ঢাকা ১২:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও ঘোড়ার গাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮
  • ১৫৩৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও ঘোড়ার গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরু ও ঘোড়ার গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। যা একসময় জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এই বাহনগুলো ছিল অপরিহার্য। গাড়িয়ালরা গাড়ি চালানোর সময় আনন্দে গাইতো “ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে। এখন আর চাইয়া থাকলেও একটি গরুর ও ঘোড়ার গাড়িও চোখে পড়েবে না। এখন আর গানও গায়না গাড়িয়ালরা।

জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার গাড়িয়ালরা জানান, বিয়ে এবং অন্য কোন উৎসবে গরুর গাড়ি অথবা ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া বিয়েই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। কিন্তু আধুনিক এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি। হাতে গোনা দু-একটা গ্রামে গাড়ি দেখা গেলেও  তা জরাজীর্ণ অবস্থা। এছাড়া আজকাল চোখেই পড়ে না এই গাড়িগুলো।

আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরে থাক গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি এই যানবাহনের সাথে খুব একটা পরিচিত না। আগে অনেকেরই এই গাড়িগুলো ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার সাতপাকিয়া গ্রামের জয়নাল গাড়িয়ালের সাথে কথা হয় গরুর গাড়ি নিয়ে।  তিনি বলেন, পাট,সরিষা আর গরুর গাড়ি এই নিয়ে সরিষাবাড়ী। তবে সরিষাবাড়ীতে গরুর গাড়ির প্রচলন এখন নেই বললেই চলে। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যেতে বসেছে।  আগে আমার বাপ-দাদারা এই গাড়ি চালিয়ে আমাদের সংসার চালাতো। কিন্তু এখন গরুর গাড়ি চলেনা। তাই অটো ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি।

জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা শুলাকুড়ি পাহাড়ের ঘোড়ার গাড়িয়াল মাজম আলীর সাথে কথা হয় ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। তিনি বলেন, আগে আমার বংশ পরম্পরায় ছিল ঘোড়া পালন ও ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা। তারপরও বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন, পাহাড়ী কাঠ বহন, মধুপুরের আনারস বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করে অনেক টাকা উপার্জন করতো। কিন্তু এখন প্রায় এসব গাড়ি বিলুপ্তির পথে। দু-একটা গ্রামে ১-২টা ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়, তাছাড়া তো চোখেই পড়ে না ঘোড়ার গাড়ি।

এখন আমার বাড়িতে দুই জোড়া ঘোড়া আছে। আমি ও আমার ভাই এই দুই গাড়ি দিয়ে অল্প অল্প করে মালামাল বহন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি।

যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্তির পথে। বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্যগুলোকে আমাদের ধরে রাখতে এই বাহনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার গরু ও ঘোড়ার গাড়িয়াল কেনা মিয়া বলেন, আগে যে কোন উৎসবে ও গ্রামের বউ-ঝিদের নাইওর যেতে গরু অথবা ঘোড়ার গাড়ি ছিল অপরিহার্য। কিন্তু এই আধুনিক যুগে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। আার বাপ-দাদারাও গাড়িয়াল ছিল তখন গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার ঘাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার গরু ও ঘোড়ার গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও ঘোড়ার গাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও ঘোড়ার গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরু ও ঘোড়ার গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। যা একসময় জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এই বাহনগুলো ছিল অপরিহার্য। গাড়িয়ালরা গাড়ি চালানোর সময় আনন্দে গাইতো “ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে। এখন আর চাইয়া থাকলেও একটি গরুর ও ঘোড়ার গাড়িও চোখে পড়েবে না। এখন আর গানও গায়না গাড়িয়ালরা।

জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার গাড়িয়ালরা জানান, বিয়ে এবং অন্য কোন উৎসবে গরুর গাড়ি অথবা ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া বিয়েই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। কিন্তু আধুনিক এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি। হাতে গোনা দু-একটা গ্রামে গাড়ি দেখা গেলেও  তা জরাজীর্ণ অবস্থা। এছাড়া আজকাল চোখেই পড়ে না এই গাড়িগুলো।

আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরে থাক গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি এই যানবাহনের সাথে খুব একটা পরিচিত না। আগে অনেকেরই এই গাড়িগুলো ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার সাতপাকিয়া গ্রামের জয়নাল গাড়িয়ালের সাথে কথা হয় গরুর গাড়ি নিয়ে।  তিনি বলেন, পাট,সরিষা আর গরুর গাড়ি এই নিয়ে সরিষাবাড়ী। তবে সরিষাবাড়ীতে গরুর গাড়ির প্রচলন এখন নেই বললেই চলে। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যেতে বসেছে।  আগে আমার বাপ-দাদারা এই গাড়ি চালিয়ে আমাদের সংসার চালাতো। কিন্তু এখন গরুর গাড়ি চলেনা। তাই অটো ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি।

জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা শুলাকুড়ি পাহাড়ের ঘোড়ার গাড়িয়াল মাজম আলীর সাথে কথা হয় ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। তিনি বলেন, আগে আমার বংশ পরম্পরায় ছিল ঘোড়া পালন ও ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা। তারপরও বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন, পাহাড়ী কাঠ বহন, মধুপুরের আনারস বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করে অনেক টাকা উপার্জন করতো। কিন্তু এখন প্রায় এসব গাড়ি বিলুপ্তির পথে। দু-একটা গ্রামে ১-২টা ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়, তাছাড়া তো চোখেই পড়ে না ঘোড়ার গাড়ি।

এখন আমার বাড়িতে দুই জোড়া ঘোড়া আছে। আমি ও আমার ভাই এই দুই গাড়ি দিয়ে অল্প অল্প করে মালামাল বহন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি।

যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্তির পথে। বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্যগুলোকে আমাদের ধরে রাখতে এই বাহনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার গরু ও ঘোড়ার গাড়িয়াল কেনা মিয়া বলেন, আগে যে কোন উৎসবে ও গ্রামের বউ-ঝিদের নাইওর যেতে গরু অথবা ঘোড়ার গাড়ি ছিল অপরিহার্য। কিন্তু এই আধুনিক যুগে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। আার বাপ-দাদারাও গাড়িয়াল ছিল তখন গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার ঘাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার গরু ও ঘোড়ার গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও।