বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ‘অবিকল’ বলতে পারে রাউজানের মোনতাকিম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গায়ে কালো মুজিব কোট। পরনে সাদা পায়জামা। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। মুখে ভারী গোঁফ। বক্তৃতা দিতে দিতে ডান হাত তুলে তর্জনী উঁচিয়ে বলল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবাবের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’। হুংকারময় বক্তৃতায় মুহূর্তেই যেন কিছুক্ষণের জন্য সবাইকে ফিরে নিয়ে গেল সেই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান-বঙ্গবন্ধুর ভাষণস্থল রেসকোর্স ময়দানে। তার কচিকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি আগাগোড়া ‘অবিকল’ শুনে মুগ্ধ উপস্থিত হাজার হাজার জনতা।

এ দৃশ্য দেখা গেল ২৫ নভেম্বর রাউজান উপজেলা চত্বর ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি অর্জনে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশাল আনন্দ র‌্যালিশেষে গণসমাবেশে। সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষের সামনে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই বজ্রকণ্ঠের ভাষণটি বঙ্গবন্ধুর বেশ-ভঙ্গিমায় অবিকল মুখস্থ বলে প্রশংসা কুড়িয়েছে খুদে স্কুলছাত্র মোনতাকিম চৌধুরী। সেই সঙ্গে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপিসহ সকলের কাছ থেকে পেয়েছেন, ‘জুনিয়র বঙ্গবন্ধু’র উপাধি। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশ টেলিভিশন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা, স্বাধীনতা মেলার মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্ম, মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন বড় বড় অনুষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনিয়ে পেয়েছেন শত প্রশংসা আর পুরস্কার।

অনেক কৃতিত্বের অধিকারী মোনতাকিম চৌধুরী রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের লুধী চৌধুরীর বাড়ির হারুনুর চৌধুরী টিপু ও কাউছার আফরোজা লিপির ছেলে। সে রাউজান ইংলিশ স্কুল থেকে এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পরীক্ষা) দিয়েছে। বয়স মাত্র ১১ বছর। এ বয়সেই সে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মুখস্থ বলে এবং নাচ, কৌতুক, অভিনয়, বাংলা, ইংরেজি বক্তব্য প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বাজিমাত করছে।

স্কুলের শিক্ষকদের কাছে জানা যায়, ২০১৪ সালে রাউজান ইংলিশ স্কুল আয়োজিত বিজয় দিবসের র‌্যালিতে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক বাঙালি মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ নিজের কণ্ঠে রাজপথে তীব্র আওয়াজে বক্তৃৃতা আকারে শোনায় মোনতাকিম। এরপর সেটি শত শত মানুষকে আকৃষ্ট করলে পরবর্তীতে বিশেষ জাতীয় দিবসের বিভিন্ন মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ দেওয়ার একমাত্র শিশুটি হয়ে উঠে মোনতাকিম। তার ভাষণের স্টাইল, ঝাঁজালো আওয়াজ, হুংকার, ডান হাতের তর্জনী দিয়ে হুঁশিয়ারি সংকেত-সবই যেন বঙ্গবন্ধুর ছায়া বহন করে। রাউজান কলেজ মাঠের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলায়, উপজেলার বৈশাখী মেলায়, উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে, কলেজ মাঠে স্বাধীনতা দিবসে, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুল আলম হানিফের উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় নিজের সংগ্রামী কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণ শুনিয়েছে মোনতাকিম। ভাষণটি শুনিয়ে মোনতাকিম স্থানীয় এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বেশ কয়েকবার নগদ অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বাংলাদেশ টেলিভিশন তার কণ্ঠে ভাষণটি বিটিভি প্রচার করে। ১৫ আগস্ট নোয়াখালীর জাতীয় শোকদিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার জন্য মোনতাকিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু অসুস্থ থাকায় মোনতাকিম ওই অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি। ’ সর্বশেষ ২৫ নভেম্বর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার’ ও বিশ্ব ‘প্রামাণ্য ঐতিহ্য’র স্বীকৃতি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে ফজলে করিম হাজার হাজার জনতার সামনে ‘জুনিয়র বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাচ, অভিনয়, কৌতুক, উপস্থিত বাংলা, ইংলিশ, বক্তৃতাতেও বেশ পটু মোনতাকিম। কোনো কিছুতেই যেন জড়তা নেই তার। সে কারণে স্কুলের যেকোনো অনুষ্ঠানে মাইক্রোফোন থাকে তার দখলে। এ ক্ষেত্রে তাকে যথেষ্ট মনোবল ও নিবিড় তত্ত্বাবধানের মধ্যে রেখেছিলেন রাউজান ইংলিশ স্কুলের শিক্ষক জহির উদ্দিন জুয়েল। নিজের স্কুলসহ বড় বড় অনুষ্ঠানের মঞ্চে সাহসী চিত্তে বক্তব্য দিতে মোনতাকিমকে সহযোগিতা করেন ওই শিক্ষক।

রাউজান ইংশিল স্কুলের পরিচালক এস এম ইউসুফ আমিন, তসলিম উদ্দিন, গৌতম মল্লিক বলেন, মোনতাকিম স্কুলের অসম্ভব মেধাবী ছাত্র। তার অবস্থান এ গ্রেডে। মোনতাকিম চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দেবে। শিশুকাল থেকে সে অনেক বিষয়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে জানান দিয়েছে, সে একদিন দেশের রত্ন হবে।

মোনতাকিম বলেছে, ‘আমার দাদা আওয়ামী লীগ করতেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন। বাবাও আওয়ামী লীগ করেন। তাই আমিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রাখার জন্য এই ভাষণটি শিখছি এবং বলছি। এটি বঙ্গবন্ধুর মতো করে সবার সামনে বলতে ভালো লাগে আমার। ’

মোনতাকিমের বাবা হারুনুর চৌধুরী টিপু বলেন, ‘ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও বুকে ধারণ করে মানুষের সেবা করবে-এটাই আমার প্রত্যাশা মোনতাকিমের কাছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর