ঢাকা ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চরে জমিতে এখন সোনা ফলাচ্ছে কৃষকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৫৬৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বালির আস্তরণ পড়ে জমি নিষ্ফলা হবে এমন আশঙ্কায় এক সময় তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। ধু ধু বালুচরের পতিত জমি নিয়ে যে এলাকার মানুষ ছিল দিশেহারা, সে জমিতে এখন সোনা ফলছে। বাদাম, ডাল, মরিচ, বেগুন, শিম, কপি, পেঁয়াজ, রসুন ছাড়াও শত শত হেক্টর জমিতে বোনা হচ্ছে আলু আর ভুট্টা।

বন্যার পর প্রকৃতি যেন তার সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছে এখানে। আর তা বেড়ে উঠছে ডগমগে হয়ে। এখন বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চরাঞ্চলে চাষে বিনিয়োগ করছেন। একরের পর একর জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষাবাদ করছেন। রবি শস্যের পাশাপাশি পুরোদমে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। গোটা চরাঞ্চলের মানুষ ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। অনেক ভূমিহীন কৃষক হয়েছেন জমির মালিক। অভাবকে দূরে ঠেলে চরাঞ্চলের মানুষ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। এ চিত্র রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুরে তিস্তার চরাঞ্চলের।

সরেজমিনে জানা যায়, কয়েক দশক আগে তিস্তা নদীর গতিপথ বদলের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় চর জাগে। চরের ধু ধু বালুতে কোনো আবাদ হতো না। বেশির ভাগ জমি অনাবাদি থাকায় এলাকার মানুষ ছিল হতদরিদ্র। অনাবাদি বলে জমিও কেউ কিনতে চাইত না। ফলে চরাঞ্চলের কৃষকদের অভাব লেগেই থাকত। পরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু করেন। চরাঞ্চলের কৃষক শাহআলম মিয়া জানান, প্রথম বছরে এক একর জমিতে ৮-১০ মণ ভুট্টা চাষ হয়। সেই জমিতেই পরের বছর ৩০-৪০ মণ ভুট্টা চাষ হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে ভুট্টার ফলন। বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি একরে ১২০ থেকে ১৩০ মণ ভুট্টা চাষ হয়।

চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ বেশি হওয়ার কারণে শ্রমিকের হাতে সারা বছরই কাজ থাকছে। ভুট্টার ক্ষেত প্রস্তুত, নিড়ানি ও সেচ দেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করেন স্থানীয় শ্রমিকেরা। এ ছাড়া ভুট্টা বড় হলে তা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ, মাড়াই, বাছাই, শুকানোসহ নানা কাজে বছরজুড়ে এই এলাকার শ্রমিক ব্যস্ত থাকেন। ভুট্টা থেকে আলাদা করা মোচা ও ভুট্টার গাছ এখন জ্বালনি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। শ্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েক বছরে নারীরাও ব্যাপকভাবে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

নারী শ্রমিক দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। ছাওলা ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান শাহ আব্দুল হাকিম জানান, কয়েক বছর আগেও চরাঞ্চলের মানুষ অভাবের কারণে শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে লাগিয়ে দিতো। এখন আর তাদের অভাব নেই। এখন শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় চরাঞ্চলে তামাক চাষ কমেছে। অনেক কৃষক তামাকের পরিবর্তে এখন ভুট্টা চাষ করছেন।

পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ভুট্টা অনেক সহনশীল এবং ঝুঁকি কম। তামাক একটি ঝুঁকিপূর্ণ ফসল, ফলনে ব্যয় বেশি। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর পরিবেশের জন্য তামাকের ক্ষতিকর দিক জেনে তারা এখন ভুট্টা আবাদে আগ্রহী বেশি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চরে জমিতে এখন সোনা ফলাচ্ছে কৃষকরা

আপডেট টাইম : ১১:৫৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বালির আস্তরণ পড়ে জমি নিষ্ফলা হবে এমন আশঙ্কায় এক সময় তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। ধু ধু বালুচরের পতিত জমি নিয়ে যে এলাকার মানুষ ছিল দিশেহারা, সে জমিতে এখন সোনা ফলছে। বাদাম, ডাল, মরিচ, বেগুন, শিম, কপি, পেঁয়াজ, রসুন ছাড়াও শত শত হেক্টর জমিতে বোনা হচ্ছে আলু আর ভুট্টা।

বন্যার পর প্রকৃতি যেন তার সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছে এখানে। আর তা বেড়ে উঠছে ডগমগে হয়ে। এখন বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চরাঞ্চলে চাষে বিনিয়োগ করছেন। একরের পর একর জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষাবাদ করছেন। রবি শস্যের পাশাপাশি পুরোদমে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। গোটা চরাঞ্চলের মানুষ ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। অনেক ভূমিহীন কৃষক হয়েছেন জমির মালিক। অভাবকে দূরে ঠেলে চরাঞ্চলের মানুষ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। এ চিত্র রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুরে তিস্তার চরাঞ্চলের।

সরেজমিনে জানা যায়, কয়েক দশক আগে তিস্তা নদীর গতিপথ বদলের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় চর জাগে। চরের ধু ধু বালুতে কোনো আবাদ হতো না। বেশির ভাগ জমি অনাবাদি থাকায় এলাকার মানুষ ছিল হতদরিদ্র। অনাবাদি বলে জমিও কেউ কিনতে চাইত না। ফলে চরাঞ্চলের কৃষকদের অভাব লেগেই থাকত। পরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু করেন। চরাঞ্চলের কৃষক শাহআলম মিয়া জানান, প্রথম বছরে এক একর জমিতে ৮-১০ মণ ভুট্টা চাষ হয়। সেই জমিতেই পরের বছর ৩০-৪০ মণ ভুট্টা চাষ হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে ভুট্টার ফলন। বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি একরে ১২০ থেকে ১৩০ মণ ভুট্টা চাষ হয়।

চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ বেশি হওয়ার কারণে শ্রমিকের হাতে সারা বছরই কাজ থাকছে। ভুট্টার ক্ষেত প্রস্তুত, নিড়ানি ও সেচ দেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করেন স্থানীয় শ্রমিকেরা। এ ছাড়া ভুট্টা বড় হলে তা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ, মাড়াই, বাছাই, শুকানোসহ নানা কাজে বছরজুড়ে এই এলাকার শ্রমিক ব্যস্ত থাকেন। ভুট্টা থেকে আলাদা করা মোচা ও ভুট্টার গাছ এখন জ্বালনি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। শ্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েক বছরে নারীরাও ব্যাপকভাবে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

নারী শ্রমিক দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। ছাওলা ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান শাহ আব্দুল হাকিম জানান, কয়েক বছর আগেও চরাঞ্চলের মানুষ অভাবের কারণে শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে লাগিয়ে দিতো। এখন আর তাদের অভাব নেই। এখন শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় চরাঞ্চলে তামাক চাষ কমেছে। অনেক কৃষক তামাকের পরিবর্তে এখন ভুট্টা চাষ করছেন।

পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ভুট্টা অনেক সহনশীল এবং ঝুঁকি কম। তামাক একটি ঝুঁকিপূর্ণ ফসল, ফলনে ব্যয় বেশি। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর পরিবেশের জন্য তামাকের ক্ষতিকর দিক জেনে তারা এখন ভুট্টা আবাদে আগ্রহী বেশি।