয়েছে। তার দেখাদেখি ওই এলাকার শুকুমার মন্ডল, রতন বিশ্বাস, তাপস মন্ডল, মিজানুর রহমান, শ্রীনিবাস বিশ্বাসসহ অনেকেইে এখন ব্রকলি চাষি।এখানে প্রায় এক একর জমিতে ব্রকলি’র আবাদ হয়েছে।

আলাপকালে ব্রকলি চাষি প্রদীপ বিশ্বাস জানান, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার পরামর্শে শুরু করেন ব্রকলি চাষ। প্রথমে তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে অক্টোবর মাসে বীজ তলায় ছিটিয়ে চারা তৈরি করেন। এরপর চারা রোপণ করেন মূল আবাদি জমিতে। পরবর্তী বছরে স্থানীয় কৃষি দপ্তরের সহায়তায় আরো উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করে  চাষ করেন ব্রকলির। এবারও সফল তিনি। তার দেখাদেখি গ্রামের অন্যান্য চাষিরা তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে ব্রকলি চাষ শুরু করেন। চারা তৈরি করে তিনি কৃষি অফিসের মাধ্যমে বাইরেও বিক্রি করেছেন বলে জানান।

চাষি মিজানুর রহমান জানান, ব্রকলির বাজার দর বেশ ভালো। ফুলকপির মতো একই ফসল হওয়ার পরও ফুলকপির চেয়ে প্রায় তিনগুন দামে তা বাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে। পক্ষান্তরে ব্রকলি অনেকটা রোগ সহিষ্ণু হওয়ায় ফুলকপির চেয়ে তুলনামূলকভাবে উৎপাদন খরচ কম।

চাষি রতন বিশ্বাস জানান, তার প্রায় সব গাছেই ফুল এসেছে। শহরের কয়েকটি সুপার শপ থেকে অগ্রিম অর্ডার করে রাখা হয়েছে ব্রকলির।

ব্রকলি খেতে দেখা মেলে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুহিন কুমার বিশ্বাসের । তিনি জানান, আর্লি গ্রিন জাতের ব্রকলির বীজ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজতলায় বপন করা হয়। পরে নভেম্বরের শুরুতে তা মূল খেতে রোপণ করা হয় । বীজ বপন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এতে ফুল আসে।

তিনি জানান, এ অঞ্চলে সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত পদ্ধতিতে ব্রকলি চাষ করা হচ্ছে। ব্রকলির জমিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা হচ্ছে।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, মেধা বিকাশ, চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রন, রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি ব্রকলি অর্থনৈতিক লাভজনক ফসল। এ উপজেলার প্রায় সব এলাকার মাটি ব্রকলি চাষের উপযোগী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছে চাষিরা

আপডেট টাইম : ০৪:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রকলি চাষ করে সুদিন ফিরিয়েছেন যশোরের মণিরামপুরের অনেক কৃষক। এক সময়ে অচেনা থাকা এই সবজিটি এখন এখানের সাধারণ মানুষের কাছে খুবই চেনা।

ফুলকপির মতো দেখতে গাঢ় সবুজ রংয়ের শীতকালীন এই ফসলটি মনিরামপুরের আনাচে-কানাচেও দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয়,  ব্রকলি পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি । এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।  এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। পুষ্টবিদদের মতে, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখে ব্রকলি বেশ কার্যকরী সবজি। এসব তথ্য বিশ্বাস করেন মনিরামপুরের চাষিরাও। তাদেরকে এসব নিয়ে পরামর্শ দিতেও দেখা যায়।

মণিরামপুরে এখন ব্যাপক চাষ হচ্ছে ব্রকলির। বাণিজ্যিকভাবে ব্রকলি চাষ করে সফল হচ্ছেন মণিরামপুরের চাষিরা। এতে নতুন করে অনেকেই ফসলটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে এখানে ব্রকলি চাষের পরিধি বেড়েই চলেছে।

সরেজমিন উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের পলাশী গ্রামে গেলে দেখা যায়  ব্রকলির অনেক খেত। জানা যায়, বছর তিনেক আগে ওই গ্রামের সৌখিন চাষি প্রদীপ বিশ্বাস সর্ব প্রথম চাষ শুরু করেন ব্রকলি’র। প্রথম বছরেই সফল হন। এরপর থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে তার ব্রকলি চাষের পরিধি। এবারও প্রায় আড়াই হাজার ব্রকলির চারা রোপণ করেছেন তিনি। এবার ভাল ফলন হয়েছে। তার দেখাদেখি ওই এলাকার শুকুমার মন্ডল, রতন বিশ্বাস, তাপস মন্ডল, মিজানুর রহমান, শ্রীনিবাস বিশ্বাসসহ অনেকেইে এখন ব্রকলি চাষি।এখানে প্রায় এক একর জমিতে ব্রকলি’র আবাদ হয়েছে।

আলাপকালে ব্রকলি চাষি প্রদীপ বিশ্বাস জানান, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার পরামর্শে শুরু করেন ব্রকলি চাষ। প্রথমে তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে অক্টোবর মাসে বীজ তলায় ছিটিয়ে চারা তৈরি করেন। এরপর চারা রোপণ করেন মূল আবাদি জমিতে। পরবর্তী বছরে স্থানীয় কৃষি দপ্তরের সহায়তায় আরো উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করে  চাষ করেন ব্রকলির। এবারও সফল তিনি। তার দেখাদেখি গ্রামের অন্যান্য চাষিরা তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে ব্রকলি চাষ শুরু করেন। চারা তৈরি করে তিনি কৃষি অফিসের মাধ্যমে বাইরেও বিক্রি করেছেন বলে জানান।

চাষি মিজানুর রহমান জানান, ব্রকলির বাজার দর বেশ ভালো। ফুলকপির মতো একই ফসল হওয়ার পরও ফুলকপির চেয়ে প্রায় তিনগুন দামে তা বাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে। পক্ষান্তরে ব্রকলি অনেকটা রোগ সহিষ্ণু হওয়ায় ফুলকপির চেয়ে তুলনামূলকভাবে উৎপাদন খরচ কম।

চাষি রতন বিশ্বাস জানান, তার প্রায় সব গাছেই ফুল এসেছে। শহরের কয়েকটি সুপার শপ থেকে অগ্রিম অর্ডার করে রাখা হয়েছে ব্রকলির।

ব্রকলি খেতে দেখা মেলে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুহিন কুমার বিশ্বাসের । তিনি জানান, আর্লি গ্রিন জাতের ব্রকলির বীজ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজতলায় বপন করা হয়। পরে নভেম্বরের শুরুতে তা মূল খেতে রোপণ করা হয় । বীজ বপন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এতে ফুল আসে।

তিনি জানান, এ অঞ্চলে সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত পদ্ধতিতে ব্রকলি চাষ করা হচ্ছে। ব্রকলির জমিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা হচ্ছে।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, মেধা বিকাশ, চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রন, রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি ব্রকলি অর্থনৈতিক লাভজনক ফসল। এ উপজেলার প্রায় সব এলাকার মাটি ব্রকলি চাষের উপযোগী।