হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মাঠে মাঠে সারি সারি সরিষাক্ষেত ভরে গেছে হলুদ ফুলে ফুলে। মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারনা হচ্ছে। দেখে দর্শনার্থী ও কৃষকদের মন ভরে যাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া, সময়মত সার সেচ দেয়ায় বাম্পার ফলন আশা করছেন এলাকার কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়তন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমান ৩৫ লাখ ৭শ হেক্টর , বক ২৭ টি, মৌজা ৩শ ৯৪ টি। গত বছর গোদাগাড়ীতে সরিষা আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। এ বছর হয়েছে ৫ হাজার ২০০ হেক্টর। আগে এ সময়ে কৃষক জমি পতিত রাখতেন।
জলবায়ু পরিবর্তনে ধানে সেচ, সার, কীটনাশক বেশী লাগায় উৎপাদন খরচ বেশী হয়। তাই কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখন নিজেদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে তারা জমিকে ভাল ভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বর্তমান বাজারে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে। সরিষার খৈল গবাদিপশু ও মাছের উৎকৃষ্ট খাবার।
গোদাগাড়ীতে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষকদের ফসল চাষে ভিন্নতা এসেছে। কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরিষা চাষে খরচ কম, সময় এবং সেচ কম লাগে, দাম বেশী পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষক অগ্রহী বেশী হচ্ছে।
গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সরিষা চাষী বলেন, আমাদের এলাকায় আমন ধান ঘরে তোলার পর এবং ইরি বোরো ধান লাগনোর পূর্ব পর্যন্ত যেসব জমি পতিত কিংবা ফাঁকা পড়ে থাকে ওইসব জমিতে সাধারণত বোনাস ফসল উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় অনেক কৃষক বিনাচাষে সরিষা আবাদ করছেন।
মাত্র ৭০/৮০ দিনে কৃষক সরিষা ঘরে তুলতে পারেন। উৎপাদন খরচ কম হওয়া, সার, সেচ কম লাগায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক বেশ ভালই ফলন আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, বিনাচাষে সরিষা করার জন্য আমন ধান কাটার ১০/১৫ দিন পূর্বে জমিতে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ কেজি ইউরিয়া সার, ৫ কেজি পটাশ এবং বেশী কূয়াশার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য একবার ছত্রাক নাশক করতে হয় এবং সরিষাক্ষেতে রোগ বালাই কম হয়।
গত বছর বিজয়নগর মৌজায় কৃষক বিনাচাষে সরিষা করে বিঘা প্রতি ৩ থেকে সাড়ে তিন মন সরিষা পেয়েছিল। প্রতিমন সরিষা ২৭শ থেকে ২৮’শ টাকা দাম পেয়েছিল। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বিজয়নগর মৌজার কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম (৩৫) বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বিনাচাষে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষায় ফুল ভালই ধরেছে। আশা করি বাম্পার ফলন পাব ইনশা আল্লাহ।
বিনাচাষে সরিষা উৎপাদনে জমি চাষ খরচ লাগে না, সার ও সেচ খরচ কম লাগায় উৎপাদন খরচ কম হয় বলে দিনে দিনে এ পদ্ধতিতে সরিষাচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার মাঠে মাঠে সরজমিনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে হলদে সোনালী সরিষা ফুলের সমাহার। সরিষা ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি পরাগায়নে সাহায্য করে থাকে। উপজেলার কাপাশিয়া পাড়া বিলে এক শ্রেণীর মধু ব্যবসায়ী মৌমাছি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন।
তারা সারা বছরে যে মধু বিক্রি করে থাকেন তার বেশী অংশই সরিষা মৌসুমে সংগ্রহ করে থাকেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহকৃত মধু বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি এবং গ্রাহকদের চাহিদাও বেশী। গোদাগাড়ীতে যেসব জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে তাদের মধ্যে উপশী জাতের টরি৭, বারি৯ বারি১৪, বারি১৫ এবং দেশী জাতের সরিষাও রয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সপ্রসারণ অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, এ বছর আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় সরিষাচাষ ভাল হয়েছে, ফলনও ভাল পাবে, বিশেষ করে বারি১৪, বারি১৫ জাতের সরিষার বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। সরিষা গাছ ও ভূষি জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাসুদেবপুরের বিল চড়াই এবং দামকুড়ায় ২শ মৌমাছির বাক্র দেয়া আছে ফলে মধু উৎপাদন হচ্ছে এবং পরাগায়নে সহায়তা করায় সরিষার উৎপাদন ভাল হবে ।