ঢাকা ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি জলাবদ্ধতার কারণে ধান চাষ করতে পারছে না কৃষকেরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ২৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার সব ক’টি হাওরের প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি জলাবদ্ধতার কারণে ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকেরা। এতে কৃষকদের বোরো আবাদ এক মাস পিছিয়ে গেল। সে কারণেই কৃষকেরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। জেলার পাকনা হাওরে সরেজমিন দেখা গেছে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। প্রতি বছর পৌষের শুরুতে ফসলি জমিতে ধান রোপণ করার কাজে ব্যস্ত থাকেন কৃষকেরা। এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা হচ্ছে না। আংশিক জমি রোপণের কাজ শুরু হলেও হাওর এলাকার হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমি এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

হাওরের জমিতে কর্মরত ফেনারাবাঁক গ্রামের কৃষক সাইদুল মনের দুঃখে এই প্রতিবেদককে বলেন, গতবার নিলো ফাইন্নে আর অহন জলাবদ্ধতায় আমরা সঠিক সময়ে ক্ষেতে ধান রোপাইতে পারছি না। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কৃষকেরা জানান কানাই খালী নদী থেকে গজারিয়ার স্লুইস গেট পর্যন্ত নদী খনন হলেই এর সমাধান কিছুটা হলেও হতো।

সুনামগঞ্জের বোরো ফসল দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গত মওসুমে ফসল হারিয়ে নতুন ফসলের আশায় অনেক কৃষকই মহাজনী দাদন, চড়া সুদে কৃষি জমি আবাদের স্বপ্নে জাল বুনছেন। নভেম্বরে বীজতলায় সময়মতো বীজ ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি তারা। পৌষ মাষে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হলে চলতি মওসুমে এখনো ধান রোপণ শুরু হয়নি।

জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লাসহ ১১টি উপজেলার পাকনা হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, সোনামোড়ল হাওর, খরচার হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওরসহ বড় বড় হাওরগুলোর পানি এখনো কমছে না। হাওরের জমিগুলো এখনো ডুবে আছে পানিতে। ১ পৌষ থেকে ১৫ মাঘ পর্যন্ত বোরো আবাদের সময়। কিছু কিছু উঁচু জমিতে চাষাবাদ শুরু হলেও মূল হাওরগুলোতে এখনো জমি রোপণ কাজ শুরু হয়নি।

জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, চলতি বছর হাওরের পানি না কমায় কৃষকেরা একটু বিপাকে পড়েছেন। বেশ কয়েকবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনে পাকনা ও হালির হাওরে কাজ করা হয়েছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমবে, কৃষকেরা তাদের জমি রোপণের কাজ শুরু করতে পারেন।

জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামছুল আলম ঝুনু মিয়া বলেন, যেভাবে পানি কমছে তাতে কৃষিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত দুই দিন আগে আমি নিজ ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় করে পাকনা হাওরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। এর আগে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, বিলম্বে পানি কমায় আমরাও চিন্তিত।

প্রকৃতি বৈরী না হলে রোদ থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমবে বলে আশা করছি। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক স্বপন কুমার বলেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি নিষ্কাশন সময়মতো না হওয়ায় বোরো আবাদে কৃষকেরা সমস্যায় আছেন। তবে হাওরের উঁচু জমিতে ধানের চাষাবাদ চলছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমবে। কৃষকেরা তাদের জমি রোপণ শুরু করতে পারবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাওরের প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি জলাবদ্ধতার কারণে ধান চাষ করতে পারছে না কৃষকেরা

আপডেট টাইম : ০৩:৫৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার সব ক’টি হাওরের প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি জলাবদ্ধতার কারণে ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকেরা। এতে কৃষকদের বোরো আবাদ এক মাস পিছিয়ে গেল। সে কারণেই কৃষকেরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। জেলার পাকনা হাওরে সরেজমিন দেখা গেছে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। প্রতি বছর পৌষের শুরুতে ফসলি জমিতে ধান রোপণ করার কাজে ব্যস্ত থাকেন কৃষকেরা। এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা হচ্ছে না। আংশিক জমি রোপণের কাজ শুরু হলেও হাওর এলাকার হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমি এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

হাওরের জমিতে কর্মরত ফেনারাবাঁক গ্রামের কৃষক সাইদুল মনের দুঃখে এই প্রতিবেদককে বলেন, গতবার নিলো ফাইন্নে আর অহন জলাবদ্ধতায় আমরা সঠিক সময়ে ক্ষেতে ধান রোপাইতে পারছি না। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কৃষকেরা জানান কানাই খালী নদী থেকে গজারিয়ার স্লুইস গেট পর্যন্ত নদী খনন হলেই এর সমাধান কিছুটা হলেও হতো।

সুনামগঞ্জের বোরো ফসল দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গত মওসুমে ফসল হারিয়ে নতুন ফসলের আশায় অনেক কৃষকই মহাজনী দাদন, চড়া সুদে কৃষি জমি আবাদের স্বপ্নে জাল বুনছেন। নভেম্বরে বীজতলায় সময়মতো বীজ ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি তারা। পৌষ মাষে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হলে চলতি মওসুমে এখনো ধান রোপণ শুরু হয়নি।

জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লাসহ ১১টি উপজেলার পাকনা হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, সোনামোড়ল হাওর, খরচার হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওরসহ বড় বড় হাওরগুলোর পানি এখনো কমছে না। হাওরের জমিগুলো এখনো ডুবে আছে পানিতে। ১ পৌষ থেকে ১৫ মাঘ পর্যন্ত বোরো আবাদের সময়। কিছু কিছু উঁচু জমিতে চাষাবাদ শুরু হলেও মূল হাওরগুলোতে এখনো জমি রোপণ কাজ শুরু হয়নি।

জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, চলতি বছর হাওরের পানি না কমায় কৃষকেরা একটু বিপাকে পড়েছেন। বেশ কয়েকবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনে পাকনা ও হালির হাওরে কাজ করা হয়েছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমবে, কৃষকেরা তাদের জমি রোপণের কাজ শুরু করতে পারেন।

জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামছুল আলম ঝুনু মিয়া বলেন, যেভাবে পানি কমছে তাতে কৃষিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত দুই দিন আগে আমি নিজ ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় করে পাকনা হাওরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। এর আগে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, বিলম্বে পানি কমায় আমরাও চিন্তিত।

প্রকৃতি বৈরী না হলে রোদ থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমবে বলে আশা করছি। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক স্বপন কুমার বলেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি নিষ্কাশন সময়মতো না হওয়ায় বোরো আবাদে কৃষকেরা সমস্যায় আছেন। তবে হাওরের উঁচু জমিতে ধানের চাষাবাদ চলছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই পানি কমবে। কৃষকেরা তাদের জমি রোপণ শুরু করতে পারবেন।