ঢাকা ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালোজিরায় আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাত ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ অচলপ্রায়। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য-নিরাপত্তার জন্য চলে আসছে নতুন নতুন জাতের ধান। খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশের আদি ও অকৃত্রিম ধান। হারিয়ে যাবার তালিকায় যুক্ত হতে বসেছে কালোজিরা ধান। স্থানীয়ভাবে এই ধানকে গুরা ধান, সরক ধান, কালি ধান, বিছনাই ধান নামেও ডাকা হয়। এই ধান অনেক ছোট।

অন্যান্য ধানের গুড়ার সমান আবার ধবধবে সাদা। ‘পিটা বানামো সরক ধানের, ভাতো হবে তাতে; খাওয়া শ্যাশে পান দেমো, আইসো ক্যানে হামার পাটে’ রংপুর অঞলের এই স্লোকের মাঝেই অনুধাবন করা যায় এই ধানের গুরত্ব। এই অঞ্চলে অরেকটি কথা প্রচলিত আছে, যেসব দম্পতির সন্তান হয় না তারা যদি ভিক্ষুককে কালোজিরা ধান ভিক্ষা দেন তবে খুব তাড়াতাড়ি মায়ের কোলজুড়ে সন্তান আসে। কালো জিরা ধানের অন্যতম গুণ দীর্ঘ সময় ভাত অপচনশীল থাকে। সেই সঙ্গে অল্প ভাতেই পেট ভরে যায়। এই ধান দিয়ে তৈরি ভাপা, পুলি, মালপোয়া, চিতই ইত্যাদি পিঠা সুগন্ধি যুক্ত হয়।

কালো জিরা ধান চাষে পরিশ্রম, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় কম। তবে শুধুমাত্র ফলন কম হবার কারণে এই ধান চাষে পিছপা হচ্ছেন কৃষক। অন্য জাতের ধান বিঘা প্রতি ফলন হয় ১৮ থেকে ২০ মণ। ফলন ভালো হলে যা দাঁড়ায় ২২ থেকে ২৫ মণে। কিন্তু কালো জিরা ধানে ফলন হয় মাত্র ৮ থেকে ১০ মণ। মূল্য অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি পান চাষিরা। অন্যান্য ধান মণপ্রতি কৃষক পান ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। কালো জিরা ধানে বাজার মূল্য ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। দাম বেশি পেলও আর্থিক কারণে চাষে আগ্রহ হারায় কৃষক।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার কৃষক মোকলেসুর রহমান বলেন, সরক (কালোজিরা) ধানে পরিশ্রম কম আবার অর্থের দিক থেকেও সাশ্রয়ী। কিন্তু আবাদ এত কম হয় যে চাষ করা সম্ভব হয় না। এই সুগন্ধি জাতের ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য কালোজিরার সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধানের মিশ্রণ ঘটিয়ে আবিষ্কৃত হয় ব্রি-৩৪ ধান। তবে ব্রি-৩৪ ধানে ফলন বৃদ্ধি পেলেও ধরে রাখা সম্ভব হয়নি সুগন্ধ। ফলে বাজারে মিলছে না অধিক মূল্য। নতুন জাত আবিষ্কার হলেও হারিয়েছে কালোজিরা ধানের অকৃত্রিমতা।

রংপুর কৃষি গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তা মো. লাভলু বলেন, কালোজিরা ধানের জাত নিয়ে নতুন জাতে আমরা সফলতা পেয়েছি। তবে গুণাগুণে কিছুটা ঘাটতি পেয়েছি। এই ধানের জাত উন্নয়নে কাজ চলছে, আমরা আশাবাদী ভালো ফলাফল পাবো।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো চলছে এই সুগন্ধি ধানের চাষ। বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ইত্যাদি জেলায় চলছে। কালোজিরা ধানের তীর্থ ভূমি বলা হতো বরেন্দ্র এলাকাগুলোকে। নওগাঁর কৃষক কাওছার আফজাল বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম মাঠকে মাঠ শুধু বিছনাই (কালোজিরা) ধান চাষ হতো। কিন্তু এখন চাষ হয় না বললেই চলে।

আমার পরিবারের জন্য এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। লাভ কম হয় তাই চাষ করা হয় না। আমার মতো কিছু কৃষক পরিবার নিজেদের খাবার জন্য চাষ করে। নীলফামারী জেলার চাল ব্যবসায়ী বাবলা জামান বলেন, কালোজিরা ধানের চাহিদার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাষ করে নিই আমরা।

মূলত ঢাকাসহ বড় বড় শহরে ধান সরবরাহ হয়। ঢাকার চাল বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কালোজিরা চাল। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, কালোজিরা চালের দাম বেশি হলেও ক্রেতা প্রচুর। আবার প্রয়োজন মাফিক চাল সরবরাহ পাই না। এই ধান চাষে আরেকটি সমস্যা বীজ সংকট। ভালো মানের বীজ পাওয়া না যাওয়ার কারণে অনেকে চাইলেও চাষ করতে পারছেন না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কালোজিরায় আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা

আপডেট টাইম : ১২:০৪:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাত ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ অচলপ্রায়। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য-নিরাপত্তার জন্য চলে আসছে নতুন নতুন জাতের ধান। খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশের আদি ও অকৃত্রিম ধান। হারিয়ে যাবার তালিকায় যুক্ত হতে বসেছে কালোজিরা ধান। স্থানীয়ভাবে এই ধানকে গুরা ধান, সরক ধান, কালি ধান, বিছনাই ধান নামেও ডাকা হয়। এই ধান অনেক ছোট।

অন্যান্য ধানের গুড়ার সমান আবার ধবধবে সাদা। ‘পিটা বানামো সরক ধানের, ভাতো হবে তাতে; খাওয়া শ্যাশে পান দেমো, আইসো ক্যানে হামার পাটে’ রংপুর অঞলের এই স্লোকের মাঝেই অনুধাবন করা যায় এই ধানের গুরত্ব। এই অঞ্চলে অরেকটি কথা প্রচলিত আছে, যেসব দম্পতির সন্তান হয় না তারা যদি ভিক্ষুককে কালোজিরা ধান ভিক্ষা দেন তবে খুব তাড়াতাড়ি মায়ের কোলজুড়ে সন্তান আসে। কালো জিরা ধানের অন্যতম গুণ দীর্ঘ সময় ভাত অপচনশীল থাকে। সেই সঙ্গে অল্প ভাতেই পেট ভরে যায়। এই ধান দিয়ে তৈরি ভাপা, পুলি, মালপোয়া, চিতই ইত্যাদি পিঠা সুগন্ধি যুক্ত হয়।

কালো জিরা ধান চাষে পরিশ্রম, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় কম। তবে শুধুমাত্র ফলন কম হবার কারণে এই ধান চাষে পিছপা হচ্ছেন কৃষক। অন্য জাতের ধান বিঘা প্রতি ফলন হয় ১৮ থেকে ২০ মণ। ফলন ভালো হলে যা দাঁড়ায় ২২ থেকে ২৫ মণে। কিন্তু কালো জিরা ধানে ফলন হয় মাত্র ৮ থেকে ১০ মণ। মূল্য অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি পান চাষিরা। অন্যান্য ধান মণপ্রতি কৃষক পান ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। কালো জিরা ধানে বাজার মূল্য ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। দাম বেশি পেলও আর্থিক কারণে চাষে আগ্রহ হারায় কৃষক।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার কৃষক মোকলেসুর রহমান বলেন, সরক (কালোজিরা) ধানে পরিশ্রম কম আবার অর্থের দিক থেকেও সাশ্রয়ী। কিন্তু আবাদ এত কম হয় যে চাষ করা সম্ভব হয় না। এই সুগন্ধি জাতের ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য কালোজিরার সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধানের মিশ্রণ ঘটিয়ে আবিষ্কৃত হয় ব্রি-৩৪ ধান। তবে ব্রি-৩৪ ধানে ফলন বৃদ্ধি পেলেও ধরে রাখা সম্ভব হয়নি সুগন্ধ। ফলে বাজারে মিলছে না অধিক মূল্য। নতুন জাত আবিষ্কার হলেও হারিয়েছে কালোজিরা ধানের অকৃত্রিমতা।

রংপুর কৃষি গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তা মো. লাভলু বলেন, কালোজিরা ধানের জাত নিয়ে নতুন জাতে আমরা সফলতা পেয়েছি। তবে গুণাগুণে কিছুটা ঘাটতি পেয়েছি। এই ধানের জাত উন্নয়নে কাজ চলছে, আমরা আশাবাদী ভালো ফলাফল পাবো।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো চলছে এই সুগন্ধি ধানের চাষ। বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ইত্যাদি জেলায় চলছে। কালোজিরা ধানের তীর্থ ভূমি বলা হতো বরেন্দ্র এলাকাগুলোকে। নওগাঁর কৃষক কাওছার আফজাল বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম মাঠকে মাঠ শুধু বিছনাই (কালোজিরা) ধান চাষ হতো। কিন্তু এখন চাষ হয় না বললেই চলে।

আমার পরিবারের জন্য এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। লাভ কম হয় তাই চাষ করা হয় না। আমার মতো কিছু কৃষক পরিবার নিজেদের খাবার জন্য চাষ করে। নীলফামারী জেলার চাল ব্যবসায়ী বাবলা জামান বলেন, কালোজিরা ধানের চাহিদার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাষ করে নিই আমরা।

মূলত ঢাকাসহ বড় বড় শহরে ধান সরবরাহ হয়। ঢাকার চাল বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কালোজিরা চাল। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, কালোজিরা চালের দাম বেশি হলেও ক্রেতা প্রচুর। আবার প্রয়োজন মাফিক চাল সরবরাহ পাই না। এই ধান চাষে আরেকটি সমস্যা বীজ সংকট। ভালো মানের বীজ পাওয়া না যাওয়ার কারণে অনেকে চাইলেও চাষ করতে পারছেন না।