ঢাকা ১০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামায়াতের নামে ও নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩৬০ বার

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক রায়ে জামায়াতের আসছে নতুন রুপে। নানামুখী চাপে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথম দুই সাড়ির পদ বাদ দিয়ে দলটির সর্বস্তরের নেতৃত্বে আসছে পরিবর্তন। সংশ্লিষ্ট জামায়াত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জামায়াত পুনর্গঠনের কথা স্বীকার করে দলের ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল নেতা আবদুর রহমান জানান, কারাগারে আটক শীর্ষ নেতাদের স্বপদে রেখেই দলকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তারা আগামীতে রাজনীতি করতে পারবেন না এমনটা ধরেই কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে। জামায়াত চালাচ্ছেন দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা।

এরই মধ্যে স্বাধীনতা প্রজন্মের নেতারা দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। আর তাদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন এমন নেতৃবৃন্দ যাদের বয়স ষাটের নিচে। জামায়াতের বর্তমান শীর্ষ নেতারা কাগুজে-কলমে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক।

জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত তরুণরা দল পরিচালনা করলেও আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে পদ থেকে সরানো হচ্ছে না। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এই দুই নেতা কাগুজে-কলমে জামায়াতের শীর্ষতম পদ দুটিতেই বহাল থাকবেন। জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গে আলাপে এসব জানা গেছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে, তুরস্কের পদ্ধতি অনুসরণ করবে। তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একেপির আদলে জামায়াত নতুন একটি দল গঠন করবে।

সাংবাদিক শিমুল রহমানকে জামায়াতের ভবিষ্যত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি জামায়াত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে আগামী সাধারণ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে তারপরেও কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখবে। যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় তবে তুরস্কের একেপি পার্টির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গণে ফিরে আসতে পারে জামায়াত।

জানা গেছে, জামায়াতকে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক শীর্ষ নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, তাসলিম আলম, হামিদুর রহমান আযাদ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা রফিউদ্দিন আহমেদ ও মাওলানা এ টি এম মাসুমকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে সম্প্রতি নায়েবে আমির এবং ডা. শফিকুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম খান খানকে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল করা হয়েছে। কেবল কেন্দ্র নয় তৃণমূলেও যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের হাতে দল পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও মহানগর নেতাদেরও কেন্দ্রে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দেওয়া হচ্ছে। এই পুনর্গঠনে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন জামায়াতের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা।

জানা গেছে, কেবল কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ নয়, পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন ও সংযোজন করা হয়েছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরাতেও। ৫৫ জনের কর্মপরিষদের মধ্যে অধিকাংশই ৮০’র দশক ও এর পরবর্তীকালের ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা। সর্বশেষ কর্মপরিষদে আনা হয় ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেক শীর্ষ নেতাকে।

এদের মধ্যে রয়েছেন শিবিরের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আজম ওবায়দুল্লাহ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া। এ ছাড়া কর্মপরিষদে আছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, মাওলানা শামসুল ইসলাম, সাইফুল আলম খান মিলন, মুহাম্মদ শাহজাহান। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য হিসেবে যোগ হয়েছেন রাজশাহী মহানগরী আমির অধ্যাপক আতাউর রহমান, খুলনা মহানগরী আমির আবুল কালাম আযাদ, বরিশাল মহানগরী আমির অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, রংপুর মহানগরী আমির অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বেলালের নাম। তারা সবাই ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরায় আনা হয় শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এস এম আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মোবারক হোসেনসহ অনেক তরুণ নেতাকে।

ছাত্রশিবিরের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং এর আগে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন অধিকাংশই তরুণ। যারা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা, বয়সও ৫০ এর কোটায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জামায়াতের নামে ও নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে

আপডেট টাইম : ১২:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক রায়ে জামায়াতের আসছে নতুন রুপে। নানামুখী চাপে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথম দুই সাড়ির পদ বাদ দিয়ে দলটির সর্বস্তরের নেতৃত্বে আসছে পরিবর্তন। সংশ্লিষ্ট জামায়াত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জামায়াত পুনর্গঠনের কথা স্বীকার করে দলের ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল নেতা আবদুর রহমান জানান, কারাগারে আটক শীর্ষ নেতাদের স্বপদে রেখেই দলকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তারা আগামীতে রাজনীতি করতে পারবেন না এমনটা ধরেই কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে। জামায়াত চালাচ্ছেন দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা।

এরই মধ্যে স্বাধীনতা প্রজন্মের নেতারা দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। আর তাদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন এমন নেতৃবৃন্দ যাদের বয়স ষাটের নিচে। জামায়াতের বর্তমান শীর্ষ নেতারা কাগুজে-কলমে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক।

জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত তরুণরা দল পরিচালনা করলেও আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে পদ থেকে সরানো হচ্ছে না। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এই দুই নেতা কাগুজে-কলমে জামায়াতের শীর্ষতম পদ দুটিতেই বহাল থাকবেন। জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গে আলাপে এসব জানা গেছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে, তুরস্কের পদ্ধতি অনুসরণ করবে। তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একেপির আদলে জামায়াত নতুন একটি দল গঠন করবে।

সাংবাদিক শিমুল রহমানকে জামায়াতের ভবিষ্যত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি জামায়াত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে আগামী সাধারণ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে তারপরেও কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখবে। যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় তবে তুরস্কের একেপি পার্টির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গণে ফিরে আসতে পারে জামায়াত।

জানা গেছে, জামায়াতকে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক শীর্ষ নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, তাসলিম আলম, হামিদুর রহমান আযাদ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা রফিউদ্দিন আহমেদ ও মাওলানা এ টি এম মাসুমকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে সম্প্রতি নায়েবে আমির এবং ডা. শফিকুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম খান খানকে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল করা হয়েছে। কেবল কেন্দ্র নয় তৃণমূলেও যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের হাতে দল পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও মহানগর নেতাদেরও কেন্দ্রে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দেওয়া হচ্ছে। এই পুনর্গঠনে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন জামায়াতের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা।

জানা গেছে, কেবল কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ নয়, পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন ও সংযোজন করা হয়েছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরাতেও। ৫৫ জনের কর্মপরিষদের মধ্যে অধিকাংশই ৮০’র দশক ও এর পরবর্তীকালের ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা। সর্বশেষ কর্মপরিষদে আনা হয় ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেক শীর্ষ নেতাকে।

এদের মধ্যে রয়েছেন শিবিরের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আজম ওবায়দুল্লাহ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া। এ ছাড়া কর্মপরিষদে আছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, মাওলানা শামসুল ইসলাম, সাইফুল আলম খান মিলন, মুহাম্মদ শাহজাহান। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য হিসেবে যোগ হয়েছেন রাজশাহী মহানগরী আমির অধ্যাপক আতাউর রহমান, খুলনা মহানগরী আমির আবুল কালাম আযাদ, বরিশাল মহানগরী আমির অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, রংপুর মহানগরী আমির অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বেলালের নাম। তারা সবাই ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরায় আনা হয় শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এস এম আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মোবারক হোসেনসহ অনেক তরুণ নেতাকে।

ছাত্রশিবিরের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং এর আগে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন অধিকাংশই তরুণ। যারা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা, বয়সও ৫০ এর কোটায়।