শীতকালীন মাঠজুড়ে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লায় এবার শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হতে যাচ্ছে। মাঠজুড়ে আছে সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। শীতের সবজির এই নীরব বিপ্লবে খুশি স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু শঙ্কা কাটছে না তাদের মধ্যে। মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদাররা না জানি কোন কারসাজি করে দাম কমিয়ে দেন। প্রতি বছরই কুমিল্লার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা জেলার চাহিদাও মেটাচ্ছে। তবে সবজি বিপুল পরিমাণ এখনই বাজারে উঠলেও দাম কিন্তু কমছে না। এজন্য কৃষকরা দায়ী করছেন আড়তদারদের।

এবারে কুমিল্লার কৃষিপ্রধান গ্রামগুলোতে শীতের সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে। কোনো কোনো গ্রামে অগ্রহায়ণে জমি থেকে সবজি তোলা হয়েছে। আর পৌষের শুরুতেও কেউ সবজি তুলছেন, কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকরা বলছেন, পৌষের শেষের দিকে সবজিতে ভরপুর হয়ে উঠবে কাঁচাবাজার। বর্তমানে বাজারে শীতের শাকসবজি প্রচুর উঠলেও দাম বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে আড়ত ঘিরে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাতের কারণে সবজি বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বছর কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের বৃষ্টিতে সবজি চাষিরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। তবে বৃষ্টি হলেও সবজি চাষের জন্য কুমিল্লা অঞ্চলে আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। যে কারণে জমিতে সবজির তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। অগ্রহায়ণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিনই কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার উঁচু এলাকায় চাষকৃত সবজি ক্ষেত থেকে উঠিয়ে এখানকার সর্ববৃহৎ সবজি বাজার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন নিমসারের আড়তে নিচ্ছেন চাষিরা।

এসব সবজি যেমন কুমিল্লার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে স্থান পাচ্ছে তেমনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদাও মেটাচ্ছে। অন্যদিকে কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবি ইউনিয়নের চানপুর, সুবর্ণপুর, জালুয়াপাড়া, শাহাপুর, গোলাবাড়ি, আমড়াতলী ইউনিয়নের শিমপুর, জামবাড়ি, বাঁশমঙ্গল এবং সদর দক্ষিণের লালমাই, বিজয়পুর, ভুশ্চিসহ অন্যান্য গ্রামে উৎপাদিত তরতাজা শীতের সবজি সরাসরি কুমিল্লা নগরীর বাজারগুলোতে আসছে।

সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভ্যান, মিনি ট্রাকযোগে কুমিল্লা শহরের বাজারগুলোতে প্রতিদিন ভোরে পৌঁছে যাচ্ছে শীতের সবজি। কুমিল্লার কৃষিপ্রধান উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এবারে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শীতের সবজির চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ক্ষেত থেকে প্রতিদিন ভোরে সবজি আসছে শহরের বাজারে। আবার অনেক চাষি নিজেরাই সাইকেলে ঝুড়ি বহন করে বা রিকশাভ্যানে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বা রাস্তার পাশে বসে শীতের সবজি বিক্রি করছেন।

এদিকে প্রতি বছর শীতকালীন সবজির ব্যাপক ফলন হয় কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া, জয়দেবপুর, গড়ামারা, গণিপুর, ছায়কোট, শ্রীমন্তপুর, চিলোড়া, বাড়েরা, খিরাসার, বরকইট ও তুলাতলীতে। এসব এলাকায় দিন দিন শীতের সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। এসব এলাকার মাটি সবজি চাষের জন্য বেশ উর্বর এবং উপযোগী। তবে যেসব নিচু এলাকা রয়েছে সেখানে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সবজি চারা রোপণ কাজ শুরু হয়েছে।

মাধাইয়া এলাকায় এখনো শীতের সবজির রোপণ কাজ চলছে। কোনো কোনো এলাকায় ভোরের কুয়াশায় ফসলের মাঠে গিয়ে দিনভর সবজি পরিচর্যায় শ্রম দিচ্ছেন চাষিরা। এখানকার উৎপাদিত সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, মুলা, বেগুন, গাজর, শিম, বরবটি, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, চালকুমড়া, বেগুন, করলা, ঝিঙ্গা, উস্তা উল্লেখযোগ্য। শাকের মধ্যে রয়েছে পুঁই, পালং ও লাল শাক।

পুরো বছরেই ধানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষকরা সবজি চাষ করে থাকেন। এ ছাড়া কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবি ও আমড়াতলী ইউনিয়নে সারা বছরই ঋতুভিত্তিক সবজি, ফসল উৎপাদন করে থাকে ওইসব এলাকার সবজি চাষি ও কৃষকরা। কুমিল্লা সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে উৎপাদিত সবজি বাজারে মিলছে।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, এবারে কুমিল্লায় শীতের শাকসবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। যা সবুজ বিপ্লব বলা যেতে পারে। মুনাফা পাওয়ায় অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উন্নত ফলনের বিষয়ে সবজি চাষিদের মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে কুমিল্লা শহরের বাজারে এবারে শুরু থেকেই শীতের সবজির দাম বেশি। টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, বরবটি, পালংসহ সব ধরনের শাকসবজির দাম বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, সবজি বেশি দামে কিনলে যদি কৃষক বেশি লাভবান হতো তাহলে বিষয়টি সহজভাবেই মেনে যায়। কিন্তু কৃষক তো আড়তে সবজি এনে পরিশ্রম অনুযায়ী সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। বিক্রেতারা আড়ত থেকে বেশি দামে সবজি কিনছেন এমন অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন ক্রেতার পকেট থেকে। কারণ চাষি আর বাজারের সাধারণ সবজি বিক্রেতার কথায় ব্যবধান রয়েছে।

নামমাত্র লাভে চাষির হাতে সবজির মূল্য গুঁজে দেয়া হচ্ছে। কারণ সবজি নিয়ে আড়তে পা রাখতেই দালাল আর মধ্যস্বত্বভোগীর টানাহেঁচড়ায় চাষি নিজেই হতভম্ব হয়ে পড়েন। কাঁচামালের আড়ত ঘিরে দালাল আর মধ্যস্বত্বভোগী চক্র যুগ যুগ ধরেই সবজি চাষির পিছু লেগে থাকে।

কুমিল্লার বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক ও সুজন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী চক্র নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাজারে সবজির দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে আর কৃষকও সবজির ন্যায্য দাম পাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর