ঢাকা ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচ্চ ফলনশীল সরিষার চাষ করার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০১৮
  • ২৫৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল  বারি-৯ ও টোরি-৭, বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সরিষার আবাদ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগালেও গত বছরের তুলনাই সরিষা চাষ এ বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে। মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই অধিক ফলনশীল সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করে। এতে সরিষা আবাদে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ফিরে আসবে বলে আশা করেছিল কৃষি বিভাগ কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শীত আসতে দেরি হওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলার সরিষার চাষ লক্ষ্য মাত্রা পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ  বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজিব হাসান জানান, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহাম্মপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে, যেখানে গত বছর সরিষা আবাদের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর মাগুরা সদরে ২১৫০, মহাম্মদপুর উপজেলায় মাত্র ৬০৫, শ্রীপুর উপজেলায় ৫৫০ ও শালিখা উপজেলায় ৩০৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে সেখানে গত বছর সদরে ৬ হাজার ১২০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৩৭৫ হেক্টর, শালিখায় ও মহম্মদপুরে  ৬০০ হেক্টর  জমিতে  সরিষা  চাষ  করা  হয়েছিল।

এ বছর জেলায় ৭ হাজার ৪৬৬ টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ; যা গত বছরের চেয়ে অর্ধেক। তাছাড়া  সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করার কথা শতাধিক মধুচাষীকে জেলাতে এ বছর সরিষা চাষ ভালো না হওয়াতে এলাকার মধুচাষিরা এবার পার্শ্ববর্তী জেলাতে ভিড় জমিয়েছেন। সাধারণত মাগুরার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি-৯ ও টোরি-৭ জাতের সরিষার আবাদিই বেশি করতেন। সময় বেশি লাগায় ও ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে উৎসাহ হারাচ্ছিল।

এ দুটি জাতের সরিষা মাত্র ৬৫-৭৫ দিনে সরিষা ঘরে তোলা গেলেও চলতি মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করলেও অসময়ে বৃষ্টি ও শীত শুরু হতে দেরি হওয়াতে মাগুরার কৃষকরা সরিষা আবাদে অনেকটা নিরুৎসাহ প্রকাশ করছে। হেক্টরে দেড় হাজার কেজি ফলন হয়। সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

আঠারখাদা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজির আহম্মদ জানান, ‘আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকা জমিতে রিলে পদ্ধতিতে (জমি চাষ না করে) সরিষা চাষ মাগুরাতে এখন বেশ জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষে উৎপাদন খরচ অনেক কম। এবার অনেক কৃষকেরা মাগুরাতে এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করছে।’

মাগুরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সরিষা চাষি বিনয় সরকার, দীপক সরকার, লক্ষণ বিশ্বাস, বিদ্যুৎ সরকার, নারায়ণ বিশ্বাস, হাজীপুরের আবজাল, কুকনা গ্রামের পলাশ ঘোষসহ  অনেকে বলেন, ‘দেশি জাতের সরিষা আবাদ করে একরে ৮-১০ মণ ফলন পাওয়া যেত। সেখানে উন্নতজাতের সরিষা আবাদে প্রতি একরে পাওয় যায় ১৪-১৫ মণ। উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরি করায় এবার জেলাতে সরিষা চাষ কম হয়েছে।’

মাগুরা সদর উপজেলার আঠাখাদা গ্রামের বিনয় সরকার বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষার আবাদ করেছি। আশা করি ৪০-৪৫ মণ সরিষা ঘরে তুলতে পারবো। মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি র্কমকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় স্থানীয় জাতের তুলনায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বেশি চাষ করছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি ভালো দাম পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা কর্মকর্তা পার্থপ্রতিম সাহা জানান, অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরি হওয়ায় এ বছর মাগুরার কৃষকরা গতবারের তুলনায় সরিষা চাষ কম করেছে, আবার অনেকে অগ্রিম ধানচাষ করার জন্য জমি ফেলে রেখেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উচ্চ ফলনশীল সরিষার চাষ করার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা

আপডেট টাইম : ০৩:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল  বারি-৯ ও টোরি-৭, বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সরিষার আবাদ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগালেও গত বছরের তুলনাই সরিষা চাষ এ বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে। মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই অধিক ফলনশীল সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করে। এতে সরিষা আবাদে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ফিরে আসবে বলে আশা করেছিল কৃষি বিভাগ কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শীত আসতে দেরি হওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলার সরিষার চাষ লক্ষ্য মাত্রা পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ  বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজিব হাসান জানান, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহাম্মপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে, যেখানে গত বছর সরিষা আবাদের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর মাগুরা সদরে ২১৫০, মহাম্মদপুর উপজেলায় মাত্র ৬০৫, শ্রীপুর উপজেলায় ৫৫০ ও শালিখা উপজেলায় ৩০৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে সেখানে গত বছর সদরে ৬ হাজার ১২০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৩৭৫ হেক্টর, শালিখায় ও মহম্মদপুরে  ৬০০ হেক্টর  জমিতে  সরিষা  চাষ  করা  হয়েছিল।

এ বছর জেলায় ৭ হাজার ৪৬৬ টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ; যা গত বছরের চেয়ে অর্ধেক। তাছাড়া  সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করার কথা শতাধিক মধুচাষীকে জেলাতে এ বছর সরিষা চাষ ভালো না হওয়াতে এলাকার মধুচাষিরা এবার পার্শ্ববর্তী জেলাতে ভিড় জমিয়েছেন। সাধারণত মাগুরার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি-৯ ও টোরি-৭ জাতের সরিষার আবাদিই বেশি করতেন। সময় বেশি লাগায় ও ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে উৎসাহ হারাচ্ছিল।

এ দুটি জাতের সরিষা মাত্র ৬৫-৭৫ দিনে সরিষা ঘরে তোলা গেলেও চলতি মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করলেও অসময়ে বৃষ্টি ও শীত শুরু হতে দেরি হওয়াতে মাগুরার কৃষকরা সরিষা আবাদে অনেকটা নিরুৎসাহ প্রকাশ করছে। হেক্টরে দেড় হাজার কেজি ফলন হয়। সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

আঠারখাদা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজির আহম্মদ জানান, ‘আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকা জমিতে রিলে পদ্ধতিতে (জমি চাষ না করে) সরিষা চাষ মাগুরাতে এখন বেশ জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষে উৎপাদন খরচ অনেক কম। এবার অনেক কৃষকেরা মাগুরাতে এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করছে।’

মাগুরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সরিষা চাষি বিনয় সরকার, দীপক সরকার, লক্ষণ বিশ্বাস, বিদ্যুৎ সরকার, নারায়ণ বিশ্বাস, হাজীপুরের আবজাল, কুকনা গ্রামের পলাশ ঘোষসহ  অনেকে বলেন, ‘দেশি জাতের সরিষা আবাদ করে একরে ৮-১০ মণ ফলন পাওয়া যেত। সেখানে উন্নতজাতের সরিষা আবাদে প্রতি একরে পাওয় যায় ১৪-১৫ মণ। উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরি করায় এবার জেলাতে সরিষা চাষ কম হয়েছে।’

মাগুরা সদর উপজেলার আঠাখাদা গ্রামের বিনয় সরকার বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষার আবাদ করেছি। আশা করি ৪০-৪৫ মণ সরিষা ঘরে তুলতে পারবো। মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি র্কমকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় স্থানীয় জাতের তুলনায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বেশি চাষ করছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি ভালো দাম পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা কর্মকর্তা পার্থপ্রতিম সাহা জানান, অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরি হওয়ায় এ বছর মাগুরার কৃষকরা গতবারের তুলনায় সরিষা চাষ কম করেছে, আবার অনেকে অগ্রিম ধানচাষ করার জন্য জমি ফেলে রেখেছে।