ঢাকা ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরিষার হলুদ ফুলে গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো এলাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৪৯৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীর মাঠে মাঠে বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষার আবাদ। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে আছে বেশিরভাগ ক্ষেত। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো এলাকা। আকৃষ্ট করছে মৌমাছিসহ সব প্রকৃতি প্রেমিককে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এবারে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার হেক্টর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং অপরিকল্পিত পুকুর খননে পানি জমে থাকায় সরিষার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে আশঙ্কা করছেন রাজশাহী কৃষি অফিস।

জেলার ৯ উপজেলাতেই কমবেশি সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। তবে গোদাগাড়ি, তানোর ও চর এলাকা এলাকা নিয়ে গঠিত বাঘা, চারঘাট ও পবায় সরিষার আবাদ বেশি হয়। রাজশাহীর বরেন্দ্র উপজেলা গোদাগাড়িতে এবারো বিস্তৃর্ণ চর ও এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে সরিষার। সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে উপজেলার বিভিন্ন বিলচড়াইগুলো। বাসুদেবপুর, কমলাপুর, আষাড়িয়াদহ চরাঞ্চল ও খাল-বিলে সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠ। এই উপজেলাতেই প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা সরিষা চাষ করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় উপজেলার খাল বিলে সরিষার ফুলে ফুলে ও মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে বাসুদেবপুর বিলচড়ুইসহ অনেক জায়গায়। সরিষার ফুলে ফুলে হলুদ বর্ণের বর্ণিল হওয়ায় বিলগুলোতে ও জমির আশপাশে দূর-দুরান্ত থেকে স্কুল কলেজের সৌখিন প্রকৃতি প্রেমিকরা বেড়াতে আসছেন।

জেলার বাঘা উপজেলাতেও সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠ। এ বছর অনেকেই আগাম সরিষা চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। উপজেলার সমতল এলাকার বাইরেও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এ বছর সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। বিশাল চরে বিস্তির্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষ করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। তাদের মনে এখন নতুন করে আশা সঞ্চার করেছে সরিষা।

বাঘার চরাঞ্চলের কৃষক ফজলু দেওয়ান জানান, এবার ৩ বিঘা জমিতে তিনি সরিষা আবাদ করেছেন। এ আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক অনেক কম লাগে। তার মতে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার লাভ হবে। তিনি বলেন, সরিষা চাষ করে মানুষ শুধু তেল-ই তৈরি করে না। এই সরিষা ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরি হয় যা গরুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে পলি জমে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে এ বছর ব্যাপক হারে সরিষার চাষ করা হয়েছে। বারি-১৪ জাতের সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করছেন। তার মতে, এ বছর উপযোগী সময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে একদিকে ক্ষেতের ফসলের উপকার হয়েছে অন্যদিকে কোটি টাকার সেচ খরচ বেচে গেছে কৃষকরা।

কৃষিপ্রধান উপজেলা মোহনপুরে সরিষা ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। চারদিকে তাকালে যেন সবুজের ফাঁকে হলুদের সমাহার। কখনো কখনো সরিষার ক্ষেতে বসছে পোকাখাদক বুলবুলি ও শালিকের ঝাঁক। অনেকটা প্রতিকূল আবহাওয়ার পরও এখানে প্রায় ১৩শ’ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার মাঠে মাঠে চাষ করা হয় রকমারি ফসল। সরিষা চাষ কিছুটা কম হলেও ফসলের মাঠের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে এসব সরিষার ক্ষেত। মাঠের চারদিক যেন হলুদে হলুদে পরিপূর্ণ। এক দেখাতেই মন কাড়বে পথচারীদের।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, এবারে মৌসুমের শেষ বৃষ্টিতে জেলার ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যায়। পানি না শুকানোর জন্য জমি সরিষা আবাদের উপযুক্ত না হওয়ায় আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে সরকারের সরিষা বীজ প্রণোদনা থাকায় কৃষকের উপকার হয়েছে এবং আগ্রহসহ সরিষার আবাদ করেছেন বলে তিনি জানান। পাশাপাশি তিনি সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সরিষার হলুদ ফুলে গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো এলাকা

আপডেট টাইম : ০৫:০১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীর মাঠে মাঠে বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষার আবাদ। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে আছে বেশিরভাগ ক্ষেত। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো এলাকা। আকৃষ্ট করছে মৌমাছিসহ সব প্রকৃতি প্রেমিককে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এবারে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার হেক্টর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং অপরিকল্পিত পুকুর খননে পানি জমে থাকায় সরিষার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে আশঙ্কা করছেন রাজশাহী কৃষি অফিস।

জেলার ৯ উপজেলাতেই কমবেশি সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। তবে গোদাগাড়ি, তানোর ও চর এলাকা এলাকা নিয়ে গঠিত বাঘা, চারঘাট ও পবায় সরিষার আবাদ বেশি হয়। রাজশাহীর বরেন্দ্র উপজেলা গোদাগাড়িতে এবারো বিস্তৃর্ণ চর ও এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে সরিষার। সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে উপজেলার বিভিন্ন বিলচড়াইগুলো। বাসুদেবপুর, কমলাপুর, আষাড়িয়াদহ চরাঞ্চল ও খাল-বিলে সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠ। এই উপজেলাতেই প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা সরিষা চাষ করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় উপজেলার খাল বিলে সরিষার ফুলে ফুলে ও মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে বাসুদেবপুর বিলচড়ুইসহ অনেক জায়গায়। সরিষার ফুলে ফুলে হলুদ বর্ণের বর্ণিল হওয়ায় বিলগুলোতে ও জমির আশপাশে দূর-দুরান্ত থেকে স্কুল কলেজের সৌখিন প্রকৃতি প্রেমিকরা বেড়াতে আসছেন।

জেলার বাঘা উপজেলাতেও সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠ। এ বছর অনেকেই আগাম সরিষা চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। উপজেলার সমতল এলাকার বাইরেও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এ বছর সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। বিশাল চরে বিস্তির্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষ করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। তাদের মনে এখন নতুন করে আশা সঞ্চার করেছে সরিষা।

বাঘার চরাঞ্চলের কৃষক ফজলু দেওয়ান জানান, এবার ৩ বিঘা জমিতে তিনি সরিষা আবাদ করেছেন। এ আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক অনেক কম লাগে। তার মতে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার লাভ হবে। তিনি বলেন, সরিষা চাষ করে মানুষ শুধু তেল-ই তৈরি করে না। এই সরিষা ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরি হয় যা গরুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে পলি জমে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে এ বছর ব্যাপক হারে সরিষার চাষ করা হয়েছে। বারি-১৪ জাতের সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করছেন। তার মতে, এ বছর উপযোগী সময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে একদিকে ক্ষেতের ফসলের উপকার হয়েছে অন্যদিকে কোটি টাকার সেচ খরচ বেচে গেছে কৃষকরা।

কৃষিপ্রধান উপজেলা মোহনপুরে সরিষা ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। চারদিকে তাকালে যেন সবুজের ফাঁকে হলুদের সমাহার। কখনো কখনো সরিষার ক্ষেতে বসছে পোকাখাদক বুলবুলি ও শালিকের ঝাঁক। অনেকটা প্রতিকূল আবহাওয়ার পরও এখানে প্রায় ১৩শ’ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার মাঠে মাঠে চাষ করা হয় রকমারি ফসল। সরিষা চাষ কিছুটা কম হলেও ফসলের মাঠের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে এসব সরিষার ক্ষেত। মাঠের চারদিক যেন হলুদে হলুদে পরিপূর্ণ। এক দেখাতেই মন কাড়বে পথচারীদের।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, এবারে মৌসুমের শেষ বৃষ্টিতে জেলার ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যায়। পানি না শুকানোর জন্য জমি সরিষা আবাদের উপযুক্ত না হওয়ায় আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে সরকারের সরিষা বীজ প্রণোদনা থাকায় কৃষকের উপকার হয়েছে এবং আগ্রহসহ সরিষার আবাদ করেছেন বলে তিনি জানান। পাশাপাশি তিনি সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।