হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাতে ডাল না হলে, হাত ডুবিয়ে ডাল ভাত না খেলে অনেকের চলে না। বাঙালী রসনায় ডালের কদর যুগ যুগ ধরে। রুচি বদলে ডালের মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য। আর এতে মাষকলাইয়ের ডালের তালিকা বেশ বড়। স্বাদবর্ধক ফোড়ন দিয়ে রান্না করা এক বাটি মাষকলাইয়ের ডাল খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলতেই হবে, আহ্, খেলাম রে!
মাষকলাই ডাল শুধু এমনি এমনি রান্না হয় না, মাছ-মাংস,সবজিও ডালযোগে রান্না হয়। এতে প্রচুর লৌহ বা আয়রন আছে বলে এ ডাল স্বাস্থ্যকর। এটি শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরকে সক্রিয় রাখে।
এ ডালে প্রচুর ফাইবার আছে বলে হজম ভালো হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই ডাল উপকারী। এছাড়াও আরো অনেক গুণ রয়েছে এ ডালের।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের চরাঞ্চলে এ ডাল চাষ বেশি হয়ে থাকে। এ উপজেলায় এবার ৪৬০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই (ডাল) চাষ হয়েছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে উঠা চরে বাম্পার ফলনে চলতি মৌসুমে তিন শতাধিক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে।
চরআলগী ইউনিয়নের বালুয়া কান্দা গ্রামের কৃষক সৈকত মিয়া জানান, ধান চাষের উপর নির্ভরশীল চরাঞ্চলে কৃষকরা ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে উঠা চরে মাসকলাই চাষে শতাধিক কৃষকের জীবনে এবার এনে দিবে নতুন গতি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪৫০ হেক্টর জমিতে মাস কলাই চাষ হয়েছে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের চর ছাড়াও উপজেলার টাঙ্গাব, দত্তের বাজার ও পাঁচবাগ ইউনিয়নে প্রচুর মাসকলাই চাষ হয়েছে। এ তিনটি ইউনিয়নের অন্তত দুই শতাধিক কৃষক ফলন ভাল হওয়ায় আশাতীত লাভবান হবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এস ফারহানা হোসেন বলেন, মাসকলাই (ডাল) চাষের পর কৃষকরা ধান ও গম করতে পারে। পাশাপাশি সামান্য খরচে প্রচুর লাভ হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা মাসকলাই চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে। উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪৫০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই ডালের চাষ হয়েছে। রান্না করা মাসকলাই ডাল সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলে এর চাহিদা প্রচুর। মাসকলাই চাষে উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। ফলে উপার্জনের দিক দিয়ে চরের মানুষ কোন ভাবেই পিছিয়ে নেই।
চরআলগী ইউনিয়নের বালুয়া কন্দা গ্রামের কৃষক আঃ জলিল জানান, ব্রহ্মপত্র নদে জেগে উঠা চরে এবার সে ৪ এরক জমি অন্যর কাছ থেকে বর্গা নিয়ে মাসকলাই চাষ করেছে। ৪ একর জমিতে মাসকলাই চাষ করতে জলিলের ১৪’শ টাকার বীজ লেগেছে। ফলন দেখে তিনি বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
ভাল ফলনে প্রতি একরে ২৯ মন মাসকলাই উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন। এ চাষী জানান, মাসকলাই চাষে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়েনা। ফলে উৎপাদন খরচ ব্যতীত মাসকলাই বিক্রির সম্পূর্ণ টাকাই লাভ হয়। একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে উঠা চরে ৩ একর ও সূরুজ মিয়া ৪ একর জমিতে মাসকলাই চাষ করেছেন।
তারা জানান, জমিতে মাসকলাই চাষ অত্যন্ত ভাল হওয়ায় আশা করছি প্রতি একরে ৩০-৩২ মন করে উৎপাদিত হবে। প্রতি একরে উৎপাদিত মাসকলাই বাজার ভাল থাকলে অন্তত ৮৮ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও উৎপাদন খরচ ব্যতীত যার প্রায় পুরোটাই লাভ।
তবে রবি শস্যে সংরক্ষন ব্যবস্থা না থাকায়, ভাল বিপনন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় কৃষকদের উৎপাদিত রবি শস্যে বেঁচে প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ করতে পারছেনা এ অঞ্চলের কৃষকরা। সমস্যাগুলোর সমাধান হলে রবি শস্যে উৎপাদন করে পরিশ্রমী কৃষকরা আরো লাভবান হবেন বলে তারা আশা করছেন। তাদের মতো চরআলগী ইউনিয়নের আরো শতাধিক কৃষক মাসকলাই চাষ করেছেন।
সবজি চাষ লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জীবনযাত্রার মান বদলাতে শুরু করেছে।