হাওর বার্তা ডেস্কঃ অগ্রহায়ণ মাসে টানা চার দিনের ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে হাকালুকি হাওরের অধিকাংশ বিল তলিয়ে গেছে। বর্ষায় মাছে মড়ক আর মাছ আহরণ মওসুমে পাহাড়ি ঢল চোখের সামনে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবীদের তিন বছরের প্রচেষ্টার ফল। সর্বস্ব দিয়ে ঢলের পানি বিলে প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। যার ফলে হাওরজুড়ে মৎস্যজীবীদের মধ্যে চলছে হাহাকার। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
দক্ষিণ হাকালুকি মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চকিয়া বিলের ইজারাদার আনোয়ার হোসাইন জানান, সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়ার তিন বছর পর এবার আমাদের মাছ ধরে বিক্রি করার কথা। কিন্তু গত বর্ষায় মাছে মড়ক লেগে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর এখন মাছ ধরার মুহূর্তে হঠাৎ টানা বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে বিলের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দুই দফা ক্ষতি কাটিয়ে ইজারা মূল্যের সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করে মুনাফা করা কঠিন হবে। বুধবার ১৩ই ডিসেম্বর সরজমিন হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল এলাকায় গেলে উজান থেকে আসা পানি বিলে প্রবেশ ঠেকাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা যায় মৎস্যজীবীদের। তাছাড়া বিভিন্ন নদনদী দিয়ে পানি হাকালুকি হাওরে দ্রুত বেগে প্রবেশ করছে। এভাবে পানি প্রবেশ করতে থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় হাকালুকি হাওরের সব বিল তলিয়ে গিয়ে পানিতে একাকার হয়ে যাবে।
এদিকে হাকালুকি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক, নাগুয়া ও ধলিয়া বদ্ধ জলমহালের ইজারাদার মিরজান আলী, রাখাল শাহ কান্দি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ও গৌড়কুড়ি বিল বদ্ধ জলমহালের ইজারাদার মতিলাল রায় মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা মৎস্য কমিটির সভাপতি বরাবরে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ১২ই ডিসেম্বর লিখিত আবেদন করেছেন। লিখিত আবেদনে তারা জানান, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরজমিন তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
কুলাউড়া মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হাকালুকির প্রধান সম্পদ হচ্ছে মাছ। হাওর তীরের ৫টি উপজেলায় এই মাছের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে ৬ সহস্রাধিক জেলে পরিবার। তাছাড়া কৃষি ছাড়াও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাওরের ওপর নির্ভরশীল হাওর তীরের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জ এই ৫টি উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
দুই দফায় মাছ, অকাল বন্যায় শতভাগ বোরো, চলতি অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকের টানা বৃষ্টিতে বোরোর বীজতলা এবং ২ শতাধিক হেক্টর রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে। ফলে হাওর তীরের মানুষ সব ক্ষেত্রেই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কঠিনতর হয়ে পড়ছে মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা। মৎস্যজীবীরা জানান, পাহাড়ি ঢলে যে পানি নিয়ে আসছে, সেগুলো পলিবাহিত ঘোলা পানি।
এই পানি বিলে প্রবেশ করায় সব মাছ বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিলে মাছ থাকার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। এই ঘোলা ও পলিবাহিত পানি বিষক্রিয়ার মতোই। কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, আমি শুনেছি হাওরে পানি বাড়ছে। বিষয়টি দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাওরে পানি বাড়ার কারণে ভেতরে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
নৌকা যোগে হলেও দু-একদিনের মধ্যে হাওরের পরিস্থিতি দেখতে যাবো। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও জেলা মৎস্য কমিটির সভাপতি মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, তাদের লিখিত আবেদনের কপি আমার হাতে আসলে দেখে আইনিভাবে যা করা প্রয়োজন তা-ই করবো।