ঢাকা ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামের বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৮
  • ১১১৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। চারদিক সুনসান। ‘আও-রে পলো বাওয়াত’ এমন হাঁকডাকে সরব আশপাশ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পলো হাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ। কোমরসমান পানিতে চলে দুপুর পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ শিকার। গতকাল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার গোয়াহারি গ্রামের বড় বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসবে পরিণতহয়।

গ্রামবাসী জানিয়েছেন, প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম দিন বার্ষিক উৎসব হিসেবে পলো (শুকনো মৌসুমে মাছ ধরার হাতিয়ার) দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। গোয়াহারি গ্রামের সবাই এ মাছ ধরার উৎসবে একাত্ম হন।

পলো একধরনের ঝাঁপি। বাঁশ আর বেতের বুননে তৈরি পলো গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহৃত হয়। শুকনো মৌসুমে হাওর-বিলের পানি কমে গেলে পলো দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরার প্রচলন অনেকটা গৃহস্থ পরিবারের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

১ মাঘ সামনে রেখে গোয়াহারি গ্রামে সপ্তাহজুড়ে পলো বাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। গতকাল সকালে পলো বাওয়া শুরু হলে সরেজমিনে দেখা গেছে, মানুষের শোরগোল ছাপিয়ে পলোর ছপাৎ ছপাৎ শব্দ। এর মধ্যে কারও পলোতে মাছ ধরা পড়লে সমস্বরে চলে শোরগোল। বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা পলো বাওয়ার মধ্যে পলোবন্দী মাছ দেখা গেছে শতাধিক লোকের হাতে। ফেরার পথে পলো আর মাছ দেখিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় গ্রামের নানা বয়সী মানুষকে।

ঘণ্টাব্যাপী পলো বাওয়ায় ধরা পড়েছে বোয়াল, রুই, গজার, কালবাউশ, শোল, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে বোয়ালই ধরা পড়েছে বেশি। তজম্মুল আলী, জাহাঙ্গীর আলম দুটি করে বোয়াল, মিজানুল করিম তিনটি বোয়াল ও একটি গজার, তোফায়েল আহমদ দুটি বাউশ, সিরাজুল ইসলাম ও আতাউর রহমানকে একটি করে শোল ও লিমন মিয়া দুটি রুই ধরেছেন বলে জানান।

পলো হাতে যতজন মাছ শিকারে নামেন, তাঁদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ পলো বাওয়া দেখেন। বিলের পাড়ে কথা হয় গ্রামের মুরব্বি হাজি তৈমুছ আলীর সঙ্গে। তিনি বয়সের কারণে এখন আর পলো বাওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিলে পলো বেয়ে। তৈমুছ বলেন, ‘সেই স্মৃতিতে দেখতাম আইছি!’

পলো বাওয়ার দিনকে মাঝখানে রেখে দেশে ফিরেছেন গোয়াহারির রহমত উল্লাহ। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। রহমত পলো হাতে মাছ ধরায় নেমেছিলেন। তাঁর ভাষ্য, ‘২৭ বছর ধরে প্রবাসে আছি। কিন্তু ছোটবেলার পলো বাওয়া কখনো ভুলতে পারিনি। এবার পলো হাতে নেমে ২৭ বছর আগের সময়ে যেন ফিরে গিয়েছিলাম।’

পলো বাওয়া দেখতে বউ নাইওর এসেছে জানিয়ে মামুনুল হুদা বলেন, পলো দিয়ে মাছ শিকারের পর তা খেয়ে তারপর ফিরবেন।

গোয়াহারি গ্রামে বংশপরম্পরায় প্রায় ২০০ বছর ধরে বড় বিলে পলো বাওয়া প্রচলিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, পলোতে মাছ ধরা পড়ুক বা নাই পড়ুক, উৎসবমুখরতা গ্রামবাসীর বড় আনন্দদায়ক। পলোর শিকার মাছের স্বাদও আলাদা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রামের বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসব

আপডেট টাইম : ০২:৪২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। চারদিক সুনসান। ‘আও-রে পলো বাওয়াত’ এমন হাঁকডাকে সরব আশপাশ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পলো হাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ। কোমরসমান পানিতে চলে দুপুর পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ শিকার। গতকাল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার গোয়াহারি গ্রামের বড় বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসবে পরিণতহয়।

গ্রামবাসী জানিয়েছেন, প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম দিন বার্ষিক উৎসব হিসেবে পলো (শুকনো মৌসুমে মাছ ধরার হাতিয়ার) দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। গোয়াহারি গ্রামের সবাই এ মাছ ধরার উৎসবে একাত্ম হন।

পলো একধরনের ঝাঁপি। বাঁশ আর বেতের বুননে তৈরি পলো গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহৃত হয়। শুকনো মৌসুমে হাওর-বিলের পানি কমে গেলে পলো দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরার প্রচলন অনেকটা গৃহস্থ পরিবারের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

১ মাঘ সামনে রেখে গোয়াহারি গ্রামে সপ্তাহজুড়ে পলো বাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। গতকাল সকালে পলো বাওয়া শুরু হলে সরেজমিনে দেখা গেছে, মানুষের শোরগোল ছাপিয়ে পলোর ছপাৎ ছপাৎ শব্দ। এর মধ্যে কারও পলোতে মাছ ধরা পড়লে সমস্বরে চলে শোরগোল। বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা পলো বাওয়ার মধ্যে পলোবন্দী মাছ দেখা গেছে শতাধিক লোকের হাতে। ফেরার পথে পলো আর মাছ দেখিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় গ্রামের নানা বয়সী মানুষকে।

ঘণ্টাব্যাপী পলো বাওয়ায় ধরা পড়েছে বোয়াল, রুই, গজার, কালবাউশ, শোল, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে বোয়ালই ধরা পড়েছে বেশি। তজম্মুল আলী, জাহাঙ্গীর আলম দুটি করে বোয়াল, মিজানুল করিম তিনটি বোয়াল ও একটি গজার, তোফায়েল আহমদ দুটি বাউশ, সিরাজুল ইসলাম ও আতাউর রহমানকে একটি করে শোল ও লিমন মিয়া দুটি রুই ধরেছেন বলে জানান।

পলো হাতে যতজন মাছ শিকারে নামেন, তাঁদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ পলো বাওয়া দেখেন। বিলের পাড়ে কথা হয় গ্রামের মুরব্বি হাজি তৈমুছ আলীর সঙ্গে। তিনি বয়সের কারণে এখন আর পলো বাওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিলে পলো বেয়ে। তৈমুছ বলেন, ‘সেই স্মৃতিতে দেখতাম আইছি!’

পলো বাওয়ার দিনকে মাঝখানে রেখে দেশে ফিরেছেন গোয়াহারির রহমত উল্লাহ। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। রহমত পলো হাতে মাছ ধরায় নেমেছিলেন। তাঁর ভাষ্য, ‘২৭ বছর ধরে প্রবাসে আছি। কিন্তু ছোটবেলার পলো বাওয়া কখনো ভুলতে পারিনি। এবার পলো হাতে নেমে ২৭ বছর আগের সময়ে যেন ফিরে গিয়েছিলাম।’

পলো বাওয়া দেখতে বউ নাইওর এসেছে জানিয়ে মামুনুল হুদা বলেন, পলো দিয়ে মাছ শিকারের পর তা খেয়ে তারপর ফিরবেন।

গোয়াহারি গ্রামে বংশপরম্পরায় প্রায় ২০০ বছর ধরে বড় বিলে পলো বাওয়া প্রচলিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, পলোতে মাছ ধরা পড়ুক বা নাই পড়ুক, উৎসবমুখরতা গ্রামবাসীর বড় আনন্দদায়ক। পলোর শিকার মাছের স্বাদও আলাদা।