মুন গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর অগ্রণী ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তেও দোষী প্রমাণিত হয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলেও তা ফাইলবন্দী রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ঋণ অনিয়মটি তদন্ত করতে অগ্রণী ব্যাংক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদসহ ডিএমডি মিজানুর রহমান খানসহ প্রিন্সিপাল শাখার ৯ জন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এতে ব্যাংকটির কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০০৮-এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের অডিট কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনটি গত ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জায়েদ বখতের কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের অডিট কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনটি আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। এখন তাদের দিকনির্দেশনা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে সানমুন গ্রুপের কর্ণধার মিজানুর রহমান মিজান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানে অনিয়মে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদ জড়িত থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ অনিয়মের সঙ্গে এমডির জড়িত থাকার তথ্য তুলে ধরে সম্প্রতি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অগ্রণী ব্যাংক এমডির জ্ঞাতসারে এবং তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার একটি চক্র পরিচালনা পর্ষদকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে মিজানুর রহমান মিজান এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করে আমানতকারীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঝুঁকিগ্রস্ত করেছে। সার্বিকভাবে যার দায়ভার ব্যাংকের এমডির ওপর বর্তায়।
চিঠি থেকে জানা যায়, যে ভবন নির্মাণের জন্য সানমুন বাংলাদেশ লিমিটেডকে ঋণ দেওয়া হয়, তার নকশা ১৯৯৮ সালে অনুমোদন হলেও ২০০২ সালে তা বাতিল হয়ে যায়। নকশা বাতিলের ১০ বছর পর ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করা হয়; যার সঙ্গে ব্যাংকটির এমডি সরাসরি জড়িত।
এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকার দায়ে সৈয়দ আবদুল হামিদের পুনঃনিয়োগে আপত্তি জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির মুখেই গত ১০ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় তার পুনঃনিয়োগ দেয়। এরপর অনেকটা বাধ্য হয়ে ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে তার নিয়োগ প্রদান করে।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল হামিদ ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সূত্রটি জানায়, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদ ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গ করে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেসার্স জজ ভূইয়া গ্রুপের নামে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের ওই এমডি ও ডিএমডি। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে মেসার্স তানাকা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান Swiss Quality paper BD Ltd.-এর নামে নিয়ম ভেঙ্গে ১২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে।