হাওর বার্তা ডেস্কঃ লতিরাজ কচু জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এখান কচুর লতি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। অন্যান্য সবজি চাষের চেয়ে কম অর্থ বিনিয়োগে বেশি লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর এ চাষ বাড়ছে।
জয়পুরহাটের কচুর লতি কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে এই অর্থকরি ফসল থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে দারুন অবদান রাখছে। আর অল্প সময়ে কচুর লতি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১ হাজার ৪শত ৫০ হেক্টর জমিতে পানি কচুর লতির আবাদ হয়েছে। যা গত বছর হতে ১৫০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে শুধু পাঁচবিবি উপজেলাতে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ করছে।
আর লতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বিঘা জমিতে হাল চাষ, শ্রম, সেচ, গোবর, ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া বাবদ ১৮-২২ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৩-৪ হাজার কেজি কচুর লতি পেয়ে থাকে কৃষকরা।
এতে কৃষকদের ভাগ্য অনেকটাই বদলাতে শুরু করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে ধরঞ্জি, সুইচ গেট, শিমুলতলী, আয়মা রসুলপুর, বালিঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাটাবুকা গ্রামের গরীব চাষী মৃত অমির উদ্দীনের প্রথম উদ্ভাবিত এই লতি শুরুতে ২/১ জন কৃষেকের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে দ্রুত গতিতে বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পরে।
এই কচুর লতি অত্যন্ত সুসাদু ও পুষ্টিমান সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় পাঁচবিবি উপজেলার এই কচুর লতি এখন জয়পুরহাট সদর, দিনাজপুর, বিরামপুর, নওগাঁর বদলগাছী, যশোর জেলাসহ অন্যান্য ২/১ জেলার উপজেলাতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের সফল লতি চাষী আবেদ আলীসহ একাধিক কৃষক জানান, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস এই পুরো মৌসুম হলেও সারা বছর এর ফলন পাওয়া যায়। লতির পাইকার মুমিন ও রনি বলেন, পাঁচবিবি বটতলীতে এই লতির বাজার থেকে সিজন টাইমে প্রতিদিন ৬০-৭০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা।
বর্তমান কৃষকদের কাছ থেকে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি লতি ২৫-৪০ টাকা দরে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। জয়পুরহাটের উৎপাদিত কচুর লতির প্রধান পাইকারী বাজার ঢাকার কারওয়ান বাজার। এছাড়া যাত্রাবাড়ির চৌরাস্তা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, বাইপাইল, টাঙ্গাইল, দৌলতপুর, রাজশাহী, নাটোর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জেও যাচ্ছে জয়পুরহাটের কচুর লতি।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক, সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, রপ্তানিযোগ্য কচুর লতি চাষে কৃষকদের সবরকম সহযোগিতা করে যাচ্ছি। জয়পুরহাটের কচুর লতি অনেক সুসাদু।
এ জন্য এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখানকার উৎপাদিত কচুর লতি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়া সরকারের নেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা, নেই কোন লতি বিক্রির স্থায়ী কোন হাট বাজার।
এখানে অস্থায়ী একটি বাজার গড়ে উঠলেও তা পাইকারদের হাতে জিম্মি থাকায় কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য মূল্য থেকে। এ সমস্যা আশু সমাধানের দাবি জানিয়েছে লতি চাষিরা।