হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া হাওরের আমআমি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়নি। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে হাওরে এখনো বোরো চাষাবাদ শুরু করা যায়নি।
কৃষকদের অভিযোগ, নলুয়া হাওরের জলকপাটের (স্লুইসগেট) পাশে আমআমি জলমহাল। এ জলমহালের ইজারাদারদের মাছ ধরার বিশেষ সুবিধা দিতে কপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। জলমহালের ইজারাদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা আছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, গত বছর বোরো ফসলহানির পর কৃষি বিভাগ সব রকম সুবিধা দিয়ে কৃষকদের বোরো চাষাবাদে আগ্রহী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পানি না কমায় চাষাবাদ বিলম্বিত হচ্ছে। শুধু নলুয়ার হাওরেই ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইসগেটের চারটি কপাটের তিনটি বন্ধ। স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, গত বছর এপ্রিলে অকালবন্যায় হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। বোরো মৌসুমের আগে কপাটগুলো খুলে দেওয়ার কথা। নভেম্বর মাসের শেষ সময় থেকে বোরো ফসলের জন্য তাঁরা বীজতলা তৈরি করছেন। অথচ হাওরে এখনো প্রচুর পানি জমে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে তাঁরা চাষাবাদ শুরু করতে পারছেন না। তাই তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে একটা স্লুইসগেটের কপাট খুলে দিয়েছেন। কিন্তু পানি খুব ধীরে ধীরে নামছে।
কৃষকেরা আরও বলেন, বোরো ধান রোপণ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে। ধান কাটা চলে এপ্রিল-জুন মাস পর্যন্ত। অথচ তাঁরা এখনো চারা রোপণ করতে পারেননি। আমআমি জলমহালের ইজারাদারেরা যাতে ভালোভাবে মাছ ধরতে পারেন, তাঁদের মাছ যেন ভেসে না যায়, এ জন্য কপাট বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
নলুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা ভূরাখালী গ্রামের কৃষক বলেন, অকালবন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ফসল চলে যাওয়ার পর তাঁরা অসহায় জীবন যাপন করছেন। এখনো হাওরের পানি না কমায় বোরো চাষাবাদ নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। স্লুইসগেটে তিনটি কপাটই বন্ধ রয়েছে।
আমআমি জলমহালের ইজারাদারদের একজন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, আমআমি স্লুইসগেটের কপাটের সঙ্গে তাঁদের জলমহালের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কী কারণে কপাট খোলা হয়নি, তা পাউবোর কর্মকর্তারা জানেন।
পাউবোর জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা বলেন, পাউবোর জনবল ও অর্থসংকটের কারণে এ স্লুইসগেটের কপাট মনে হয় খোলা হয়নি। জলমহালকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।
নলুয়ার হাওরপাড়ের দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, নলুয়ার হাওরে অতিরিক্ত পানির কারণে চাষাবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে। তার ওপর জলমহালের ইজারাদারদের জন্য স্লুইসগেট বন্ধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা জলমহালের ইজারাদারদের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে কপাট বন্ধ রেখেছেন।