ঢাকা ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলু চাষিরা একটু ভালো আয়ের আশায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোদের তীব্র আলোর ঝলকানি নেই কোথাও। নেই শীতের তীব্রতাও। মিষ্টি মধুর এক মিশ্র আবহাওয়া সর্বত্র। এমন স্নিগ্ধ সকালে অনেকেই নেমেছেন ফসলের মাঠে। সকালের স্নিগ্ধ আলোয় নতুন ফসলে একটু ভালো আয়ের আশায় উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ কৃষকই আলুবীজ রোপণ করছেন। দেশের সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনকারী এ জেলায় এখন আলু রোপণের ধুম পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলুচাষিরা এখন মহাব্যস্ত আলু রোপণে। বসে নেই কৃষাণীরাও। বাড়ির উঠানে-ঘরে বসে কৃষাণীরা বীজ আলু কাটছেন। আর কৃষক-গৃহকর্তারা জমিতে আলু রোপণ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
প্রায় অর্ধলক্ষাধিক চাষি আলুচাষের সঙ্গে জড়িত। গত দুবারের লোকসান অনেক চাষিকে সর্বস্বান্ত করে দিলেও তারা আবারো নতুন মৌসুমের শুরুতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে আলুচাষ করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর সিরাজদিখানে ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছিল। এবারও ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হতেপারে।
এছাড়া জেলার সার্বিক অর্থনীতিতে অনেকটাই সিরাজদিখানে আলুর ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে উপজেলার একটানা কয়েক বছর একাধিকবার আলুর বাম্পার ফলনের পরও লাভের মুখ দেখেননি কৃষকরা। মধ্যস্বত্বভোগী মজুদদার ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও গত বছরে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। বাজারে আলুর ব্যাপক দরপতনে মূলধন হারিয়েছেন মধ্যস্বত্বভোগীসহ এ অঞ্চলের অনেক কৃষক। তার পরও অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করতে না পারায় আলুচাষই করে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের ছোটপাউলদিয়া গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘এখন প্রতি বস্তা আলু ৪২০ টাকা করে বলছে পাইকাররা। আমার এখনো ৩৮০ বস্তা আলু আছে, এখনো বিক্রি করতে পারি নাই। এবার ১২০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতাছি, ৫ দিন দরে আলু রোপণ শুরু হয়েছে। আমার এখন ১৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। আলু রোপণ শেষ হতে আরো ২০ দিন লাগতে পারে। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয়Ñ গত বছর যে আলু বুনেছি তাতে আমার ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নাই। আল্লাহ যদি কয়টা টাকা আলুতে লাভ করতে দেয় তবে পাইতে পারি। এই আল্লাহ উপর ভরসা কইরা আলু রোপণ করতাছি। স্ত্রী-কন্যার গয়না বন্ধক রেখে, মহাজনদের থেকে ধারকর্জ করে সব পুঁজি খাটাইছি। গত দুই বছরের লোকসানও হয়েছে। তবে সরকারিভাবে আলু কিনে বা আলুতে ভর্তুকি দিলে লোকসানের ঘানি টানতে হতো না।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোধ চন্দ্র রায় বলনে, আবহাওয়া প্রতিকুল থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর একটু দেরিতে আলুচাষ করছে। এবার আলু রোপণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬শ হেক্টর। আয়ের আশায় তাদের বেশিরভাগ কৃষকই আলুবীজ রোপণ করছেন। জেলার সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনকারী এই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে এখন আলু রোপণের ধুম পড়েছে। এলাকাগুলোর বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে চাষিরা এখন মহাব্যস্ত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আলু চাষিরা একটু ভালো আয়ের আশায়

আপডেট টাইম : ১২:৫০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোদের তীব্র আলোর ঝলকানি নেই কোথাও। নেই শীতের তীব্রতাও। মিষ্টি মধুর এক মিশ্র আবহাওয়া সর্বত্র। এমন স্নিগ্ধ সকালে অনেকেই নেমেছেন ফসলের মাঠে। সকালের স্নিগ্ধ আলোয় নতুন ফসলে একটু ভালো আয়ের আশায় উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ কৃষকই আলুবীজ রোপণ করছেন। দেশের সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনকারী এ জেলায় এখন আলু রোপণের ধুম পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলুচাষিরা এখন মহাব্যস্ত আলু রোপণে। বসে নেই কৃষাণীরাও। বাড়ির উঠানে-ঘরে বসে কৃষাণীরা বীজ আলু কাটছেন। আর কৃষক-গৃহকর্তারা জমিতে আলু রোপণ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
প্রায় অর্ধলক্ষাধিক চাষি আলুচাষের সঙ্গে জড়িত। গত দুবারের লোকসান অনেক চাষিকে সর্বস্বান্ত করে দিলেও তারা আবারো নতুন মৌসুমের শুরুতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে আলুচাষ করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর সিরাজদিখানে ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছিল। এবারও ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হতেপারে।
এছাড়া জেলার সার্বিক অর্থনীতিতে অনেকটাই সিরাজদিখানে আলুর ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে উপজেলার একটানা কয়েক বছর একাধিকবার আলুর বাম্পার ফলনের পরও লাভের মুখ দেখেননি কৃষকরা। মধ্যস্বত্বভোগী মজুদদার ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও গত বছরে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। বাজারে আলুর ব্যাপক দরপতনে মূলধন হারিয়েছেন মধ্যস্বত্বভোগীসহ এ অঞ্চলের অনেক কৃষক। তার পরও অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করতে না পারায় আলুচাষই করে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের ছোটপাউলদিয়া গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘এখন প্রতি বস্তা আলু ৪২০ টাকা করে বলছে পাইকাররা। আমার এখনো ৩৮০ বস্তা আলু আছে, এখনো বিক্রি করতে পারি নাই। এবার ১২০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতাছি, ৫ দিন দরে আলু রোপণ শুরু হয়েছে। আমার এখন ১৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। আলু রোপণ শেষ হতে আরো ২০ দিন লাগতে পারে। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয়Ñ গত বছর যে আলু বুনেছি তাতে আমার ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নাই। আল্লাহ যদি কয়টা টাকা আলুতে লাভ করতে দেয় তবে পাইতে পারি। এই আল্লাহ উপর ভরসা কইরা আলু রোপণ করতাছি। স্ত্রী-কন্যার গয়না বন্ধক রেখে, মহাজনদের থেকে ধারকর্জ করে সব পুঁজি খাটাইছি। গত দুই বছরের লোকসানও হয়েছে। তবে সরকারিভাবে আলু কিনে বা আলুতে ভর্তুকি দিলে লোকসানের ঘানি টানতে হতো না।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোধ চন্দ্র রায় বলনে, আবহাওয়া প্রতিকুল থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর একটু দেরিতে আলুচাষ করছে। এবার আলু রোপণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬শ হেক্টর। আয়ের আশায় তাদের বেশিরভাগ কৃষকই আলুবীজ রোপণ করছেন। জেলার সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনকারী এই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে এখন আলু রোপণের ধুম পড়েছে। এলাকাগুলোর বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে চাষিরা এখন মহাব্যস্ত।