হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতে অনেক গাছের পাতা ঝরে যায়। শীর্ণ চেহারা নিয়ে সবুজ গাছগুলো কুয়াশামাখা শীতের শিশিরে ভিজতে থাকে। কিন্তু এ সময়ে শীতের মৌসুমি ফুলের গাছগুলো ফুল ফোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই বাগানবিলাসী মানুষদের কাছে শীতকাল নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। এ মৌসুমে ফোটে শত রকমের ফুল। শীতের মতো আর কোনো মৌসুমে এত বেশি রকমের মৌসুমি ফুল ফোটে না। বাড়ির বাগানে, টবে, ছাদে, ঝুলবারান্দায় ফোটাতে পারেন নানা রঙের শীত মৌসুমি ফুল।
শীতে ফুলের বাগান করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে বেছে নিতে হবে, কোন ফুলগাছ আপনি লাগাতে চান? শীতে শত ফুলের মধ্যে প্রথমে বেছে নিতে পারেন গাঁদা ফুল। কদম যেমন বর্ষার প্রতীক, গাঁদাও তেমনি শীতের প্রতিনিধি। বাগানে শীতকালে গাঁদা ফুল থাকবে না, তা হতে পারে না। গাঁদা ফুলও আছে অনেক রকম। পেতীগ্যান্দা লাগিয়ে বাগান ভরার দরকার নেই, লাগাবেন প্রথমে ইনকা গাঁদা ফুলের গাছ। ইনকা একধরনের হাইব্রিড গাঁদা ফুল। খাটো ও ঝোপালো গাছে অনেক বড় বড় ফুল ফোটে। সরষে হলুদ ও কমলা, সাধারণত এই দুই রঙের ইনকা গাঁদা দেখা যায়। দুই রকমের গাছই লাগাতে পারেন। সাদা গাঁদাও আছে। বাগানের কেয়ারি ও বর্ডারে, প্রবেশপথের দুধারে চায়নিজ বা জাম্বো গাঁদার সারি দিয়ে বাগান আলোকিত করতে পারেন। টবেও এ গাছ হয়। জাম্বো গাঁদাগুলো ইনকার মতো বড় না, মাঝারি আকারের। এর মেরুন ফুলের মধ্যে হলদে ছিট আর ফুলের প্রাচুর্য বাগানে আলাদা এক সৌন্দর্য বয়ে আনে। শুধু মেরুন রঙের রক্তগাঁদা বা চীনা গাঁদাও এভাবে লাগাতে পারেন। এর ফুলগুলো ছোট হলেও গাছে অনেক দিন ধরে অনেক বেশি ফুল ফুটতে থাকে। ইনকা গাঁদার বেলায় যত্ন একটু বেশি লাগে, কিন্তু জাম্বো বা চায়নিজ গাঁদার গাছ একবার মাটিতে চারা লেগে গেলে আর তেমন পরিচর্যার দরকার হয় না।
বাগানের কেয়ারিতে মাঝারি আকারের গাছ লাগাতে চাইলে লাগাতে পারেন লাল টুকটুকে সিলভিয়া। সম্প্রতি নানা রঙের খাটো গাছের কিছু হাইব্রিড জাতের সিলভিয়া গাছও পাওয়া যাচ্ছে। মেরুন, কমলা, ঘিয়ে ইত্যাদি রঙের সিলভিয়া এখন আর দুষ্প্রাপ্য নয়। শীতের আর দুটো চমৎকার ফুল হলো চন্দ্রমল্লিকা ও এস্টার। দুটি ফুলের চেহারা প্রায় কাছাকাছি হলেও দুটো ফুলের আকর্ষণ আলাদা। শীতে চন্দ্রমল্লিকার মতো দীর্ঘস্থায়ী ফুল আর একটাও নেই। চন্দ্রমল্লিকার এখন এত বেশি রকম ও জাতের ফুল রয়েছে যে এর মধ্য থেকে আপনার পছন্দ করাই মুশকিল। বড় ফুলের হালকা গোলাপি, সাদা বা ঘিয়ে রঙের স্নোবল চন্দ্রমল্লিকা সবার প্রাণ জুড়ায়। বেগুনি, হালকা বেগুনি, ম্যাজেন্টা ইত্যাদি রঙের অ্যাস্টার ফুলকে ঠাঁই দিতে পারেন চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি। চন্দ্রমল্লিকার আর দুই রাজযোটক হলো ডালিয়া ও কসমস। কী রং নেই ডালিয়ার? ছোট থেকে বড় ফুলের কালচে মেরুন থেকে সাদা ফুলের ডালিয়া যে কারও নজর কাড়ে। তেমনি বাগানের এক পাশে, পথের ধারে কসমসের ঘন সারিতে ফোটা অজস্র গোলাপি, সাদা, ম্যাজেন্টা ফুল বাতাসে মাথা দুলিয়ে যেন অতিথিদের অনবরত অভিবাদন জানাতে থাকে।
এরপর বেছে নিতে পারেন স্বর্ণাভ বা স্ট্র ফ্লাওয়ার, ডেইজি, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশন, পপি, ক্যালেন্ডুলা, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস প্রভৃতি ফুলকে। বারান্দা বা গ্রিলে ঝোলানো টবে লাগানোর জন্য পিটুনিয়া, ন্যাস্টারশিয়াস, অ্যাস্টার, ভারবেনা ইত্যাদি উত্তম। গ্রিলে লতিয়ে দেওয়ার জন্য নীলমণি লতা, মর্নিং গ্লোরি, রেল লতা, সুইট পি ভালো। টবের জন্য নিতে পারেন গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, কারনেশন, ক্যালেন্ডুলা, অ্যাস্টার ইত্যাদি। জমিনের বাগানে সব ফুলই লাগাতে পারেন। চারা তৈরি করার এখন আর সময় নেই। তা ছাড়া ওসব করা ঝামেলারও ব্যাপার। তাই আশপাশের নার্সারি থেকে আপনার পছন্দমতো ফুলের চারা কিনে বাগানে বা টবে লাগিয়ে নিন।
লাগানোর আগে টবের সার মাটি তৈরি করে টব ভরে রেখে দিন। তেমনি বাগানের মাটিও। ফুলের রং ও গাছের উচ্চতা মিলিয়ে বাগানে শীতের ফুলগাছ লাগালে তা বেশি আকর্ষণীয় হবে। যেমন কোথাও পরপর তিন সারি ফুলগাছ লাগাতে হলে প্রথম সারিতে লাগাবেন খাটো গাছের হলদে রঙের ফুল (ইনকা গাঁদা), দ্বিতীয় সারিতে মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট গাছের কমলা বা লালচে কমলা রঙের ফুল (চন্দ্রমল্লিকা), তৃতীয় সারিতে লাল বা মেরুন রঙের লম্বা গাছের ফুল (ডালিয়া বা কসমস)। ধাপে ধাপে থাকা এসব ফুলগুলো যখন ফুটতে থাকবে তখন বাগান খুবই সুন্দর দেখাবে।
বেশি দিন ধরে ভালো ফুল পেতে চাইলে মাটিতে জৈব সার বা পচা গোবর মেশাবেন। বিকেলে চারা লাগিয়ে চারার গোড়ায় পানি দেবেন। টবে কোনো রাসায়নিক সার বিশেষ করে ইউরিয়া সার দেবেন না। শীতের ভালো ফুলের জন্য রোদ চাই। সে জন্য টবগুলোকে রোদে রাখবেন। গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঝরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে। ফুল ফোটা শুরু হলে তখন থেকে ফুল-পাতা ভিজিয়ে পানি না দেওয়া ভালো। গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন। ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রুত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন। বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে বাগান সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাগান তো সুন্দরের জন্য। তাই সৌন্দর্যের জন্য যা করা দরকার তাই করবেন। আপনার রুচির পরিচয় ফুটে উঠবে শীতের এসব ফুল ফোটা বাগানের ভেতর দিয়ে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়