ঢাকা ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘদিন যাবৎ জমিতে তামাক চাষ করছে কৃষকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৯:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৪০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তামাকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বান্দরবানের লামা। ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় ২৬ বছর যাবৎ তামাক চাষ হয়ে আসছে এই এলাকায়। বেশ কয়েকটি কোম্পানি দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র জনপদে তামাক চাষ ও বিস্তারে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে।

উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সবকয়টি তামাক কোম্পানির সহায়তায় ৯ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে আরো প্রায় ২ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। লামা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে লামা উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৫শ’ হেক্টর।

২০১১ইং সালে উপজেলা চাষী স্বার্থরক্ষা কমিটির তামাক চাষ বন্ধ ও ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়ে বান্দরবান জর্জ কোর্টে তামাক চাষের বৈধতা নিয়ে রিট করলে আদালত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বমোট ১ হাজার হেক্টর চাষের অনুমতি দেয়। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। সমগ্র জেলা ঘুরে দেখা যায় এক ফসলি, দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমি সহ সরকারী রিজার্ভ, নদীর দু’পার তামাক চাষের দখলে।

এমনকি কৃষি অফিস সহ সরকারি নিজস্ব জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। সরকার তামাক চাষের বিরোধীতা করছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসের অব্যবস্থাপনা চাষীরা তামাক চাষের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেপরোয়া তামাক চাষের ফলে পরিবেশ ও সমাজের নানা ক্ষতি, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও নেশাগ্রস্থতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আরো জানা যায়, বর্তমানে লামা উপজেলায় ৫ হাজার ৫ শত জন চাষী তামাক চাষে জড়িত।

লামা পৌরসভার কৃষক নুরুল আমিন, মংক্যহ্লা মার্মা, রশিচন্দ্র ত্রিপুরা, নীলকান্ত বড়ুয়া, মংবাচিং মার্মাসহ একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি পণ্য চাষ করে তেমন কোন সহায়তা পাওয়া যায়না। তাই আমরা আগে ধান ও শস্য চাষ করলেও বর্তমানে তামাক চাষে করছি। তামাক কোম্পানীর ফিল্ড অফিসাররা চাষাবাদে হাতে কলমে আমাদের শিক্ষা দেয় এবং নানাবিধ সহায়তা করে। সে তুলনায় কৃষি বিভাগের সহায়তা অপ্রতুল।

উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে অবহেলা, দায়িত্ব পালনে অনিহা, কৃষকের সাথে দূরত্ব, সরকারের কৃষি উন্নয়নে গৃহীত নানান প্রকল্প কৃষককে অবহিত না করা, সার ডিলারদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে সার বাণিজ্য, কৃষি উপকরণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব, কৃষকদের সাথে নিয়মিত কৃষি সমাবেশ না করা, বীজ বিতরণে অনিয়ম, পণ্য বিপনণে অসহযোগিতাসহ ব্যাপক দুর্নীতির কারণে সিংহভাগ আবাদি জমি আজ তামাকের দখলে চলে গেছে বলে জানায় তারা।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ধান ও শস্য চাষে সার চাইলে পাইনা। কিন্তু তামাক চাষীদের প্রয়োজন মত সার দেয়া হয়। সরকারের ভর্তুকির সার তামাকে ব্যবহার করছে। এই বিষয়ে অসাধু সার ব্যবসায়ী ও কৃষি অফিসের দায়িত্বরত কর্মচারীরা জড়িত।

তামাকের আগ্রাসন নিয়ে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার নুরে আলম বলেন, তামাক চাষীদের কোম্পানীরা যে সুবিধা প্রদান করছে কৃষি অফিস তা দিতে না পারায় তামাকের আবাদ বেড়েছে। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী জমি ও রিজার্ভ এলাকায় তামাক চাষ কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।

তামাকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে লামা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. শফিকুর রহমান মজুমদার বলেন, তামাক গ্রহণে মানুষের ক্যান্সার, হার্টের বিভিন্ন রোগ, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং ধুয়াবিহীন তামাক জর্দা ও সাদাপাতা ব্যবহারের ফলে খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকের কারণে প্রায় এক লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া ৩ থেকে ৪ লক্ষ লোক তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে অসুখ ও অক্ষমতাজনিত কুফল ভোগ করে।

মরণ চাষ তামাক নিয়ে বান্দরবান কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাব হোসেন বলেন, যেভাবে তামাক চাষের আবাদ বাড়ছে তা যথারীতি অত্র জনপদের জন্য হুমকি সরুপ।

ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে সরকার কর্তৃক স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য সহ নানান পদক্ষেপ সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দীর্ঘদিন যাবৎ জমিতে তামাক চাষ করছে কৃষকরা

আপডেট টাইম : ০৭:০৯:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তামাকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বান্দরবানের লামা। ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় ২৬ বছর যাবৎ তামাক চাষ হয়ে আসছে এই এলাকায়। বেশ কয়েকটি কোম্পানি দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র জনপদে তামাক চাষ ও বিস্তারে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে।

উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সবকয়টি তামাক কোম্পানির সহায়তায় ৯ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে আরো প্রায় ২ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। লামা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে লামা উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৫শ’ হেক্টর।

২০১১ইং সালে উপজেলা চাষী স্বার্থরক্ষা কমিটির তামাক চাষ বন্ধ ও ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়ে বান্দরবান জর্জ কোর্টে তামাক চাষের বৈধতা নিয়ে রিট করলে আদালত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বমোট ১ হাজার হেক্টর চাষের অনুমতি দেয়। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। সমগ্র জেলা ঘুরে দেখা যায় এক ফসলি, দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমি সহ সরকারী রিজার্ভ, নদীর দু’পার তামাক চাষের দখলে।

এমনকি কৃষি অফিস সহ সরকারি নিজস্ব জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। সরকার তামাক চাষের বিরোধীতা করছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসের অব্যবস্থাপনা চাষীরা তামাক চাষের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেপরোয়া তামাক চাষের ফলে পরিবেশ ও সমাজের নানা ক্ষতি, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও নেশাগ্রস্থতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আরো জানা যায়, বর্তমানে লামা উপজেলায় ৫ হাজার ৫ শত জন চাষী তামাক চাষে জড়িত।

লামা পৌরসভার কৃষক নুরুল আমিন, মংক্যহ্লা মার্মা, রশিচন্দ্র ত্রিপুরা, নীলকান্ত বড়ুয়া, মংবাচিং মার্মাসহ একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি পণ্য চাষ করে তেমন কোন সহায়তা পাওয়া যায়না। তাই আমরা আগে ধান ও শস্য চাষ করলেও বর্তমানে তামাক চাষে করছি। তামাক কোম্পানীর ফিল্ড অফিসাররা চাষাবাদে হাতে কলমে আমাদের শিক্ষা দেয় এবং নানাবিধ সহায়তা করে। সে তুলনায় কৃষি বিভাগের সহায়তা অপ্রতুল।

উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে অবহেলা, দায়িত্ব পালনে অনিহা, কৃষকের সাথে দূরত্ব, সরকারের কৃষি উন্নয়নে গৃহীত নানান প্রকল্প কৃষককে অবহিত না করা, সার ডিলারদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে সার বাণিজ্য, কৃষি উপকরণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব, কৃষকদের সাথে নিয়মিত কৃষি সমাবেশ না করা, বীজ বিতরণে অনিয়ম, পণ্য বিপনণে অসহযোগিতাসহ ব্যাপক দুর্নীতির কারণে সিংহভাগ আবাদি জমি আজ তামাকের দখলে চলে গেছে বলে জানায় তারা।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ধান ও শস্য চাষে সার চাইলে পাইনা। কিন্তু তামাক চাষীদের প্রয়োজন মত সার দেয়া হয়। সরকারের ভর্তুকির সার তামাকে ব্যবহার করছে। এই বিষয়ে অসাধু সার ব্যবসায়ী ও কৃষি অফিসের দায়িত্বরত কর্মচারীরা জড়িত।

তামাকের আগ্রাসন নিয়ে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার নুরে আলম বলেন, তামাক চাষীদের কোম্পানীরা যে সুবিধা প্রদান করছে কৃষি অফিস তা দিতে না পারায় তামাকের আবাদ বেড়েছে। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী জমি ও রিজার্ভ এলাকায় তামাক চাষ কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।

তামাকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে লামা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. শফিকুর রহমান মজুমদার বলেন, তামাক গ্রহণে মানুষের ক্যান্সার, হার্টের বিভিন্ন রোগ, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং ধুয়াবিহীন তামাক জর্দা ও সাদাপাতা ব্যবহারের ফলে খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকের কারণে প্রায় এক লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া ৩ থেকে ৪ লক্ষ লোক তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে অসুখ ও অক্ষমতাজনিত কুফল ভোগ করে।

মরণ চাষ তামাক নিয়ে বান্দরবান কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাব হোসেন বলেন, যেভাবে তামাক চাষের আবাদ বাড়ছে তা যথারীতি অত্র জনপদের জন্য হুমকি সরুপ।

ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে সরকার কর্তৃক স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য সহ নানান পদক্ষেপ সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে।