ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকদের ভাসমান শাকসবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৩৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পানির ওপর ভাসমান শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা বেশ সফল। তারা সবজি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন।

যেসব অঞ্চল পানির নিচে থাকে, সেখানে কৃষকদের ভাসমান সবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মূলত কচুরিপানা দিয়ে শয্যা (বেড) তৈরি করা হয়। প্রতিটি শয্যা ২০ মিটার লম্বা, প্রায় দেড় মিটার পুরু ও প্রস্থ চার মিটার। তিনটি বেড মিলে একটি প্রকল্প।

সদর উপজেলায় এমন মোট ৪৫টি প্রকল্পে শাকসবজির আবাদ চলছে। কৃষকেরা প্রধানত লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, কলমি লতা, ঢ্যাঁড়স, শিম, লতিরাজ কচু ও লাউয়ের চাষ করছেন।

প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। কৃষি কর্মকর্তারা চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিচ্ছেন চাষিদের। সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া, গোবরা, চাপাইলপাড়া ও চেচানিয়া কান্দি এলাকায় এ ধরনের ভাসমান সবজির আবাদ করা হচ্ছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।

বিশেষ করে ভূমিহীন মানুষেরা এতে বেশ সুফল পাচ্ছেন। গোবরা ইউনিয়নের বাবু রাম বিশ্বাস বলেন, এভাবে পানির ওপর কচুরিপানার বেডে শাকসবজির চাষ করা সম্ভব আগে কখনো তারা চিন্তাই করেননি। কৃষি কর্মকর্তারা এ ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছেন। এখন শাকসবজি বিক্রি করে তারা অর্থ উপার্জন করছেন।

সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের মোস্তাফিজুর রহমান ও হাকিম মোল্লা বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকার লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, গিমা কলমি, ঢ্যাঁড়স, শিম ও লাউ বিক্রি করেছি। নতুন আরও সবজি হচ্ছে।’

সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ার রানা কাজী বলেন, ‘ভাসমান সবজি চাষের প্রতি আমাদের কোনো ধারণা ছিল না, কিন্তু এ বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো। আমার পাঁচটি বেড তৈরি করতে চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি এরই মধ্যে ১০-১১ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। এখনো অনেক সবজি বেডে রয়েছে।’

মাঝিগাতি ইউনিয়নের রেজাউল কাজী বলেন, ‘গত বছরে প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় সরকারি খরচে ভাসমান সবজি চাষ করি। তখন একটা ধারণা হয়। এ ধরনের চাষ লাভজনক। তাই আমি এবার নিজে চারটা বেডে সবজি চাষ করেছি। খুব ভালো সবজি হয়েছে। যেসব মজা পুকুর, ডোবা ও খাল এমনিতেই পড়ে থাকে, সেসব জায়গায় আমরা ভাসমান সবজির চাষ করতে পারছি।’

সদর উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, যেসব এলাকা বছরের বেশির ভাগ সময় পানির নিচে থাকে, সেসব এলাকায় ভাসমান সবজি চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন। তবে এ ধরনের উদ্যোগ কৃষকদের মাঝে আগে ছিল না, এই প্রদর্শনী প্রকল্প দেখে এখন অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, কমপক্ষে পাঁচটি বেড থাকলে প্রত্যেক কৃষককে তাঁদের পক্ষে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় দুই বছর ধরে এ ধরনের প্রদর্শনী প্রকল্প চলছে। ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কৃষকদের ভাসমান শাকসবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৩:০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পানির ওপর ভাসমান শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা বেশ সফল। তারা সবজি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন।

যেসব অঞ্চল পানির নিচে থাকে, সেখানে কৃষকদের ভাসমান সবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মূলত কচুরিপানা দিয়ে শয্যা (বেড) তৈরি করা হয়। প্রতিটি শয্যা ২০ মিটার লম্বা, প্রায় দেড় মিটার পুরু ও প্রস্থ চার মিটার। তিনটি বেড মিলে একটি প্রকল্প।

সদর উপজেলায় এমন মোট ৪৫টি প্রকল্পে শাকসবজির আবাদ চলছে। কৃষকেরা প্রধানত লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, কলমি লতা, ঢ্যাঁড়স, শিম, লতিরাজ কচু ও লাউয়ের চাষ করছেন।

প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। কৃষি কর্মকর্তারা চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিচ্ছেন চাষিদের। সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া, গোবরা, চাপাইলপাড়া ও চেচানিয়া কান্দি এলাকায় এ ধরনের ভাসমান সবজির আবাদ করা হচ্ছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।

বিশেষ করে ভূমিহীন মানুষেরা এতে বেশ সুফল পাচ্ছেন। গোবরা ইউনিয়নের বাবু রাম বিশ্বাস বলেন, এভাবে পানির ওপর কচুরিপানার বেডে শাকসবজির চাষ করা সম্ভব আগে কখনো তারা চিন্তাই করেননি। কৃষি কর্মকর্তারা এ ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছেন। এখন শাকসবজি বিক্রি করে তারা অর্থ উপার্জন করছেন।

সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের মোস্তাফিজুর রহমান ও হাকিম মোল্লা বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকার লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, গিমা কলমি, ঢ্যাঁড়স, শিম ও লাউ বিক্রি করেছি। নতুন আরও সবজি হচ্ছে।’

সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ার রানা কাজী বলেন, ‘ভাসমান সবজি চাষের প্রতি আমাদের কোনো ধারণা ছিল না, কিন্তু এ বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো। আমার পাঁচটি বেড তৈরি করতে চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি এরই মধ্যে ১০-১১ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। এখনো অনেক সবজি বেডে রয়েছে।’

মাঝিগাতি ইউনিয়নের রেজাউল কাজী বলেন, ‘গত বছরে প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় সরকারি খরচে ভাসমান সবজি চাষ করি। তখন একটা ধারণা হয়। এ ধরনের চাষ লাভজনক। তাই আমি এবার নিজে চারটা বেডে সবজি চাষ করেছি। খুব ভালো সবজি হয়েছে। যেসব মজা পুকুর, ডোবা ও খাল এমনিতেই পড়ে থাকে, সেসব জায়গায় আমরা ভাসমান সবজির চাষ করতে পারছি।’

সদর উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, যেসব এলাকা বছরের বেশির ভাগ সময় পানির নিচে থাকে, সেসব এলাকায় ভাসমান সবজি চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন। তবে এ ধরনের উদ্যোগ কৃষকদের মাঝে আগে ছিল না, এই প্রদর্শনী প্রকল্প দেখে এখন অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, কমপক্ষে পাঁচটি বেড থাকলে প্রত্যেক কৃষককে তাঁদের পক্ষে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় দুই বছর ধরে এ ধরনের প্রদর্শনী প্রকল্প চলছে। ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে।