ঢাকা ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলুক্ষেত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৮:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৪৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহী অঞ্চলের ক্ষেতগুলো এখন আলু গাছের সবুজ চাদরে মোড়া। যত্ম আত্তিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষক। আবহওয়া মোটামুটি অনুকুল রয়েছে। রোগ বালাইয়ের হানা থেকে রক্ষা পেতে রাখছে সতর্ক দৃষ্টি। এরিমধ্যে আবার আগাম লাগানো আলু বাজারে শোভা পাচ্ছে।

ভাল দাম পাবার আশায় প্রত্যেক বছর কিছু জমিতে আলুর আগাম আবাদ হয়। শীত মওসুমের স্বব্জি হিসাবে আগাম আলু দামও পায়। শুরুতে ১শ’ টাকা কেজি পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু এবার তেমন দাম ওঠেনি। জাত ও আকার ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে রয়েছে। কারন গতবারের আলুর ছড়াছড়ি এখনও বাজারে। ৫/৭ টাকা কেজিতেও পুরানো আলু নেবার ক্রেতার বড্ড অভাব। সবার নজর সদ্য ওঠা আলুর দিকে।

দাম একটু বেশী হলেও এর স্বাদে একটু ভিন্নতা রয়েছে। এদিকে এখনো হিমাগার থেকে বের হতে পারেনি মজুদ করা হাজার হাজার বস্তা আলু। মানুষের খাবার আলু গোখাদ্য আর মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার করেও শেষ রক্ষা হয়নি। কোটি কোটি টাকার লোকসানের বোঝা চেপেছে আলু ব্যবসায়ী উৎপাদক আর হিমাগার মালিকদের উপর। বিশেষ করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা একেবারে ধরা খেয়েছে।

উৎপাদকরা একটু ভাল দাম পাবার আশায় মজুদ করলেও সে আশায় বালি পড়েছে। নতুন আলু আসবার সময় ঘনিয়ে আসছে। অথচ হিমাগারে এখনো পুরানো আলুতে ভরা। সাধারনত ডিসেম্বর মাসেই খালি করা হয় হিমাগার। এবার তা করা যায়নি। লোকসানের দায়ে অনেকে আলু নিতে হিমাগারমুখি হয়নি। অথচ যে ঋণ নিয়েছিলেন তা পরিশোধের তাগিদে অস্থির। অনেক হিমাগার মালিক ব্যবসায়ীদের আলু রাখার জন্য উৎসাহিত করে।

বিনিয়োগেরজন্য অর্থের যোগান দেয়। জামানত হিসাবে নেয় ব্যাংকের চেক। এখন এ চেকের অর্থ পরিশোধের জন্য নানা রকম চাপ। অনেকে মামলার ভয়ে জমি বিক্রি করে কিংবা অন্য কোথা হতে ঋণ নিয়ে দেনা শোধ দেবার চেষ্টা করছেন। লোকসান পুষিয়ে নেবার আশায় আবারও ঝুকেছেন আলু আবাদে। আশা যদি ভাল ফলন হয় তবে লোকসান কিছুটা কমবে।

তাছাড়া লাভ লোকসান যাই হোকনা কেন তারা অভিমান করে ক্ষেত ফেলে রাখতে পারেনা। তাই বার বার ঝুৃকি নেয়। কারন কৃষি যে তাদের ধ্যান জ্ঞান। মাটি যে তাদের টানে। অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা তাদের হিমাগার ভরানোর জন্য আগাম টাকা ঋণ হিসাবে দিয়ে আবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মওসুমে আলু ভাল ফলন করে কাংখিত দাম না পেয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এবার আবাদ কিছুটা কমিয়েছে। চলতি মওসুমে তাদের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে। বাস্তবে দুই হাজার হেক্টর জমি কমে আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৩ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে।

এবার আবাদের পরিমান কম হওয়ায় প্রায় নয় লাখ মন আলু কম উৎপাদন হবে। তবে এখন যেমন আবহাওয়া বিরাজ করছে। আর ক্ষেতের অবস্থা যা তাতে এবারো আলুর বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ উৎপাদন নিয়ে সম্ভবনার আশাবাদ ব্যাক্ত করলেও পোড় খাওয়া কৃষক ব্যবসায়ীরা বলছেন বাম্পার ফলন হওয়া মানে আবারো লোকসানের পাল্লা ভারী হওয়া।

অভিজ্ঞজনরা বলছেন আমাদের দেশে অনেক কিছুই হয় অপরিকল্পিত ভাবে। হুজুগের পেছনে ছুটি। একবার কোন ফসলের ভাল দাম পেলে আগ পিছ বাদ বিচার না করে তার পেছনে ছুটি। আবার হিমাগার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় শুরু হয়েছে হিমাগার বানানোর প্রতিযোগিতা। হিমাগার ব্যবসাকে লাভজনক করতে কৃষক আর ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।

আবার কিছু মওসুমী ব্যবসায়ী আছেন যারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আলু কিনে মজুদ রাখেন। সারা বছর অল্প অল্প করে আলু বাজারে ছেড়ে দাম বেশী রেখে বাজার নিয়ন্ত্রন করেন। তাছাড়া আলু এমনি এক স্বব্জি যা মাছ মাংশ ভর্তা ভাজি সব কিছুতে মিশে যায়। এজন্য আলুর চাহিদা থাকে সব সময়। অন্য স্বব্জির বাজারও নিয়ন্ত্রন করে।

সবার সাথে মিলে যায় বলে আলুর অবশ্য একটা ভিন্ন অর্থে বদনাম রয়েছে। ‘‘গোল আলু’’ বলে। এই গোল আলু ক’বছর ধরে গোলমেলে অবস্থায় ফেলছে আবাদকারীদের। লাভ নয় লোকসানের পাল্লা ভারী করছে। অভিজ্ঞজনরা বলছেন ভাতের বিকল্প আলু এটি শুধু শ্লোগানে না রেখে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চালের উপর চাপ কমাতে হলে আলুকে সত্যিকার অর্থে আলুকে ভাতের বিকল্প হিসাবে দাঁড় করাতে হবে।

তাছাড়া উন্নত জাতের আলু আবাদ করে তা বিদেশে রফতানীর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে আলুর স্টার্চের চাহিদা রয়েছে। আলু স্থান করে নিতে পারে রফতানী পন্যের তালিকায়। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনার। আর তাহলে আলু নিয়ে প্রতি বছর গোলমেলে অবস্থায় পড়তে হবেনা। বরং সবার জন্য হবে শুভকর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আলুক্ষেত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

আপডেট টাইম : ১২:৫৮:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহী অঞ্চলের ক্ষেতগুলো এখন আলু গাছের সবুজ চাদরে মোড়া। যত্ম আত্তিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষক। আবহওয়া মোটামুটি অনুকুল রয়েছে। রোগ বালাইয়ের হানা থেকে রক্ষা পেতে রাখছে সতর্ক দৃষ্টি। এরিমধ্যে আবার আগাম লাগানো আলু বাজারে শোভা পাচ্ছে।

ভাল দাম পাবার আশায় প্রত্যেক বছর কিছু জমিতে আলুর আগাম আবাদ হয়। শীত মওসুমের স্বব্জি হিসাবে আগাম আলু দামও পায়। শুরুতে ১শ’ টাকা কেজি পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু এবার তেমন দাম ওঠেনি। জাত ও আকার ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে রয়েছে। কারন গতবারের আলুর ছড়াছড়ি এখনও বাজারে। ৫/৭ টাকা কেজিতেও পুরানো আলু নেবার ক্রেতার বড্ড অভাব। সবার নজর সদ্য ওঠা আলুর দিকে।

দাম একটু বেশী হলেও এর স্বাদে একটু ভিন্নতা রয়েছে। এদিকে এখনো হিমাগার থেকে বের হতে পারেনি মজুদ করা হাজার হাজার বস্তা আলু। মানুষের খাবার আলু গোখাদ্য আর মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার করেও শেষ রক্ষা হয়নি। কোটি কোটি টাকার লোকসানের বোঝা চেপেছে আলু ব্যবসায়ী উৎপাদক আর হিমাগার মালিকদের উপর। বিশেষ করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা একেবারে ধরা খেয়েছে।

উৎপাদকরা একটু ভাল দাম পাবার আশায় মজুদ করলেও সে আশায় বালি পড়েছে। নতুন আলু আসবার সময় ঘনিয়ে আসছে। অথচ হিমাগারে এখনো পুরানো আলুতে ভরা। সাধারনত ডিসেম্বর মাসেই খালি করা হয় হিমাগার। এবার তা করা যায়নি। লোকসানের দায়ে অনেকে আলু নিতে হিমাগারমুখি হয়নি। অথচ যে ঋণ নিয়েছিলেন তা পরিশোধের তাগিদে অস্থির। অনেক হিমাগার মালিক ব্যবসায়ীদের আলু রাখার জন্য উৎসাহিত করে।

বিনিয়োগেরজন্য অর্থের যোগান দেয়। জামানত হিসাবে নেয় ব্যাংকের চেক। এখন এ চেকের অর্থ পরিশোধের জন্য নানা রকম চাপ। অনেকে মামলার ভয়ে জমি বিক্রি করে কিংবা অন্য কোথা হতে ঋণ নিয়ে দেনা শোধ দেবার চেষ্টা করছেন। লোকসান পুষিয়ে নেবার আশায় আবারও ঝুকেছেন আলু আবাদে। আশা যদি ভাল ফলন হয় তবে লোকসান কিছুটা কমবে।

তাছাড়া লাভ লোকসান যাই হোকনা কেন তারা অভিমান করে ক্ষেত ফেলে রাখতে পারেনা। তাই বার বার ঝুৃকি নেয়। কারন কৃষি যে তাদের ধ্যান জ্ঞান। মাটি যে তাদের টানে। অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা তাদের হিমাগার ভরানোর জন্য আগাম টাকা ঋণ হিসাবে দিয়ে আবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মওসুমে আলু ভাল ফলন করে কাংখিত দাম না পেয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এবার আবাদ কিছুটা কমিয়েছে। চলতি মওসুমে তাদের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে। বাস্তবে দুই হাজার হেক্টর জমি কমে আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৩ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে।

এবার আবাদের পরিমান কম হওয়ায় প্রায় নয় লাখ মন আলু কম উৎপাদন হবে। তবে এখন যেমন আবহাওয়া বিরাজ করছে। আর ক্ষেতের অবস্থা যা তাতে এবারো আলুর বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ উৎপাদন নিয়ে সম্ভবনার আশাবাদ ব্যাক্ত করলেও পোড় খাওয়া কৃষক ব্যবসায়ীরা বলছেন বাম্পার ফলন হওয়া মানে আবারো লোকসানের পাল্লা ভারী হওয়া।

অভিজ্ঞজনরা বলছেন আমাদের দেশে অনেক কিছুই হয় অপরিকল্পিত ভাবে। হুজুগের পেছনে ছুটি। একবার কোন ফসলের ভাল দাম পেলে আগ পিছ বাদ বিচার না করে তার পেছনে ছুটি। আবার হিমাগার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় শুরু হয়েছে হিমাগার বানানোর প্রতিযোগিতা। হিমাগার ব্যবসাকে লাভজনক করতে কৃষক আর ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।

আবার কিছু মওসুমী ব্যবসায়ী আছেন যারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আলু কিনে মজুদ রাখেন। সারা বছর অল্প অল্প করে আলু বাজারে ছেড়ে দাম বেশী রেখে বাজার নিয়ন্ত্রন করেন। তাছাড়া আলু এমনি এক স্বব্জি যা মাছ মাংশ ভর্তা ভাজি সব কিছুতে মিশে যায়। এজন্য আলুর চাহিদা থাকে সব সময়। অন্য স্বব্জির বাজারও নিয়ন্ত্রন করে।

সবার সাথে মিলে যায় বলে আলুর অবশ্য একটা ভিন্ন অর্থে বদনাম রয়েছে। ‘‘গোল আলু’’ বলে। এই গোল আলু ক’বছর ধরে গোলমেলে অবস্থায় ফেলছে আবাদকারীদের। লাভ নয় লোকসানের পাল্লা ভারী করছে। অভিজ্ঞজনরা বলছেন ভাতের বিকল্প আলু এটি শুধু শ্লোগানে না রেখে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চালের উপর চাপ কমাতে হলে আলুকে সত্যিকার অর্থে আলুকে ভাতের বিকল্প হিসাবে দাঁড় করাতে হবে।

তাছাড়া উন্নত জাতের আলু আবাদ করে তা বিদেশে রফতানীর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে আলুর স্টার্চের চাহিদা রয়েছে। আলু স্থান করে নিতে পারে রফতানী পন্যের তালিকায়। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনার। আর তাহলে আলু নিয়ে প্রতি বছর গোলমেলে অবস্থায় পড়তে হবেনা। বরং সবার জন্য হবে শুভকর।