ঢাকা ০৯:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ জাসদ কাণ্ডারি সংকটে বিপর্যস্ত বিএনপি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০১৮
  • ২৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লাল চিনি আর কাঁচা হলুদের জন্য বিখ্যাত পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা ফুলবাড়ীয়া। বনাঞ্চল আর পাহাড়-সমতলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-৬। এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১ হাজার ৪৭৬ জন।

বিগত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন নির্বাচিত হন। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। এসব কারণে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে তৃণমূলে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও যোগ্য কাণ্ডারি সংকটে ভুগছে স্থানীয় বিএনপি।

জানা যায়, সৌহার্দময় রাজনীতির উর্বর ভূমি এ উপজেলায় নেই কোনো রাজনৈতিক সংঘাত। নিয়মিতই এক টেবিলে বসেই চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ফলে দেশের অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এ আসনটিতে রাজনৈতিক মামলা-হামলায় তুলনামূলক বেশ কম।

সূত্রমতে, রাজনৈতিকভাবে এ উপজেলাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও ভোট রাজনীতিতে একাধিকবার এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী। তবে বর্তমান এমপি মোসেলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা থাকায় এবং ফুলবাড়ীয়া কলেজ জাতীয়করণ আন্দোলনে এক শিক্ষক ও এক পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মাঠে বেকায়দা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন তিনি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার পুত্র ও আত্মীয়স্বজনদের একক আধিপত্যে চলে যায় উপজেলার সবকিছু। ফলে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে ছিটকে পড়ে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে কর্মসৃজন কর্মসূচি, কাবিখা, টিআর, এলজিএসপিসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প লুটপাটের কারণে এ উপজেলাটিতে এখনো তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে ক্ষমতাসীন দলের শাসনে জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় নাখোশ স্থানীয় মহাজোট ও সাধারণ মানুষ।

সূত্রমতে, বিগত ১৯৯১ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০১ সালে ফের বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হলেও ২০০৮ সালে নৌকা পুনরায় এ আসনে জয় লাভ করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয় বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আহম্মেদ।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, এ উপজেলায় প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক সংঘাত না থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে তেমন সরব নয় বিএনপি নেতারা। মাঝেমধ্যে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পুলিশি বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিএনপি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন না উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদ। তিনি ঢাকার বাসায় আয়েশী জীবন কাটালেও এলাকার মামলা-হামলায় নির্যাতিত তৃণমূল নেতাদের তেমন খোঁজখবর নেন না তিনি। ফলে দলের ভেতরে-বাইরে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

তবে অপর একটি সূত্র মতে, দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় বিএনপিতে ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদের একক আধিপত্য বজায়ে রাখলেও দলের দুঃসময়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য শেরেবাংলা একেএম ফজলুল হকের নাত জামাই আখতারুল আলম ফারুকের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ রাজনীতির মাঠে সরব ছিল। আগামী নির্বাচনে এ আসনটিতে মনোনয়ন যুদ্ধে তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়বেন বলেও দাবি তার অনুসারীদের। যদিও দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে ফুরফুরা মেজাজে রয়েছেন সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদ।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, সাবেক এমএনএ আনম নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ. রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. মালেক সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট কেবিএম আমিনুল ইসলাম খাইরুল, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ কদ্দুছ, অ্যাডভোকেট মো. মফিজ উদ্দিন মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল মান্নান, লে. কর্নেল (অব.) জিএম আজিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মফিজ উদ্দিন মণ্ডল, অ্যাড. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির প্রমুখ।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ইঞ্জি. শামছ উদ্দিন আহমদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারানির্যাতিত অ্যাড. মো. আজিজুর রহমান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কারানির্যাতিত মো. আ. করিম সরকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য শেরেবাংলা একেএম ফজলুল হকের নাত জামাই আখতারুল আলম ফারুক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বাদশা।

এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে বিএনপি দলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বাদশা হাওর বার্তাকে বলেন, এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদের কোনো বিকল্প নেই।

মনোনয়ন প্রশ্নে ছাত্রনেতা করিম সরকার বলেন, দলের জন্য জেল খেটেছি। মামলা-হামলায় নির্যাতিত হয়েও দলের জন্য কাজ করছি। আশা করি দলের মূল্যায়ন পাব। মোট কথা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত।

সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। করছেন সভা সমাবেশ। জানান দিচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরেও এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আভাস দিচ্ছেন মহাজোট শরিক দল জাসদ ও জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন ময়মনসিংহ বিভাগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মো. মাহফিজুর রহমান বাবুল।

রাজনীতির পাশাপাশি এলাকার সমাজসেবাতেও তার অবদান ব্যাপক বলেও দাবি সমর্থকদের। একই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো ভোটের মাঠে সরব হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. কে আর ইসলাম। প্রতি সপ্তাহেই তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাপার প্রার্থী ডা. কে আর ইসলাম বিগত দিনে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা প্রদান করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।

এ বিষয়ে চক্ষু বিশেজ্ঞ ডা. কে আর ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়েই মাঠে কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।

একই ধরনের বক্তব্য বিশিষ্ট সমাজ-সেবক মাহফিজুর রহমান বাবুলের। তিনি বলেন, মনোনয়ন বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। দলের জন্য কাজ করছি, আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মোসলেম উদ্দিনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে মহাজোট শরিক দল জাসদ মনোনীত প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জাসদের সভাপতি কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই তিনি বিএনপি জোটসহ এমপি মোসলেম উদ্দিন এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনার আওয়াজ তুলছেন। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত এ উপজেলাকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন জাসদ প্রার্থী মিন্টু। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ফুলবাড়ীয়া কলেজ মাঠে জাসদের বিশাল জনসভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফুলবাড়ীয়া জাসদের প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুর নাম ঘোষণা করেন। ফলে আগামী ভোটের মাঠে বেকায়দা পরিস্থিতিতে পড়তে পারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

মনোনয়ন প্রশ্নে ভোটের মাঠের অভিজ্ঞ রাজনীতিক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু হাওর বার্তাকে বলেন, ১৪ দলীয় জোট থেকে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতোমধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিশাল জনসভায় আমাকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এখন এলাকার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আশা করছি মনোনয়ন পেলে আমি জয়ী হবো।

এ ছাড়া এ আসনে জাসদ থেকে এবারো প্রার্থী হতে পারেন প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আজকের ময়মনসিংহের সম্পাদক জাসদ নেতা আলহাজ শামসুল আলম খান। এ নিয়েও দলীয় পরিমণ্ডলে বেশ আলোচনা চলছে।

একাধিকবার আ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার অনুসারীরা জানান, বিরোধীপক্ষের লোকজন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এমপিকে বিব্রত করতে চাইছে। মূলত এসবের কোনো ভিত্তি নেই। তারা জানান, মোসলেম উদ্দিন এ আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত এমপি। আগামী নির্বাচনে বিজয় ধরে রাখতে চাইলে এ রকম ‘ঠাণ্ডা মাথার’ রাজনীতিকের কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েকটি জনসভায় মহাজোট সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তারা।

মনোনয়ন প্রশ্নে অপর প্রার্থী অধ্যাপক আ. রাজ্জাক হাওর বার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতেই নৌকা মার্কার ভোট চাইছি। আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

সূত্রঃ মানবকণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ জাসদ কাণ্ডারি সংকটে বিপর্যস্ত বিএনপি

আপডেট টাইম : ১১:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লাল চিনি আর কাঁচা হলুদের জন্য বিখ্যাত পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা ফুলবাড়ীয়া। বনাঞ্চল আর পাহাড়-সমতলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-৬। এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১ হাজার ৪৭৬ জন।

বিগত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন নির্বাচিত হন। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। এসব কারণে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে তৃণমূলে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও যোগ্য কাণ্ডারি সংকটে ভুগছে স্থানীয় বিএনপি।

জানা যায়, সৌহার্দময় রাজনীতির উর্বর ভূমি এ উপজেলায় নেই কোনো রাজনৈতিক সংঘাত। নিয়মিতই এক টেবিলে বসেই চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ফলে দেশের অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এ আসনটিতে রাজনৈতিক মামলা-হামলায় তুলনামূলক বেশ কম।

সূত্রমতে, রাজনৈতিকভাবে এ উপজেলাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও ভোট রাজনীতিতে একাধিকবার এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী। তবে বর্তমান এমপি মোসেলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা থাকায় এবং ফুলবাড়ীয়া কলেজ জাতীয়করণ আন্দোলনে এক শিক্ষক ও এক পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মাঠে বেকায়দা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন তিনি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার পুত্র ও আত্মীয়স্বজনদের একক আধিপত্যে চলে যায় উপজেলার সবকিছু। ফলে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে ছিটকে পড়ে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে কর্মসৃজন কর্মসূচি, কাবিখা, টিআর, এলজিএসপিসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প লুটপাটের কারণে এ উপজেলাটিতে এখনো তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে ক্ষমতাসীন দলের শাসনে জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় নাখোশ স্থানীয় মহাজোট ও সাধারণ মানুষ।

সূত্রমতে, বিগত ১৯৯১ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০১ সালে ফের বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হলেও ২০০৮ সালে নৌকা পুনরায় এ আসনে জয় লাভ করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয় বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আহম্মেদ।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, এ উপজেলায় প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক সংঘাত না থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে তেমন সরব নয় বিএনপি নেতারা। মাঝেমধ্যে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পুলিশি বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিএনপি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন না উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদ। তিনি ঢাকার বাসায় আয়েশী জীবন কাটালেও এলাকার মামলা-হামলায় নির্যাতিত তৃণমূল নেতাদের তেমন খোঁজখবর নেন না তিনি। ফলে দলের ভেতরে-বাইরে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

তবে অপর একটি সূত্র মতে, দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় বিএনপিতে ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদের একক আধিপত্য বজায়ে রাখলেও দলের দুঃসময়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য শেরেবাংলা একেএম ফজলুল হকের নাত জামাই আখতারুল আলম ফারুকের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ রাজনীতির মাঠে সরব ছিল। আগামী নির্বাচনে এ আসনটিতে মনোনয়ন যুদ্ধে তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়বেন বলেও দাবি তার অনুসারীদের। যদিও দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে ফুরফুরা মেজাজে রয়েছেন সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদ।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, সাবেক এমএনএ আনম নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ. রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. মালেক সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট কেবিএম আমিনুল ইসলাম খাইরুল, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ কদ্দুছ, অ্যাডভোকেট মো. মফিজ উদ্দিন মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল মান্নান, লে. কর্নেল (অব.) জিএম আজিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মফিজ উদ্দিন মণ্ডল, অ্যাড. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির প্রমুখ।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ইঞ্জি. শামছ উদ্দিন আহমদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারানির্যাতিত অ্যাড. মো. আজিজুর রহমান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কারানির্যাতিত মো. আ. করিম সরকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য শেরেবাংলা একেএম ফজলুল হকের নাত জামাই আখতারুল আলম ফারুক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বাদশা।

এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে বিএনপি দলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বাদশা হাওর বার্তাকে বলেন, এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমদের কোনো বিকল্প নেই।

মনোনয়ন প্রশ্নে ছাত্রনেতা করিম সরকার বলেন, দলের জন্য জেল খেটেছি। মামলা-হামলায় নির্যাতিত হয়েও দলের জন্য কাজ করছি। আশা করি দলের মূল্যায়ন পাব। মোট কথা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত।

সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। করছেন সভা সমাবেশ। জানান দিচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরেও এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আভাস দিচ্ছেন মহাজোট শরিক দল জাসদ ও জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন ময়মনসিংহ বিভাগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মো. মাহফিজুর রহমান বাবুল।

রাজনীতির পাশাপাশি এলাকার সমাজসেবাতেও তার অবদান ব্যাপক বলেও দাবি সমর্থকদের। একই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো ভোটের মাঠে সরব হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. কে আর ইসলাম। প্রতি সপ্তাহেই তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাপার প্রার্থী ডা. কে আর ইসলাম বিগত দিনে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা প্রদান করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।

এ বিষয়ে চক্ষু বিশেজ্ঞ ডা. কে আর ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়েই মাঠে কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।

একই ধরনের বক্তব্য বিশিষ্ট সমাজ-সেবক মাহফিজুর রহমান বাবুলের। তিনি বলেন, মনোনয়ন বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। দলের জন্য কাজ করছি, আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মোসলেম উদ্দিনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে মহাজোট শরিক দল জাসদ মনোনীত প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জাসদের সভাপতি কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই তিনি বিএনপি জোটসহ এমপি মোসলেম উদ্দিন এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনার আওয়াজ তুলছেন। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত এ উপজেলাকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন জাসদ প্রার্থী মিন্টু। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ফুলবাড়ীয়া কলেজ মাঠে জাসদের বিশাল জনসভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফুলবাড়ীয়া জাসদের প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুর নাম ঘোষণা করেন। ফলে আগামী ভোটের মাঠে বেকায়দা পরিস্থিতিতে পড়তে পারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

মনোনয়ন প্রশ্নে ভোটের মাঠের অভিজ্ঞ রাজনীতিক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু হাওর বার্তাকে বলেন, ১৪ দলীয় জোট থেকে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতোমধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিশাল জনসভায় আমাকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এখন এলাকার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আশা করছি মনোনয়ন পেলে আমি জয়ী হবো।

এ ছাড়া এ আসনে জাসদ থেকে এবারো প্রার্থী হতে পারেন প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আজকের ময়মনসিংহের সম্পাদক জাসদ নেতা আলহাজ শামসুল আলম খান। এ নিয়েও দলীয় পরিমণ্ডলে বেশ আলোচনা চলছে।

একাধিকবার আ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার অনুসারীরা জানান, বিরোধীপক্ষের লোকজন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এমপিকে বিব্রত করতে চাইছে। মূলত এসবের কোনো ভিত্তি নেই। তারা জানান, মোসলেম উদ্দিন এ আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত এমপি। আগামী নির্বাচনে বিজয় ধরে রাখতে চাইলে এ রকম ‘ঠাণ্ডা মাথার’ রাজনীতিকের কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েকটি জনসভায় মহাজোট সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তারা।

মনোনয়ন প্রশ্নে অপর প্রার্থী অধ্যাপক আ. রাজ্জাক হাওর বার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতেই নৌকা মার্কার ভোট চাইছি। আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

সূত্রঃ মানবকণ্ঠ