ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতকালীন সবজি চাষের স্বনির্ভর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরে চলতি বছর শীতকালীন সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে। বিভাগের আট জেলায় প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিকটন সবজি। নদীভাঙন কবলিত ভূমিহীনরা বালুচরে নতুন উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া, স্কোয়াশসহ সাথী ফসল চাষ করে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন।

শীতকালে রবি ফসল হিসেবে মাত্র তিন থেকে চার মাসে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় দেশব্যাপী এর সম্ভবনা বেড়েছে। ২০ হাজার ভূমিহীন পরিবার তিস্তায় জেগে ওঠা অব্যবহৃত বালুচরে চার হাজার হেক্টর জমিতে ৮০ কোটি টাকার এক লাখ পাঁচ  হাজার মেট্রিকটন মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশসহ সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি চাষ করে কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য নিরসন করেছেন।

পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের বুলবুল মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও ধার-দেনা করে সংসার চালাতেন। এখন আর তা লাগে না। সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মূলাসহ অন্যান্য শাকসবজি আবাদ করে ভালোই চলছে তার সংসার। একই কথা জানান মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের সবজি চাষি ইয়াকুব আলী। তিনিও ৫০ শতক জমিতে বেগুন ও বাঁধাকপি আবাদ করেছেন।

একই ইউনিয়নের আকবর আলী, আবদুস সাত্তার, আনিসুর রহমান, এরশাদ আলী, সদরের আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, পীরগাছা উপজেলার আবদুল খালেক, আবদুস সাত্তার, আবদুল খালেক, ইউসুফ আলী, বদরগঞ্জ উপজেলার নজরুল হক, আবদুল হামিদ, আবু তাহের, আবদুল মতিন, আবদুল হাকিম, ভ্যানচালক মেনাজুল, মোতালেব,  মোক্তার হোসেন, আমিনুল, লোকমান আলী ও জাকারিয়াসহ আট জেলার বড় কৃষকের পাশাপাশি হাজার হাজার ক্ষদ্র, বর্গা ও প্রান্তিক চাষি শাকসবজির আবাদ করে অভাব দূর করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্বিন-কার্তিক মাসে এ অঞ্চলে শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র চাষিরা থাকতেন খুবই বেকায়দায়। আমন ধান লাগানোর পর তাদের হাতে কাজ থাকত না। ফলে গ্রামাঞ্চলের অনেক ক্ষদ্র কৃষক জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের সন্ধানে যেতেন। সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন আর হন্যে হয়ে কাজের সন্ধানে রাজধানীতে ঘুরতে হচ্ছে না তাদের।

দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ শতক জমিতে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করে অনেকেই ভালোভাবে সংসার চালাচ্ছেন। কাউনিয়া উপজেলার ঠাকুরদাস মাদ্রাসা পাড়া গ্রামের আবু হানিফ হাইব্রিড লাউ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আট জেলায় শীতকালীন শাকসবজির আবাদ হয়েছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ১৬ মেট্রিকটন করে উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিকটন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজির দাম গড়ে ২০ টাকা ধরা হলে উৎপাদিত সবজির মূল্য দাঁড়ায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

এ ছাড়া গত রবি মৌসুমে রংপুরে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মূলা, টমেটো ও কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ হয়েছিল যা এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অভাব  মোচনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

কৃষিতথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা আবু সায়েম জানান, কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের ফলে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ অঞ্চলে শাকসবজির আবাদ বেড়েছে। কৃষকরাও ভালো দাম পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীতকালীন সবজি চাষের স্বনির্ভর

আপডেট টাইম : ১০:১০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরে চলতি বছর শীতকালীন সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে। বিভাগের আট জেলায় প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিকটন সবজি। নদীভাঙন কবলিত ভূমিহীনরা বালুচরে নতুন উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া, স্কোয়াশসহ সাথী ফসল চাষ করে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন।

শীতকালে রবি ফসল হিসেবে মাত্র তিন থেকে চার মাসে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় দেশব্যাপী এর সম্ভবনা বেড়েছে। ২০ হাজার ভূমিহীন পরিবার তিস্তায় জেগে ওঠা অব্যবহৃত বালুচরে চার হাজার হেক্টর জমিতে ৮০ কোটি টাকার এক লাখ পাঁচ  হাজার মেট্রিকটন মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশসহ সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি চাষ করে কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য নিরসন করেছেন।

পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের বুলবুল মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও ধার-দেনা করে সংসার চালাতেন। এখন আর তা লাগে না। সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মূলাসহ অন্যান্য শাকসবজি আবাদ করে ভালোই চলছে তার সংসার। একই কথা জানান মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের সবজি চাষি ইয়াকুব আলী। তিনিও ৫০ শতক জমিতে বেগুন ও বাঁধাকপি আবাদ করেছেন।

একই ইউনিয়নের আকবর আলী, আবদুস সাত্তার, আনিসুর রহমান, এরশাদ আলী, সদরের আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, পীরগাছা উপজেলার আবদুল খালেক, আবদুস সাত্তার, আবদুল খালেক, ইউসুফ আলী, বদরগঞ্জ উপজেলার নজরুল হক, আবদুল হামিদ, আবু তাহের, আবদুল মতিন, আবদুল হাকিম, ভ্যানচালক মেনাজুল, মোতালেব,  মোক্তার হোসেন, আমিনুল, লোকমান আলী ও জাকারিয়াসহ আট জেলার বড় কৃষকের পাশাপাশি হাজার হাজার ক্ষদ্র, বর্গা ও প্রান্তিক চাষি শাকসবজির আবাদ করে অভাব দূর করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্বিন-কার্তিক মাসে এ অঞ্চলে শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র চাষিরা থাকতেন খুবই বেকায়দায়। আমন ধান লাগানোর পর তাদের হাতে কাজ থাকত না। ফলে গ্রামাঞ্চলের অনেক ক্ষদ্র কৃষক জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের সন্ধানে যেতেন। সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন আর হন্যে হয়ে কাজের সন্ধানে রাজধানীতে ঘুরতে হচ্ছে না তাদের।

দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ শতক জমিতে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করে অনেকেই ভালোভাবে সংসার চালাচ্ছেন। কাউনিয়া উপজেলার ঠাকুরদাস মাদ্রাসা পাড়া গ্রামের আবু হানিফ হাইব্রিড লাউ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আট জেলায় শীতকালীন শাকসবজির আবাদ হয়েছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ১৬ মেট্রিকটন করে উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিকটন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজির দাম গড়ে ২০ টাকা ধরা হলে উৎপাদিত সবজির মূল্য দাঁড়ায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

এ ছাড়া গত রবি মৌসুমে রংপুরে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মূলা, টমেটো ও কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ হয়েছিল যা এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অভাব  মোচনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

কৃষিতথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা আবু সায়েম জানান, কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের ফলে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ অঞ্চলে শাকসবজির আবাদ বেড়েছে। কৃষকরাও ভালো দাম পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।