হঠাৎ বিএনপি-জামায়াতকে আ.লীগের তিন শর্ত

বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের শাসক দলে যোগদান ঠেকাতে জেলা নেতাদের তিন শর্ত অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির হাইকমান্ড সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছে। শর্ত লংঘন করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ার করা হয়েছে। কেন্দ্রের এ নির্দেশনা জেলা কমিটিগুলো ইতিমধ্যেই তাদের আওতাধীন থানা কমিটিগুলোকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে নাশকতা এবং হত্যা মামলার আসামিও রয়েছেন। পাশাপাশি নেয়া হয়েছে বিএনপিরও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। তদের অনেকের বিরুদ্ধেও রয়েছে হত্যা ও নাশকতার মামলা। ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণীর নেতা ও সংসদ সদস্যের আশীর্বাদেই বিএনপি- জামায়াতের এসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পেরেছেন।

এ নিয়ে দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। পাশাপাশি এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের নেতারাও অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ ইস্যুতে খোদ দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ক্ষুব্ধ। শাসক দলের নেতাকর্মীদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে (খুনাখুনি) বহিরাগতদের হাত রয়েছে বলেও তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের (বিএনপি, জামায়াত-শিবির) দলে নেয়ার বিষয়ে শর্তারোপ করে কড়াকড়ি করা হয়েছে বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতি-নির্ধারক।

জানা গেছে, দলে যোগদানের ব্যাপারে কেন্দ্রের তিন শর্তের প্রথমটি হচ্ছে- যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অথবা সরকার উৎখাতের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন, তাদের কোনো অবস্থাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনে যোগদান করানো যাবে না।

দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে- যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য দেশে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত হয়ে বিভিন্ন মামলার আসামি তাদের কোনো অবস্থায় সংগঠনে নেয়া যাবে না।

তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে- সমাজে যারা গ্রহণযোগ্য, সৎ, নিষ্ঠাবান এমন ব্যক্তি যোগদানের ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি যে ইউনিয়নের মানুষ সেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন করবেন। এ আবেদনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মতামত দিয়ে উপজেলা/পৌরসভা কমিটির কাছে পাঠাবে। এরপর ওই আবেদনে উপজেলা আওয়ামী লীগ মতামত দিয়ে জেলায় পাঠাবে। জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে যোগদানের ব্যাপারে চূড়ান্ত মতামত প্রদান করবেন।

এ প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো যোগদান হলে যে শাখা অথবা নেতা যোগদান করাবেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তৃণমূল নেতাদের এমনভাবে সতর্কও করে দিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রের এ তিন শর্ত ও হুশিয়ারির বিষয় অবহিত করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ ১৯ জুলাই তার অধীন উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিগুলোকে একটি চিঠি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রতিবেদককে জানান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভায় বিষয়টি নিয়ে ১৩ জুলাই আলোচনা হয়। এরপর উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোকে কেন্দ্রের এ নির্দেশনা লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

কেন্দ্রের দেয়া এ তিন নির্দেশনার বিষয়টি স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বুধবার এই প্রতিবেদককে জানান, শর্তারোপের পরিস্থিতি (বিএনপি-জামায়াতের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান) কন্ট্রোল হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করতে পারবে না। তবে আওয়ামী লীগ দরজা বন্ধ করে রাখার রাজনৈতিক দল নয়। এখানে (আওয়ামী লীগে) ভালো মানুষকে স্বাগত জানানোর জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

জানা গেছে, সাংগঠনিক সম্পাদকরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এ ইস্যুতে নিজ দলের সংসদ সদস্য ও সারা দেশের দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনিও কেন্দ্রের অনুরূপ নির্দেশনার বিষয়ে তৃণমূল নেতা ও সংসদ সদস্যদের অবহিত করেন।

বিষয়টি স্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বুধবার প্রতিবেদককে বলেন, জঙ্গিবাদী, নাশকতা মামলার আসামি এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের দলে না নেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তারা সেটা মেনে চলছেন।-

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর