কাধে কাধ মিলিয়ে হাজারো মুসলিম ধর্মালম্বীদের ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছাশ্রমের অপুর্ব মেলবন্ধন তুরাগ তীরে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। আসন্ন ইজতেমা সফল করতে এবারও তুরাগ তীরে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার হাজারো মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে প্রস্তুতি চলছে ইজতেমার।

উতসাহ আর উদ্দীপনার কমতি নেই কারোর মধ্যেই। কেও ভাগ করে দেয়নি দায়িত্ব তবুও নিজ তাগিদেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন প্রস্তুতির কাজে অংশ নিতে। অনেকেই আবার বিভিন্ন জেলাথেকে প্রস্তুতির কাজে অংশ নিতে ও ইজতেমায় শরীক হতে ইতমধ্যেই চলে এসেছেন তুরাগের তীরে ।

এ যেন এক অপুর্ব মেলবন্ধন! কেও কাউকে চেনেননা এখানে তবুও কাধে কাধ মিলিয়ে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছেন সবাই। তাবলীগ জামাতের সাথী, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ও কলকারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্ব ইজতেমার ময়দানকে ঢেলে সাজাতে। কেউ প্যান্ডেলের চট সেলাই করছেন, কেউ খুঁটি আনছেন, কেউ খুঁটি পুতছেন, কেউ চট টানাচ্ছেন, কেউ ময়দান পরিষ্কার করছেন।

পাশাপাশি এগিয়ে চলছে প্রাশাসনিক নিরাপত্তাজনিত প্রস্তুতির কাজ । ময়দানে স্থায়ীভাবে বসানো হচ্ছে সিসি টিভি, বাড়ানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ শুক্রবার দুপুরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে ১২ জানুয়ারি থেকে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আমরা কাজ করছি। এখানে লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম হয়। ট্রাফিক জ্যাম থেকে শুরু করে কোথাও যেন সমস্যা না হয়, মুসল্লিরা যেন সুন্দরভাবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে আসতে পারে, সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ওয়াচ টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্থায়ী সিসি টিভি নাগানো হবে। প্রতিবছর আর সিসি টিভিটা খুলতে হবে না। ওয়াচ টাওয়ার গত বছর ছিল ১০টি, এবার ১৫টি ওয়াচ টাওয়ারের কাজ শেষের পথে। ইজতেমা মাঠের চতুরপাশে সাদা পোশাকে পুলিশ এখন থেকেই কাজ করছে।

তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমাকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বীদের সঙ্গে আলোচনা করেই যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ইজতেমা মুরব্বী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেখানে পুলিশ দেওয়া দরকার সেখানে পুলিশ দেওয়া হবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের চতুরপাশে পুলিশের কন্ট্রোলরুম থাকবে। এ ছাড়া একটি কেন্দ্রীয় এবং পাঁচটি সাব কন্ট্রোল রুম থাকবে।

তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর এ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের তিনদিন অবস্থানের জন্য তৈরি করা হয় বিশাল মাঠে চটের শামিয়ানা। তৈরি করা হয় বয়ানমঞ্চ, দোয়া মঞ্চ, বিদেশি মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর-দক্ষিণ দিকে নিবাস, তুরাগ নদীতে ভাসমান সেতু, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এবারের ইজতেমার প্রথমপর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয়পর্ব হবে ১৯, ২০ ও ২১ জানুয়ারি।
বিশ্ব ইজতেমায় প্রতি বছর ২৫ লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হয়। আখেরি মোনাজাতের দিন এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। যা টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরের ২৬০ একরের ইজতেমা ময়দানের ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্থান সংকট এবং জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে।

ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন ও দাওয়াতে তাবলিগের কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাত নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর