জাকির হোসাইনঃ বর্ষায় নাও (নৌকা), আর শুকনায় পাও (পা) শত বছর ধরে চলে আসা ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছে এ প্রবাদ এবার মিথ্যে হতে চলেছে। হাওরবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়। শুধু নৌকা নয়, এবার হাওরে ফসলের বুক চিরে ব্রিজের ও পাকা সড়কে চলবে বাস-ট্রাক গাড়ি ঘোড়া। শেষ হতে চলেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আর নানা বিড়ম্বনার।
বিস্তীর্ণ হাওরে ফসলের মাঠের মাঝখান দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাকা সড়ক। এ পথে যাতায়াত করা যাবে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর ক’দিন পরই হাওর থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকার সঙ্গে বাস চলাচল। এতে করে অবহেলিত হাওরের সামগ্রিক জীবন-যাত্রায় পেয়েছে নতুন মাত্রা। বদলে যাবে কিশোরগঞ্জের হাওরের চিরচেনা দৃশ্য।
এক সময়ের দুর্গম হাওর অষ্টগ্রাম থেকে জলপথে কিশোরগঞ্জ আসতে সময় লাগতো তিন থেকে ৪ ঘণ্টা। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যারপরনাই বিড়ম্বনা পোহাতে হতো জল যাতায়াতে। পাকা সড়ক নির্মাণ হওয়ায় এখন এক ঘণ্টারও কম সময়ে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছেন হাওরবাসী। কিন্তু সেদিন বুঝি শেষ হতো চলেছে। মাত্র ২১ কিলোমিটার পাকা সড়ক আর কয়েকটি পাকা সেতু বদলে দিচ্ছে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র। উন্মোচিত হচ্ছে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত ।
এরই মাঝে হাওরের মাঝখান দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা রাস্তা। শেষের পথে বেশ কয়েকটি সেতুর কাজ । আর কয়েক মাস পরই বাসে করে গভীর হাওর থেকে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারছেন হাওরবাসী। তাই কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদে এখন অনেকটা উৎসবের আমেজ। অষ্টগ্রামের জনগন / মানুষজন বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে সত্যি সত্যি মাঠের মাঝখান দিয়ে পাকা সড়ক হবে! নদীর দুই তীরকে এক করবে বিশাল পাকা সেতু! বোরো ধান আর রূপালী মৎস্য সম্পদের খনি হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৫টিই হাওর অধ্যুষিত।
কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এতোদিন হাওরবাসী ছিল অবহেলিত। এলাকাবাসী মনে করছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর কৃষিতে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষক পাবে ফসলের ন্যায্য মূল্য।জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার বাজিতপুর থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত হাওরের মাঝ দিয়ে পাকা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়ে ছিল সরকার।এবার সম্পন্ন করে প্রায় শেষ পথে।
কিশোরগঞ্জ-৪ (মিঠামইন,ইটনা,অষ্টগ্রাম) এলাকার সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন , তার বাবা বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্বপ্ন দেখতেন, ঢাকা থেকে সড়ক পথে একদিন বাড়ি যাবে হাওরবাসী। সে স্বপ্ন এখন হাতের নাগালে। তিনটি পাকা সেতু, ঘোড়াউত্রা নদীতে ফেরিসহ ২১ কিলোমিটার সাব-মার্সিবল পাকা সড়ক নির্মাণ প্রকল্প এরই মধ্যে শেষের পর্যায়ে।
খুব শীঘ্র প্রকল্পের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। এছাড়া শীঘ্র হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিটামইন ও অষ্টগ্রামকে সংযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘অলওয়েদার’ পাকা সড়ক। জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী হাওর বার্তাকে জানান, এরই মধ্যে তিন উপজেলাকে যুক্ত করে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কয়েকটি নদীতে যানবাহন পারাপারের জন্য চামড়া বন্দরে পল্টুন আনা হয়েছে। এ দিকে অষ্টগ্রামে ধলেশ্বরী নদীতে প্রায় ৩৪১ মিটার দীর্ঘ পাকা সেতু নির্মাণ কাজও শেষের দিকে।
৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন এ সেতু প্রকল্পে থাকছে, এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও একটি কালভার্ট। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে অষ্টগ্রামের কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়াও হাওরের মিঠামইন ও ইটনার উপজেলার সঙ্গে সরাসরি রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ সম্ভব । স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সূএঃ ছবি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপির ফেইজবুক থেকে নেওয়া।