হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোপা আমন ধানের কাটা-মাড়াই শেষ হতে না হতেই রংপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সের চারা রোপনের লক্ষ্য নিয়ে চলছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। জমিতে লাগানো আলু, সরিষা, তামাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি উত্তোলনের পর সেখানে রোপন করা হবে ধানের চারা। কিন্তু চারা রোপনের এই সময়টাতে কুয়াশা পিছু ছাড়ছে না এই অঞ্চলে।
শৈত্যপ্রবাহের কারণে সারারাত তো বটেই, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কুয়াশা পড়ছে। বৈরী এ আবহাওয়ায় উঠতি আলুসহ বিশেষ করে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে ঘন কুয়াশার কারণে যাতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য কৃষকরা বিভিন্ন কৌশলের পাশাপাশি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন বোরো ধানের বীজতলা।
সরেজমিনে গতকাল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে যেন জমি তৈরিসহ বোরো ধানের বীজতলা তৈরির ধুম পড়েছে। অনেকে রবি ফসল হিসেবে চাষ করা সরিষা, আলু, গম ও তামাক উত্তোলনের পর ওই জমিতে বোরো অথবা আউশ আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে জন্য কৃষকরা বীজতলা তৈরি করছেন। কিন্তু আবহাওয়ার আচরণে তাদের শঙ্কা কাটছে না। তাই বীজতলা রক্ষাতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের বেলা কেউবা বীজতলা পানিতে ডুবিয়ে রাখছেন, পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কেউ কেউ। আবার কেউবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে চারা রক্ষার চেষ্টা করছেন। তবে বিগত বছরগুলোতে ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চলতি বছর সচেতন কৃষকরা কুয়াশার হাত থেকে রক্ষায় বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।
কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ এলাকার কৃষক জালাল মিয়া জানান, কয়েকদিন আগে তিনি ৬০ কেজি ধানের বীজতলা করেছেন। এখন কুয়াশা থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তিনি সকাল-সন্ধ্যায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন। তিনি জানান, বীজতলায় চারা নষ্ট হইলে তা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করা সম্ভব না। তাছাড়া নতুন করে আর বীজতলায় চারা তৈরি করারও সময় মিলবে না।
গঙ্গাচড়া উপজেলার ঠাকুড়াদহ এলাকার কৃষক সবুর মিয়া জানান, এক দোন (২৪ শতক) জমির জন্য চারা কিনতে দাম পড়ে সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। বীজতলা নষ্ট হলে দাম আরও বেড়ে যাবে। তাই তিনি জমিতে রোপণ না করা পর্যন্ত বীজতলার পরিচর্যা অব্যাহত রাখছেন। আলু উত্তোলনের পর যারা ওই জমিতে বোরো আবাদ করবেন তারা ইতিমধ্যে চারা রক্ষায় শুকনো বীজতলা করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা নীলফামরী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। এজন্য এক হেক্টর জমির বীজতলা দিয়ে ২০ হেক্টরে চারা লাগানো গেলেও কমপক্ষে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা করা প্রয়োজন। কৃষকরা বীজতলা তৈরি শুরু করে দিয়েছেন। তবে কুয়াশার হাত থেকে বীজতলা রক্ষায় আগে থেকেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভালো ফলনের লক্ষ্যে ভালোমানের চারা তৈরিতে সাধারণ বীজতলার পাশাপাশি আদর্শ বীজতলা ও শুকনো বা পলিথিনে ঢাকা বীজতলা করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলে কৃষির জন্য বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই আগে থেকে বিশেষ করে কৃষকদের বীজতলা রক্ষায় বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা, আক্রান্ত বীজতলা পানি দিয়ে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা এবং প্রয়োজনে চারার মধ্যে জমানো শিশির বাঁশের কঞ্চি অথবা শক্ত কিছু দিয়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আগে থেকে সতর্কাবস্থা অবলম্বন করতে পারলে বোরো বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না।