ঢাকা ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জ ৭১ ইটভাটা বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪০:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৮০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের বাতাসে ক্ষতিকারক বিষ ছড়াচ্ছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। এসব ভাটা থেকে বের হওয়া বিষাক্ত বাতাসে দূষিত হয়ে পড়ছে এলাকার পরিবেশ। নানা রোগে ভুগছেন জেলার এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। জেলার মোট ৭৮টি ইটভাটার মাঝে সরকারিমতে পরিবেশ সম্মত জিগ্‌জাগ্‌ চুল্লি সম্বলিত ভাটার সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৭টি। বাকি ৭১টি পরিবেশ বিরোধী ভাটা বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর চলছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা।

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট ৮ উপজেলায় মোট ৭৮টি ইট ভাটা রয়েছে। যার মাঝে অনুমোদনকৃত ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৫১টি। অনুমোদন নেই ২০টির। যেগুলোর অনুমোদন আছে এমন অধিকাংশ ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না বছরের পর বছর ধরে। সদর উপজেলায় মোট ৮টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ৬টির।

বাকি ২টি চলছে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই। নবীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি হিসাব মতে মোট ভাটা রয়েছে ১৬টি। তার মাঝে অনুমোদনবিহীন ৩টি, বন্ধ রয়েছে ৭টি ও চালু অবস্থায় আছে ৬টি। চুনারুঘাটে মোট ১২টি ইট ভাটার মাঝে অনুমোদন রয়েছে ১০টির। বাকি ২টি চলছে অনুমোদনবিহীন। বানিয়াচং উপজেলার মোট ইটভাটা ২টি। এদের অনুমোদন থাকলেও নবায়ন নেই ৪ বছর। আজমীরিগঞ্জ উপজেলার ২টি ইটভাটার মাঝে একটি বন্ধ। অপরটি চালু থাকলেও নেই অনুমোদন।

বর্তমানে সরকারি নীতিমালায় সবগুলো ইটভাটাকে পরিবেশসম্মত জিগজাগ চুল্লি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিচালিত হচ্ছে হবিগঞ্জের পরিবেশের ক্ষতিকারক এসব ইটভাটা। এতে সরকার প্রতি বছর এসব ভাটা থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা অধিকাংশ ইটভাটার প্রয়োজনীয় মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে আশেপাশের বিভিন্ন কৃষি জমি থেকে।

এতে কৃষি জমির উর্বরতা ও পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক ইটভাটা। এরফলে এসব ইটভাটার পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরের লোকজন বিষাক্ত ধোঁয়ায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নদীরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলেও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়কারী এসব ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না পরিবেশবান্ধব সংগঠনগলোও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের মাঝে ক্রমেই বাড়ছে অসন্তেুাষ। অনুমোদন ছাড়াও নবায়নবিহীন এসব ইটভাটার প্রশাসনের চোখের সামনে কীভাবে চলছে এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মণীষ চাকমা জানান, পরিবেশ দূষণ রোধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেসব ইটভাটার লাইসেন্স নেই এবং যাদের পরিবেশসম্মত চুল্লি নেই, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশবিরোধী এসব ইটভাটা বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। প্রশাসনের যোগসাজশে দীর্ঘদিন থেকে চলছে এসব পরিবেশবিরোধী ইটভাটা। এতে এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

এসব ইটভাটার নজরধারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা দিয়ে চালানো হচ্ছে অভিযোগ রয়েছে। চুনারুঘাাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রদ্বীপ কুমার দাশ জানান, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নির্মাণ না হওয়া ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করছে। এতে এলাকায় বসবাসকারীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট এমনকি যক্ষ্মার মতো মারাত্মক ব্যাধিও হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হবিগঞ্জ ৭১ ইটভাটা বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছে

আপডেট টাইম : ১২:৪০:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের বাতাসে ক্ষতিকারক বিষ ছড়াচ্ছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। এসব ভাটা থেকে বের হওয়া বিষাক্ত বাতাসে দূষিত হয়ে পড়ছে এলাকার পরিবেশ। নানা রোগে ভুগছেন জেলার এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। জেলার মোট ৭৮টি ইটভাটার মাঝে সরকারিমতে পরিবেশ সম্মত জিগ্‌জাগ্‌ চুল্লি সম্বলিত ভাটার সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৭টি। বাকি ৭১টি পরিবেশ বিরোধী ভাটা বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর চলছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা।

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট ৮ উপজেলায় মোট ৭৮টি ইট ভাটা রয়েছে। যার মাঝে অনুমোদনকৃত ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৫১টি। অনুমোদন নেই ২০টির। যেগুলোর অনুমোদন আছে এমন অধিকাংশ ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না বছরের পর বছর ধরে। সদর উপজেলায় মোট ৮টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ৬টির।

বাকি ২টি চলছে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই। নবীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি হিসাব মতে মোট ভাটা রয়েছে ১৬টি। তার মাঝে অনুমোদনবিহীন ৩টি, বন্ধ রয়েছে ৭টি ও চালু অবস্থায় আছে ৬টি। চুনারুঘাটে মোট ১২টি ইট ভাটার মাঝে অনুমোদন রয়েছে ১০টির। বাকি ২টি চলছে অনুমোদনবিহীন। বানিয়াচং উপজেলার মোট ইটভাটা ২টি। এদের অনুমোদন থাকলেও নবায়ন নেই ৪ বছর। আজমীরিগঞ্জ উপজেলার ২টি ইটভাটার মাঝে একটি বন্ধ। অপরটি চালু থাকলেও নেই অনুমোদন।

বর্তমানে সরকারি নীতিমালায় সবগুলো ইটভাটাকে পরিবেশসম্মত জিগজাগ চুল্লি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিচালিত হচ্ছে হবিগঞ্জের পরিবেশের ক্ষতিকারক এসব ইটভাটা। এতে সরকার প্রতি বছর এসব ভাটা থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা অধিকাংশ ইটভাটার প্রয়োজনীয় মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে আশেপাশের বিভিন্ন কৃষি জমি থেকে।

এতে কৃষি জমির উর্বরতা ও পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক ইটভাটা। এরফলে এসব ইটভাটার পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরের লোকজন বিষাক্ত ধোঁয়ায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নদীরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলেও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়কারী এসব ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না পরিবেশবান্ধব সংগঠনগলোও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের মাঝে ক্রমেই বাড়ছে অসন্তেুাষ। অনুমোদন ছাড়াও নবায়নবিহীন এসব ইটভাটার প্রশাসনের চোখের সামনে কীভাবে চলছে এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মণীষ চাকমা জানান, পরিবেশ দূষণ রোধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেসব ইটভাটার লাইসেন্স নেই এবং যাদের পরিবেশসম্মত চুল্লি নেই, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশবিরোধী এসব ইটভাটা বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। প্রশাসনের যোগসাজশে দীর্ঘদিন থেকে চলছে এসব পরিবেশবিরোধী ইটভাটা। এতে এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

এসব ইটভাটার নজরধারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা দিয়ে চালানো হচ্ছে অভিযোগ রয়েছে। চুনারুঘাাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রদ্বীপ কুমার দাশ জানান, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নির্মাণ না হওয়া ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করছে। এতে এলাকায় বসবাসকারীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট এমনকি যক্ষ্মার মতো মারাত্মক ব্যাধিও হতে পারে।